বাবা করাচির লোক আর মা হায়দরাবাদি। তবে কুশল আগাগোড়া মুম্বইয়েরই ছেলে। কর্মসূত্রে বাবা-মা দু’জনেই মুম্বইতে শিফট করে যান। ১৯৮২ সালের ২৩ এপ্রিল মুম্বইয়েই জন্ম তাঁর। কুশলের বেড়ে ওঠা মুম্বইয়েই।
ছোট থেকে খেলাধুলোতে ভীষণ ভাল ছিলেন কুশল। নাচ, সাঁতার, ফুটবল, সাইক্লিং, স্কেটিং- একাধিক বিষয়ে আগ্রহ ছিল তাঁর। ছোটবেলা থেকে হাসিখুশি সেই ছেলেটাই সবাইকে চমকে দিয়ে পৃথিবী ছে়ড়ে চলে গেলেন!
রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হল হিন্দি টেলি সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেতা কুশল পঞ্জাবীর। তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৭ বছর। শুক্রবার ভোরে কুশলের মুম্বইয়ের ফ্ল্যাট থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। মিলেছে একটি সুইসাইড নোটও।
সুইসাইড নোটে মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করেননি তিনি। নিজের সমস্ত সম্পত্তি বাবা-মা আর তাঁর তিন বছরের ছেলের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। কিন্তু কী এমন হল যে তাঁকে এমন একটা পথ বেছে নিতে হল! পরিবার-পরিজন থেকে বন্ধুবান্ধব কারও কাছেই এর সঠিক উত্তর নেই। এমনকি সম্পত্তির ভাগে কেন স্ত্রী-র নাম নেই, তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।
একজন মডেল হিসাবেই কেরিয়ার শুরু করেছিলেন কুশল। ১৯৯৫ সালে ‘আ মাউথফুল অব স্কাই’ টিভি সিরিজের হাত ধরে তাঁর টেলিভিশনে আসা।
তারপর ২০০২ সালে ‘লভ ম্যারেজ’, ২০০৬ সালে ’ডন’ ও ‘কসম সে’, ২০০৭ সালে ‘সন্তান’— এমন একাধিক টিভি সিরিয়ালের সুযোগ আসতে শুরু করে তাঁর কাছে। এ ছাড়াও ‘ঝলক দিখলা যা’-সহ বেশ কিছু রিয়েলিটি শো-তে পারফর্ম করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
এমনকি জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘সিআইডি’-তেও তিনি ছিলেন। এ সবের মধ্যেই অভিনয়ের দৌলতে ২০০৪ সালে ফারহান আখতারের ছবি ‘লক্ষ্য’তে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
এ ছাড়া অজয় দেবগণের ‘কাল’, ‘সালাম এ ইশক’, ‘ধন ধনা ধন গোল’- এর মতো ফিল্মেও অভিনয় করেছেন তিনি। খুব তাড়াতাড়ি বিনোদন জগতের পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন।
তাঁর শেষ প্রজেক্ট ছিল কালারস টিভির ‘ইশক ম্যায় মরজাঁওয়া’। একদিকে যেমন কেরিয়ার গ্রাফও ছিল ঊর্ধ্বমুখী, তেমন ব্যক্তিগত জীবনেও মনের মতো সঙ্গীকে খুঁজে পেয়েছিলেন।
২০১৫ সালে ইউরোপীয় বান্ধবী অড্রে ডোলহেনকে বিয়ে করেন তিনি। এক বছর পর এক পুত্রের জন্ম দেন তাঁরা।
কুশলের সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ত্রী অড্রের ছবি খুব বেশি নেই, তবে ছেলের খুব কাছের মানুষ ছিলেন কুশল। ইনস্টাগ্রামে ছেলের একাধিক ছবি শেয়ার করতেন তিনি।
হঠাত্ তিনি কেন এ রকম সিদ্ধান্ত নিলেন? কুশলের ব্যক্তিগত জীবন বা কেরিয়ারে ইদানীং কি টানাপড়েন চলছিল?
কুশলের খুব কাছের এক বন্ধু জানিয়েছেন, ইদানীং কেরিয়ার নিয়ে কুশল খুবই চাপে ছিলেন। ঠিকঠাক কাজ পাচ্ছিলেন না। তার উপর ব্যক্তিগত জীবনেও সমস্যা চলছিল। স্ত্রী অড্রের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছিল তাঁর। সেই কারণেই কি আত্মঘাতী হলেন কুশল! দানা বাঁধছে রহস্য।
মৃত্যুর দু’দিন আগেই ওই বন্ধুকে ফোন করে নাকি জীবন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছিলেন তিনি। সবসময় লড়াইয়ের কথা বলতেন যে কুশল, সে নিজের সঙ্গেই লড়াইটা আর চালাতে পারলেন না! হাল ছেড়ে দিলেন।