শুরুতে প্রত্যাখ্যাত হয়ে পরে তারকা হয়েছেন, এ রকম নিদর্শন বলিউডে অজস্র। তাঁদের মধ্যে মাধুরী দীক্ষিত অন্যতম। তাঁকেও প্রথমে ফিরিয়ে দিয়েছিল টিনসেল টাউন।
সুন্দরী মাধুরী অভিনয় জানতেন। দক্ষ ছিলেন কত্থকেও। কিন্তু তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে বহিরাগত ছিলেন।
একে বহিরাগত, তার উপর রাজশ্রী প্রোডাকশন থেকে তাঁর প্রথম ছবি তাপস পালের বিপরীতে ‘অবোধ’ ফ্লপ। ফলে দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়া মাধুরীর কাছে কঠিন হয়ে পড়ে।
তবু মাধুরী হার মানেননি। ‘আওয়ারা বাপ’ এবং ‘স্বাতী’ ছবিতে ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। বাধ্য হয়ে কাজ করেছিলেন বি গ্রেড ছবি ‘মানবহত্যা’-তেও।
প্রতিযোগিতায় হার না মানা মাধুরীর কাছে অবশেষে বড় ছবির সুযোগ এল। নায়ক ছিলেন অনিল কপূর। বড় এবং অনেক বেশি পেশাদার ইউনিটের সামনে মাধুরী বেশ নার্ভাস ছিলেন। পাশাপাশি, তাঁর মতো নবাগতাকে ঘিরে ইউনিটের কৌতূহলও ছিল তুঙ্গে।
প্রথম শট দেওয়ার পর মাধুরীর আত্মবিশ্বাস যেন চুরমার হয়ে গেল। তাঁর চেহারা এবং অভিনয়, দু’য়েরই সমালোচনা হল। অভিযোগ উঠল, তিনি রোগা। তাঁর অভিনয়েও নাকি কোনও প্যাশন নেই। এও বলা হল, মাধুরীর মধ্যে কোনও যৌন আবেদন নেই।
সমালোচনায় অংশ নিয়েছিলেন অনিলও। তাঁরও বক্তব্য ছিল, মাধুরী অভিনয় জানেন না। তিনি বেশি দূর যেতেও পারবেন না। সে সময় অনিল বলেছিলেন, ভবিষ্যতে আর কোনও দিন মাধুরীর সঙ্গে অভিনয় করবেন না।
অনিলের সঙ্গে মাধুরীর প্রথম সেই ছবির নাম ছিল ‘বজরঙ্গী’। ছবিটি অর্ধসমাপ্ত থেকে যায়। মাঝপথে তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সমালোচিত হয়েও মাধুরী তাঁর কাজ থামালেন না।
‘আওয়ারা বাপ’ ছবির শ্যুটিঙের সময় তাঁর আলাপ হল সুভাষ ঘাইয়ের সঙ্গে। একই স্টুডিয়োতে শ্যুটিং চলছিল সুভাষের ‘কর্মা’ ছবির।
‘কর্মা’-তে নায়ক ছিলেন অনিল কপূর। মাধুরীকে দেখে মুগ্ধ সুভাষ তাঁকে ‘কর্মা’ ছবিতে একটি নাচের সিকোয়েন্সের সুযোগ দিলেন। মাধুরীর মতো নবাগতাকে সুভাষ ঘাইয়ের মতো পরিচালক সুযোগ দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ল ইন্ডাস্ট্রিতে।
এর পর ঘুরেফিরে আবার অনিলের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ এল। ছবির নাম ‘হিফাজত’। নায়িকার ভূমিকায় মাধুরীর নাম শুনে প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করলেও পরে রাজি হয়ে যান অনিল।
অনিল-মাধুরী জুটি সেখানেই শুরু। এর পর একসঙ্গে বহু ছবিতে কাজ করেছেন দুই তারকা। বলিউডের সুপারহিট জুটিদের মধ্যে তাঁরা অন্যতম। ‘তেজাব’, ‘পরিন্দা’, ‘রাম লক্ষ্ণণ’, ‘বেটা’ থেকে হাল আমলের ‘টোটাল ধমাল’— পর্দায় এই জুটির বাজিমাত এখনও জারি।
মাধুরীর কেরিয়ার সাজিয়ে তুলতে সুভাষ ঘাইয়ের গভীর অবদান ছিল। যদিও ‘কর্মা’ ছবির সেই নাচের দৃশ্য পরে সম্পাদনার সময় বাদ পড়েছিল।
আজ মাধুরীর নামের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ‘ডিভা’, ‘ম্যাজিক’-এর মতো বিশেষণ। কিন্তু সূত্রপাতে তাঁকেই বিদ্রূপ এবং পরিহাসের শিকার হতে হয়েছিল।
যে অনিল কপূর একদিন তাঁর সঙ্গে অভিনয় করবেন না বলেছিলেন, পরে তাঁর সুপারস্টার হয়ে ওঠার পিছনেও মাধুরীর অবদান কম কিছু কম নয়।