Moon Moon Sen's Birtday

‘আমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, নষ্ট করে দিও না!’ আর্তি সহ-নায়িকার, এমন কী করেছিলেন মুনমুন?

“অসম্ভব সুন্দরী নায়িকা। বাংলা যাঁকে ব্যবহারই করতে পারল না! নিজেকে প্রমাণ করার মতো চরিত্র পায়নি মুনমুন”, জন্মদিনে বললেন চিরঞ্জিৎ।

Advertisement

চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫ ১৭:২৩
Share:
মুনমুন সেনের জন্মদিনে চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী।

মুনমুন সেনের জন্মদিনে চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

আজ শুক্রবার, ২৮ মার্চ মুনমুন সেনের জন্মদিন। মুনের মতো সুন্দরী দুটো হয় না। ওর মতো দুষ্টু মেয়েও খুব কম দেখেছি। ও গল্প করতে বসা মানে দিন কাবার। মুনের প্রথম ছবি আমার সঙ্গে, ‘অন্তরালে’। প্রথম ছবি হিট। আমাদের জুটি বানিয়ে সুখেন দাস পরিচালনা করছেন ‘অমরকণ্টক’। সেই শুটিংয়ের দুটো গল্প বলব। শুনলেই বুঝবেন, কী দারুণ দুষ্টু সুচিত্রা সেনের মেয়ে!

Advertisement

‘অমরকণ্টক’ ছবিতে মুনের বোনের চরিত্রে সোমা মুখোপাধ্যায়। ওঁকে দ্বিতীয় প্রযোজকের মনে ধরেছে! সেই সুবাদে তিনি অনেক উজ্জ্বল সম্ভাবনা এঁকে দিয়েছেন সোমার চোখে। ওকে আাশ্বাস দিয়েছিলেন, সোমাকে নায়িকা বানিয়ে তিনি ছবি করবেন! আমাদের থেকে ছোট সোমা। ফলে, সে-ও স্বপ্নে বিভোর। একদিন গল্পের ছলে ও আমাদের সে কথা বলেও ফেলেছে। তখন কি বেচারি জানত, ওর কপালে কী দুর্ভোগ নাচছে? আমরা মেকআপ নিচ্ছি। সোমা অন্য ঘরে, আমরা অন্যত্র। হঠাৎ মুন উঠে গিয়ে সোমার মেকআপ রুমের দরজা বাইরে থেকে টেনে বন্ধ করে দিল। বন্ধ করার সময় দরজার ল্যাচ ধরে টানাটানি করতেই ক্যাঁচকোঁচ আওয়াজ! ব্যস, সোমা ধরে ফেলল, মুন কিছু একটা করছে। বেচারি ভয় পেয়ে পরিত্রাহি চিৎকার করছে। সেই সময় ওর মুখ দিয়ে কী কথা বেরিয়ে এসেছিল? “মুনদি, সামনেই আমার জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। তুমি সেটা নষ্ট করে দিও না গো! আমি নায়িকা হতে চাই। আমিও নায়িকা হব...!” দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে মুন হাসতে হাসতে প্রায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে! কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছে না। এ দিকে জোরে আটকানোর চোটে দরজাও খুলছে না! সে এক ভয়ানক দশা।

সে দিন দেখেছিলাম, প্রকৃত সুন্দরী কাকে বলে। আমরা যখন প্রচণ্ড হাসি, তখন তো মুখের পেশি আমাদের বশে থাকে না! হাসির দমকে অনেকের বিরাট হাঁ মুখ হয়ে যায়। কারও মাড়ি বেরিয়ে আসে। উল্টো দিকের মানুষটি দেখতে পান, কতটা খারাপ দেখাচ্ছে। ব্যতিক্রম মুন। অত হাসছে, হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে— তাতেও অপাপবিদ্ধ সুন্দরী। ও রকম দমফাটা হাসি হাসলেও ক্যাটরিনা কইফকে এত সুন্দরী দেখাবে না!

Advertisement

এ বার দ্বিতীয় ঘটনা। এ বার হর্টিকালচারে আমাদের শুটিং। আমি আর মুন গাছের ছায়ায় বসে। শটের জন্য ডাকতেই আমরা শেষ বারের মতো রূপটান নিতে গিয়েছি। মুন মুখে ব্রাশ বুলিয়ে চুল আঁচড়ে তৈরি। আমার তখন ঘন, ঠাসা চুল। ব্রাশ ছাড়া আঁচড়াতে পারি না। ব্রাশ চাইতেই মেকআপ আর্টিস্ট মাথা হেঁট করে দাঁড়িয়ে। কাঁচুমাচু মুখে যা জানালেন সেটা হল, মুন এসে আমার ব্রাশ দিয়ে চুল আঁচড়ে তার পর সেটা পুকুরের জলে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে! ওর যুক্তি, আমার ব্রাশ পুরনো হয়ে গিয়েছে। আমায় অনেক বার বলার পরেও বদলাইনি। তাই ওটা বিদায় হওয়াই ভাল!

আমি চুপচাপ শুনলাম। তার পর মুনের মেকআপ আর্টিস্টের থেকে ওর চুল আঁচড়ানোর ব্রাশ নিলাম। ওর হেয়ার ব্রাশ বিদেশ থেকে আনানো। ভীষণ সুন্দর দেখতে। ভাল করে আঁচড়ে নির্বিকার ভাবে পুকুরের জলে ফেলে দিলাম। দেখে তো দুই রূপটান শিল্পী আঁতকে উঠলেন! ব্যাপারটা মুনের কানে যেতেই চিৎকার করতে করতে নায়িকা ঘটনাস্থলে। “দীপক, এটা কী করলে?” (মুন আমায় চিরঞ্জিৎ বলে ডাকে না) বললাম, “কেন, কী করেছি?” শুনে আরও রেগে গেল আমার নায়িকা। চেঁচিয়ে বলল, “আমার ব্রাশ ফেলে দিয়ে আবার জানতে চাইছ কী করেছ!!” খুব শান্ত গলায় জবাব দিলাম, “চিন্তা কোরো না। তোমার ব্রাশ আমার ব্রাশকে আনতে গিয়েছে। দু’জনেই একসঙ্গে ফিরবে!” বাকিরা হাসবেন না কাঁদবেন— বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

খুব ভাল মনের মেয়ে। ভীষণ অতিথিপরায়ণ। ওকে নিয়ে একটাই খারাপলাগা, টলিউড ওকে ব্যবহার করতে পারল না। নিজেকে ‘ভাল অভিনেত্রী’ প্রমাণ করার মতো চরিত্র কোনও দিন পেল না মুন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement