রূপসজ্জা শিল্পী তনুশ্রী দাস। ছবি: সংগৃহীত।
দীপাবলি সত্যিই আলো আনছে তাঁর জীবনে। কালীপুজোর দিন কয়েক আগে ফের কাজে ফিরলেন কেশসজ্জা শিল্পী তনুশ্রী দাস। কিছু দিন আগে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেই তনুশ্রীই এ বার কাজে ফিরছেন। খবর পেয়ে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল তাঁর সঙ্গে। ফোনের ও পারে গলায় স্বস্তি। বললেন, “১৭ বছর ধরে কালী মায়ের পুজো করছি। সবটাই মায়ের কৃপা।” সোমবার থেকে তিনি সান বাংলার নতুন রিয়্যালিটি শো ‘লাখ টাকার লক্ষ্মীলাভ’-এর রূপটানের দায়িত্বে তিনি। শো-এর সঞ্চালিকা সুদীপ্তা চক্রবর্তী। তনুশ্রী জানিয়েছেন, সঞ্চালিকাকে সাজানোর দায়িত্বে রূপটানশিল্পী হেনা মুন্সী। বাকিদের তিনি সাজাচ্ছেন। আত্মবিশ্বাসী গলায় বললেন, “আর গিল্ডের কমিটির সদস্যদের কাছে কাজ চেয়ে হাত পাতব না। নিজে যা জোগাড় করতে পারব, সেই কাজই করব। কাজ জানলে কেউ অন্ন কাড়তে পারবে না।”
তনুশ্রী বারবর স্পষ্টভাষী। তাঁর বক্তব্য, সে কারণেই তিনি গিল্ডের বিরাগভাজন হন। তিনি বলেন, “নির্বাচনের মাধ্যমে সম্পাদক চেয়েছিলাম। এই অপরাধে সংগঠন আমায় প্রায় তিন মাস সাসপেন্ড করে। ওঁদের ভাষায় ‘কর্মবিরতি’! ইংরেজি কম জানি। তবে এটা জানি, সাসপেন্ডের বাংলাই ‘কর্মবিরতি’!” সেই সময় দেনায় জর্জরিত তনুশ্রীর দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। মেয়ের কলেজে পড়ার টাকা দিতে পারছিলেন না। যার জেরে মেয়েকে কলেজ থেকে সাময়িক ভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ধরা গলায় তাঁর বক্তব্য, “কী ভাবে দিন কাটিয়েছি, আমিই জানি। শেষে প্রায় হাতেপায়ে ধরে কাজে ফিরেছি। তখনও শর্ত, নিজে কাজ জোগাড় করতে পারব না। কমিটি যা দেবে, সেটাই করতে হবে।” এই শর্তের জেরে তিনি পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য, মৈনাক ভৌমিকের কাজ হারিয়েছেন। “কোন জায়গায় পৌঁছলে একজন মানুষ আত্মহত্যা করতে যায় একমাত্র সে-ই জানে। অর্থাভাবের পাশাপাশি, কাজের মানুষের থেকে কাজ কেড়ে নেওয়া— কাউকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট”, কণ্ঠে ব্যথার ছাপ স্পষ্ট তাঁর।
অভিযোগ আরও, কমিটির ঠিক করে দেওয়া কাজে দিনে পারিশ্রমিক পেতেন মাত্র হাজার টাকা। যেখানে নিজের জোগাড় করা কাজ থেকে তিনি উপার্জন করেন চার হাজার বা তার থেকেও বেশি টাকা! এখন কেমন আছেন কেশসজ্জা শিল্পী? কাজে ফিরে জানালেন, আগের তুলনায় অনেকটা সুস্থ। ওষুধ চলছে। সে সব শেষ হলেই তিনি চিকিৎসকের থেকে শংসাপত্র পাবেন। কারও প্রতি কোনও অভিযোগ? “অভিযোগ নয়, অনুযোগ আছে”, বললেন তনুশ্রী। তাঁর কথায়, “বিচার চেয়ে স্বরূপ বিশ্বাসকে চিঠি দিয়েছিলাম। তিনি দেখলেনই না! খারাপ লেগেছে।” একই ভাবে গিল্ড নয়, গিল্ডের কমিটির সদস্যদের প্রতি তাঁর ক্ষোভ। সান্ত্বনা, কেশসজ্জা শিল্পীপ মেয়ে মায়ের হয়ে আইনি লড়াই লড়ছেন।