করিশ্মা কপূরের সঙ্গে অভিষেক বচ্চনের সম্পর্কের বিষয় অনেকেরই জানা। অভিষেকের সঙ্গে বিয়ে প্রায় ঠিক হয়ে গিয়েছিল করিশ্মার। ইন্ডাস্ট্রির দুই বড় পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তা তৈরি যখন প্রায় নিশ্চিত, তখন হঠাৎই তাঁদের বিয়ে ভেঙে যায়।
দুই পরিবারের মধ্যে প্রথম থেকেই যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল, সেটাই ক্রমে ম্লান হয়ে যায় করিশ্মা-অভিষেকের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে। জানেন কী কেন করিশ্মা-অভিষেকের বিয়ে ভেঙে গিয়েছিল? আর কেনই বা বিয়ে ভাঙার ৬ মাসের মধ্যেই করিশ্মা অন্য এক জনকে বিয়ে করে নেন?
শুরু করা যাক একটু আগে থেকেই। কপূর পরিবারে জন্ম হয়েও করিশ্মা কী ভাবে অভিনয় জগতে এলেন? কী ভাবে তাঁর অভিষেকের সঙ্গে পরিচয় হল? সে পরিচয় কী ভাবে প্রেমে পরিণত হল এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেই তৃতীয় ব্যক্তি কে ছিলেন মূলত যাঁর জন্যই তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে গেল?
রণধীর কপূর এবং ববিতার বড় মেয়ে করিশ্মা। কপূর পরিবারের মেয়ে এবং পুত্রবধূরা কখনও ফিল্মে আসেন না। অলিখিত ভাবে এ রকম একটা নিয়ম চলছে বহু দিন ধরেই। করিশ্মা যখন ১৫-১৬ বছরের, তাঁর বাবার কেরিয়ার মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করে।
অর্থের খুব একটা সমস্যা ছিল না কপূর পরিবারে। কিন্তু প্রতি মাসের নির্দিষ্ট উপার্জন যদি কমে আসে, তা হলে কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়তে তো হয়ই। করিশ্মাদেরও তাই হয়েছিল।
কপূর পরিবারের রীতি মেনে বিয়ের পর অভিনয় থেকে সরে এসেছিলেন ববিতা। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর মেয়ারাও তাঁর মতো অভিনয়ে আসুক। কিন্তু কপূর পরিবার তা মানতে চায়নি। বিশেষ করে এই নিয়ে ববিতার সঙ্গে রণধীরের রোজকার ঝামেলা লেগেই থাকত।
সাহসী সিদ্ধান্ত নেন ববিতা। দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি আলাদা থাকতে শুরু করেন। পাশাপাশি করিশ্মাকে অভিনয়ের জন্য তৈরি করতেও শুরু করেন।
১৯৯১ সালে করিশ্মার প্রথম ছবি মুক্তি পায়। বক্স অফিসে একেবারেই সাফল্য পায়নি ছবিটি। তবে স্টার কিড হওয়ার দরুণ প্রথম ছবি থেকেই দর্শকদের নজর কেড়েছিলেন করিশ্মা।
এর পরের বছর ১৯৯২ সালে অজয় দেবগণের সঙ্গে ‘জিগর’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। শোনা যায়, এই ফিল্ম থেকেই নাকি অজয়ের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল।
করিশ্মা বরাবরই নিজের ইচ্ছায় চলা পছন্দ করেন। অজয়ের সঙ্গে এক সময় রবিনা টন্ডনেরও ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল। রবিনাকে একেবারেই পছন্দ করতেন না করিশ্মা। নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে রবিনাকে নাকি ৪টি ফিল্ম থেকে বার করে দিয়েছিলেন করিশ্মা।
শুধু রবিনার সঙ্গেই নয় করিশ্মার সঙ্গে বলিউডের আরও অনেক নায়িকার সঙ্গেই ঝামেলা লেগেই থাকত। পূজা ভট্ট, মণীশা কৈরালার সঙ্গেও বিভিন্ন কারণে করিশ্মা মুখ দেখা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ইন্ডাস্ট্রি করিশ্মাকে অহঙ্কারী হিসাবেই জানত সে সময়।
তার পর অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা সামনে আসে। করিশ্মার বাবা বচ্চন পরিবারের বন্ধু ছিলেন। অমিতাভ বচ্চনের মেয়ের বিয়েতে সপরিবার আমন্ত্রিত ছিলেন রণধীর। সেখানেই অভিষেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হয় করিশ্মার।
অভিষেকের সঙ্গে ক্রমে তাঁর বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠতায় পরিণত হয়। তাঁদের বিয়েও প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু করিশ্মার মা ববিতার জন্যই তাঁদের বিয়ে ভেঙে যায়।
করিশ্মা তখন ইন্ডাস্ট্রির সুপারস্টার। অন্য দিকে অভিষেক তখনও কেরিয়ার শুরু করেননি। তাই মেয়ের বিবাহিত জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তা করছিলেন ববিতা। অভিষেকের নামে ঠিক কী কী সম্পত্তি করা হবে তা বিয়ের আগেই জানতে চাইছিলেন ববিতা।
এমনকি ববিতার শর্ত ছিল, যা যা সম্পত্তি অভিষেক পাবে তার একটা লিখিত নথি তাঁকে বিয়ের আগেই দেওয়া হোক। ববিতার এই শর্ত মানতে চাননি বচ্চন পরিবার। অভিষেকের সঙ্গে করিশ্মার বিয়েটাই ভেঙে দেন তাঁরা।
বিষয়টি একেবারেই মানতে পারেননি করিশ্মা। তাই ৬ মাসের মধ্যেই সঞ্জয় কপূরকে বিয়ে করে নেন করিশ্মা। তবে তাঁদের বিবাহিত জীবন খুব সুখের ছিল না। বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন।
বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদনও জানান করিশ্মা কপূর। স্বামী সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ আনেন তিনি। পাল্টা সঞ্জয়ও অভিযোগ করেন, অভিষেকের সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় আত্মসম্মানে ঘা লাগে করিশ্মার। অভিষেককে একপ্রকার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এবং তাঁকে দেখানোর জন্যই নাকি বিয়ে করেছিলেন করিশ্মা।