Yash Nusrat New Film

মৌসুমির মনে পড়ছে মেয়ে পায়েলকে, যশ ভাবছেন মায়ের কথা, নুসরতের ভাবনায় ছেলে ঈশান

চুপিসারে চলছিল ‘আড়ি’ ছবির শুটিং। দক্ষিণ কলকাতার বাড়িতে হাজির আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:৩৬
Share:

‘আড়ি’ ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে নুসরত জাহান এবং মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

জানা গেল, দক্ষিণ কলকাতার পুরনো বাড়িতে শুটিং চলছে। গুগ্‌ল ম্যাপ ধরে বাড়ির সামনে যেতেই দেখা গেল অতি পরিচিত দীর্ঘাঙ্গীকে, নীল জিন্‌স ও কুর্তা পরে বাড়ির দরজাতেই তিনি উপস্থিত। বোঝা গেল, কলকাতার সাংবাদিকদের কাছে এই শুটিংয়ের খবর তেমন ভাবে পৌঁছয়নি। নয়তো নুসরত জাহানকে এমন খোলা জায়গায় নিজের মতো ঘুরতে দেখা যেত? আর ঠিক তাঁর পাশেই অনুরাগীরা যাঁকে দেখতে চায়, সেই যশ দাশগুপ্ত। দু’জনে কাছাকাছি, প্রেম নয়, ঘোরতর কাজের বাক্যালাপ।

Advertisement

যশ-নুসরতের দিক থেকে চোখ ফেরাতেই ঘরের মধ্যে তাঁর সঙ্গে দেখা হল, ‘বালিকা বধূ’ না কি ‘ওগো বধূ সুন্দরী’? একটুও ভাবার সময় দিলেন না। অনেক দিন পরে খুব পরিচিত কাউকে যেন দেখতে পেয়েছেন, এমন ভাব করে বললেন, “তুমি তো সাংবাদিক, প্রশ্ন করতে এসেছ। যা ইচ্ছে জিজ্ঞেস করতে পারো। চলো, শুরু করি।” মা-ছেলের গল্প নিয়ে নতুন বাংলা ছবি, নাম ‘আড়ি’। অভিনেত্রী মৌসুমি চট্টোপাধ্যায় সেই কারণেই মুম্বই থেকে ঝটিতি সফরে কলকাতায়। পরিচালক জিৎ চক্রবর্তী মুম্বই গিয়ে তাঁকে ‘আড়ি’র চিত্রনাট্য শুনিয়ে এসেছিলেন। মৌসুমি বললেন, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাবাদের নিয়ে বাড়াবাড়ি। মা-ছেলের গল্প আমার ভাল লেগেছিল।” কয়েক দিন আগেই তাঁর বড় মেয়ে পায়েলের মৃত্যুবার্ষিকী ছিল। নিজে থেকেই সেই প্রসঙ্গ তুলে বললেন, “পায়েল চলে যাওয়ার পর আমি তো সাত বছর বাড়ি থেকে বেরোতেই পারিনি। আমার স্বামীও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। শোককে যেমন মেনে নিতে হবে, তেমনি বাইরে ব্যক্তিগত শোক প্রকাশ করা চলবে না। এখন সময়টা অন্য রকম।”

শুটিংয়ের ফাঁকে হাসিমুখে যশ দাশগুপ্ত এবং মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

একশো জনের ইউনিট কাজ করছে এই ছবিতে। নুসরত-যশের আতিথেয়তায় তিনি মুগ্ধ। প্রযোজনা সংস্থার পক্ষ থেকে উপরি পাওনা পুনমের তত্ত্বাবধান। কী খাবেন, কোন সময় খাবেন, কখন বিশ্রামের প্রয়োজন, এমনকি জল খাওয়া কম হলেও জলের বোতল এগিয়ে দিচ্ছেন পুনম নিজেই। পুনমের দিকে তাকিয়ে মৌসুমি বললেন, “আমাকে জল খাওয়াচ্ছে, কিন্তু নিজেই সারা দিনে জল কম খায়। নিজের যত্ন তো শিখতে হবে। যে মেয়েরা নিজেদের যত্ন করে তাদের আমি বেশি ভালবাসি।”

