বিনোদন দুনিয়ায় কেরিয়ারের খোঁজে কলকাতা থেকে পাড়ি দিয়েছিলেন মুম্বই। সাফল্য সে ভাবে এখনও পাননি। কিন্তু বিতর্কিত হিসেবে ইতিমধ্যেই শিরোনামে পায়েল ঘোষ।
পায়েলের জন্ম ১৯৮৯-এর ১৩ নভেম্বর, কলকাতায়। সেন্ট পলস মিশন স্কুলের পরে পায়েল রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করেন স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে প্রথম অভিনয়। বিবিসি-র টেলিছবি ‘শার্পস পেরিল’-এ অভিনয় করেন পায়েল। ব্রিটিশ সৈনিক রিচার্ড শার্পের জীবনভিত্তিক এই ছবিতে পায়েল অভিনয় করেছিলেন পল্লীবালিকার একটি ছোট ভূমিকায়।
এরপর একটি কানাডিয়ান ছবিতেও অভিনয় করেন পায়েল। কিন্তু পায়েলের অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছে সমর্থন করেননি তাঁর বাবা-মা।
বাবা মায়ের অমতেই এক বার কলেজের ছুটিতে বাড়ি থেকে মুম্বই চলে যান পায়েল। মুম্বইয়ে নমিত কিশোরের অভিনয় শেখানোর প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
প্রথমে দক্ষিণী ছবিতে সুযোগ পান পায়েল। ২০০৯-এ মুক্তি পায় পায়েলের প্রথম তেলুগু ছবি ‘প্রায়ণম’। ছবিতে তাঁর অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল হরিকা।
এর পরের দু’ বছরে আরও দু’টি তেলুগু ও একটি কন্নড় ছবিতে অভিনয় করেন পায়েল। ২০১৭ সালে মুক্তি পায় পায়েলের প্রথম হিন্দি ছবি ‘পটেল কি পঞ্জাবি শাদি’।
সঞ্জয় চেলের পরিচালনায় এই ছবিতে পায়েল অভিনয় করেছিলেন ঋষি কপূরের মেয়ের ভূমিকায়। বিপরীতে ছিলেন অভিনেতা বীর দাস। ছবিতে অভিনয় করেছেন পরেশ রাওয়াল-ও। পায়েলের দ্বিতীয় হিন্দি ছবি ‘কোই জানে না’ এখনও মুক্তি পায়নি।
বড় পর্দার পাশাপাশি পায়েল কাজ করেছেন টেলিভিশনেও। তাঁকে দেখা গিয়েছে ‘সাথ নিভায়া সাথিয়া’ ধারাবাহিকে। তাঁর অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল রাধিকা।
বলিউডে ধীরে ধীরে নিজের পরিচিতি তৈরি করা পায়েল এ বার যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন পরিচালক অনুরাগ কশ্যপের বিরুদ্ধে।
শনিবার টুইটারে একটি পোস্ট করেন পায়েল। সেখানে তিনি লেখেন, ‘অনুরাগ কশ্যপ আমার উপর বলপ্রয়োগ করেন। এবং ভীষণই খারাপ ভাবে।’
পরের অংশেই পায়েল প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীজি দয়া করে ব্যবস্থা নিন এবং এক জন সৃজনশীল মানুষের আড়ালে কোন দৈত্য রয়েছে, সেটা গোটা দেশকে দেখতে দিন।’’ টুইটারের শেষ অংশে পায়েল লিখেছেন, ‘‘আমি জানি এতে আমার ক্ষতি হবে। আমার নিরাপত্তাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। দয়া করে সাহায্য করুন।’’
প্রধানমন্ত্রীর দফতর বা প্রধানমন্ত্রী নিজে এই টুইটের এখনও পর্যন্ত কোনও জবাব দেননি। তবে জাতীয় মহিলা সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা গোস্বামী তার কিছু ক্ষণ পরেই একটি টুইট করেন পায়েলকে ট্যাগ করে। সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘আপনি মহিলা সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সনের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। কমিশন বিষয়টি দেখবে।’’
বিতর্ক মাথাচাড়া দিতেই মাঠে নেমে পড়েন কঙ্গনা রানাউত। অনুরাগের গ্রেফতারির দাবি তোলেন তিনি। এই প্রসঙ্গে আবার কঙ্গনাকে একহাত নেন অনুরাগ। মধ্যরাতের পর থেকে পর পর বেশ কয়েকটি টুইট করে যাবতীয় অভিযোগ নস্যাৎ করে দেন তিনি। জানিয়ে দেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ ভিত্তিহীন।
নাম না করে কঙ্গনাকে তীব্র আক্রমণ করেন অনুরাগ। টুইটারে লেখেন, ‘‘দারুণ ব্যাপার যে আমাকে চুপ করানোর চেষ্টা করতে এত সময় লেগে গেল। সে না হয় ঠিক আছে। কিন্তু আমাকে চুপ করানোর জন্য এত মিথ্যে বলতে হচ্ছিল যে নারী হয়ে অন্য এক নারীকে সেই মিথ্যেয় শামিল করতে হল। ম্যাডাম, অন্তত একটু শালীনতা বজায় রাখুন। আমি শুধু এইটুকুই বলব যে, যা যা অভিযোগ আনা হয়েছে, সব ভিত্তিহীন। আমাকে কালিমালিপ্ত করতে গিয়ে আমার কলাকুশলী, এমনকি বচ্চন পরিবারকে টেনে আনাটা মোটেই বুদ্ধির কাজ হয়নি।’’
এমনিতে অনুরাগ ঘোষিত ভাবেই মোদী-বিরোধী। প্রকাশ্যেই তিনি মোদী সরকার এবং বিজেপির নানাবিধ সমালোচনা করে থাকেন। তাঁর পুরনো সংস্থা ‘ফ্যান্টম ফিল্ম’-এর এক সহযোগীর বিরুদ্ধে একটা সময়ে মিটু-র অভিযোগ ওঠে। পরে সেই সংস্থা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন অনুরাগ। সেই বন্ধ হওয়ার পিছনে বলিউডের একাংশ ‘রাজনীতি’কেই ‘দায়ী’ করেছিল।
সম্প্রতি সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরেও অনুরাগ বিভিন্ন ভাবে তাঁর মত প্রকাশ করেছেন। যা কেন্দ্রের শাসক দলকে খুব একটা স্বস্তিতে রাখেনি। সেই অনুরাগের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠায় এ বারও বলিউডের একাংশ ‘রাজনীতি’রই গন্ধ পাচ্ছেন।