অভিনেত্রী আর তাঁর বড়মা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আমার কাছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ঈশ্বরের প্রতিনিধি। আমার কাছে সকল ধর্ম সমান। তার পরেও বলব, কালী মায়ের প্রতি আকর্ষণটাই আলাদা। আমার গায়ের রং, আমার প্রায় হাঁটুছোঁয়া চুল— কেন জানি না মনে হয় সব মায়ের দান। কপাল দেখুন, ছোট পর্দায় একাধিক বার দেবী কালিকা সেজেছি। গত বার জি বাংলা চ্যানেলে মায়ের এই রূপ জীবন্ত করেছিলাম। তার আগের বছর এক রূপটানশিল্পী আমায় দেবী ভবতারিণী সাজিয়েছিলেন। সকলে খুব প্রশংসায় করেছিলেন। দু’বারই ওই সাজ নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। মা প্রত্যেক বার আমার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছে! মায়ের কাছে আমি তখন জীবন্ত দেবী কালিকা।
এই প্রসঙ্গে বলি, সুযোগ পেলেই আমি কালী মায়ের মন্দিরে যাই। পুজো দিই, দর্শন করি। আলাদা শান্তি পাই। তবে আমার প্রিয় মায়ের থান কাটোয়ার খ্যাপা কালীতলা। এখানের মা জাগ্রত। প্রত্যেকে সে কথা বলেন। আমিও ফল পেয়েছি। সাধারণত, মায়ের কাছে কিছু চাই না। বলি, আমার যা পাওনা সেটাই দিও। খুশি মনে মেনে নেব। এই প্রসঙ্গে একটা ঘটনার কথা বলি। গত বছর বড়মাকে দেখতে গিয়েছি। দেবীকে তখন গয়না পরানো হচ্ছে। দেবীর উচ্চতা অনেক। সামনে সকলে ভিড় করে মাকে সাজানো দেখছেন। ইচ্ছে থাকলেও সেই ভিড় ঠেলে সামনে এগোনোর উপায় নেই। অগত্যা আমি সবার পিছে! কেবল মায়ের চোখ দুটো দেখতে পাচ্ছি।
মনটা খুব দমে গেল। কেঁদে ফেলেছিলাম সে দিন। কাঁদতে কাঁদতে বড়মাকে বলেছিলাম, আমায় দেখা দিলে না তো! আমার ডাক শুনলে আমায় তুমি আমায় টেনে এনে সামনে দাঁড় করাবে। তার দু’দিন পরে ওই অঞ্চলেই আমার শো ছিল। কোমর, পায়ে জখম নিয়েই অনুষ্ঠান করতে গিয়েছি। খবর পেলাম। দেবীর তখনও বিসর্জন হয়নি। ঠিক করলাম, যে ভাবে হোক শো শেষ করে মায়ের কাছে যাব। সে দিন আমি আর আমার দলের প্রত্যেকে উপবাসে। অনুষ্ঠান শেষ হতেই আমরা বড়মায়ের কাছে পৌঁছলাম।
সে দিন নিরাপত্তারক্ষী আমায় একেবারে মায়ের সামনে পৌঁছে দিয়েছিলেন। দু’চোখ ভরে মাকে দেখেছিলাম। আন্তরিক ভাবে আমার প্রার্থনা জানিয়েছিলাম। মা সন্তানের ডাক শুনেছিলেন। দু’মাসের মধ্যে আমার সেই প্রার্থনা পূরণ করেছিলেন আমার বড়মা। স্বামী স্বর্ণেন্দু সমাদ্দারকে নিয়েও গিয়েছি সেই স্থানে। মায়ের সমান বাঁশের বড় মাচায় আমরা দু’জনে উঠেছিলাম। যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারত সেই মাচা। এতই পলকা। কিন্তু ভাঙেনি! মায়ের কৃপা ছাড়া এ সব সম্ভব?