Advertisement

শট শুরু। মৌসুমি সংলাপ বলতে বলতে নুসরতের হাত চেপে ধরবেন। দৃশ্য অনুযায়ী নুসরত হাত বাড়িয়ে দেবেন। তার উপরে থাকবে মৌসুমির হাত। শটে যদিও অন্য ঘটনা ঘটল। নুসরত হাত বাড়ানোর আগেই স্বতঃস্ফূর্ত মৌসুমি নিজের হাত রাখলেন তার উপর। ‘আড়ি’ ছবির শুটিং ফ্লোরে এমন করেই সেই অভিনেত্রী মৌসুমি বেরিয়ে আসছেন, যাঁর ঝুলিতে জিতেন্দ্র থেকে অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খন্নার সঙ্গে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। পরিচালক যেমন বললেন, “দিদি আপনা থেকেই এমন কিছু সংলাপ বলে ফেলছেন, যা চরিত্রের সঙ্গে মিশে একাকার। মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রীকে নিলে এটা বাড়তি পাওনা।”

শটের ফাঁকে (বাঁ দিক থেকে) মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়, যশ দাশগুপ্ত এবং পরিচালক জিৎ চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

দুপুরে খাওয়াদাওয়ার বিরতি। মৌসুমি নিরামিষ খাবেন। কলকাতায় এসে প্রিয় মাছ খাচ্ছেন, তবে সুচিত্রা সেনের মতোই সবচেয়ে প্রিয় খাবার ঘি-ভাত, আলু সেদ্ধ। পা মুড়ে গল্প করতে বসলেন। তাঁর মনে পড়ছে, সাদা হাফ শার্ট ও ধুতি পরা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে। এমন শ্বশুরমশাই পাওয়া ভাগ্যের, মনে করেন তিনি। অমিতাভ বচ্চনের প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, “ভাল অভিনেতা। তবে জীবনে এত বেশি পেয়েছে যে মানুষ হিসাবে… থাক আর বললাম না।” মৌসুমি মনে করেন, জীবনে বেশি পেতে নেই, একটা বাড়ি, একট গাড়ি যথেষ্ট। উদাহরণ দিয়ে বললেন, “রাজেশ খন্না এত ভাল অভিনেতা। কিন্তু এত পেয়েছে ,মাথা ঠিক রাখতে পারেনি।” রেখেঢেকে কথা বলার মানুষ তিনি কোনও দিনই ছিলেন না। আজও নন। যশ-নুসরতকে নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি বললেন, “যশ চুপ করে থাকে। কিন্তু সব দিকে ওর নজর। অন্য দিকে, নুসরত চঞ্চল, খুব সুন্দরী। ওদের যেমন ভাল কাজ করা উচিত, তেমনি প্রচুর মানুষের আশীর্বাদ পাওয়া উচিত।”

মা-ছেলের গল্প কেন? প্রশ্ন করতেই নুসরত বললেন, “ছেলের মা হওয়ার পর আমি এই সম্পর্কের আবেগ বুঝতে পেরেছি।” পাশ থেকে টিপ্পনী কাটলেন যশ, “নুসরত কিন্তু এক মুহূর্তও ছেলেকে ছাড়বে না। এখন থেকেই ছেলের বিয়ের কথা ভাবছে। ছেলেকে বৌয়ের কাছে ছাড়লে হয়!” বেশ কিছু দিন আগে মাকে হারিয়েছেন যশ। সেই হারানোর আবেগ তাঁর কণ্ঠে, “বহু মানুষ এই ছবির সঙ্গে নিজের ভাবনাকে মেলাতে পারবেন।” যশ-নুসরত দু’জনেই বিশ্বাস করেন, টেলিভিশন, ওটিটির বাজারেও বাংলা ছবি কখনওই তার মর্যাদা হারায়নি। তাঁদের কথায়, “পুজোয় যে বাংলা ছবি সাফল্য পেল, এতেই তো বোঝা যায় মানুষ এখনও কতটা বাংলা ছবি দেখতে ভালবাসেন।”

শীতের হাওয়া ছড়িয়ে পড়ছে দক্ষিণ কলকাতার ওই পুরনো বাড়িতে। গায়ে শাল জড়িয়ে নিলেন মৌসুমি। ছোট্ট লাল গোল টিপ, সামান্য কাজল, হালকা রূপটান। কে বলবে তাঁর বয়স ৭৬! মা-ছেলের গল্পে সংলাপ বলতে গিয়ে তিনি যেন ফিরে যাচ্ছেন তাঁর সেই বড় মেয়ে পায়েলের কাছে। কাজের মধ্যে দিয়ে শোকের কাছে সমর্পণ। যশের মনে পড়ছে তাঁর মায়ের কথা। নুসরত ছেলের গল্প বলছেন, বাবা-ছেলে আজকাল কেমন লড়াই-লড়াই খেলে। আর মাকে তা দর্শক হয়ে দেখতে হয়।

শীতের ‘আড়ি’ দিব্য ভাব জমিয়েছে, এই তিন অভিনেতার স্মৃতির অন্দরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement