ঋষি কপূরের সঙ্গে ছবিতে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে সুপারহিট ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন। শুরুতেই অপ্রত্যাশিত ভাবে একাধিক ছবি সফল হয়ে গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও বেশি দূর এগোতে পারেননি তিনি। কয়েক বছরের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন।
তিনি শোমা আনন্দ। পঞ্জাবের অমৃতসরের মেয়ে। পরবর্তীকালে কর্মসূত্রে বাবা মুম্বইয়ে চলে এসেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই নাচ এবং গানের প্রতি আলাদা ভাললাগা ছিল শোমার। খুব মেধাবীও ছিলেন। তাই কোনও দিন অভিনয় করার কথা ভাবেননি।
মুম্বইয়ে শোমা যেখানে থাকতেন, তার কাছেই একটি বাড়িতে নাচ শিখতে যেতেন। তাঁর নাচের গুরু ছিলেন বলিউডের পরিচিত ব্যক্তিত্ব। তিনিই শোমাকে অভিনয়ের পরামর্শ দিয়েছিলেন। স্বভাবতই তাতে একেবারেই আগ্রহ দেখাননি শোমা।
শোমার বাবার এক বন্ধুর সঙ্গে বলিউডের পরিচালকদের ওঠাবসা ছিল। শোমা তখন সদ্য কলেজে পা রেখেছেন। তাঁকে দেখেই বাবার ওই বন্ধু জানতে চেয়েছিলেন, তিনি অভিনয়ে আসতে ইচ্ছুক কি না। সে বারেও আগ্রহ দেখাননি শোমা।
তবে শোমার মায়ের এই প্রস্তাব পছন্দ হয়। তিনি মেয়ের জন্য কিছু ভাল চরিত্রের খোঁজ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ওই ব্যক্তির কাছে। কয়েক দিন পরই সুপারস্টার ঋষি কপূরের বিপরীতে অভিনয়ের প্রস্তাব আসে তাঁর কাছে। ঋষির নাম শুনেই এক লাফে প্রস্তাবে সায় দিয়ে দেন শোমাও। ১৯৭৬ সালে ছবি ‘বারুদ’-এ ঋষির বিপরীতে বলিউডে পা রাখেন তিনি। এই ছবির পর একাধিক প্রস্তাব আসতে শুরু করে। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে ‘কুলি’ ছবিতেও অভিনয় করেন।
যত দিন যাচ্ছিল অভিনয়েও আরও সাবলীল হয়ে উঠছিলেন তিনি। কিন্তু একটা সময় তাঁর নামে খুব নেতিবাচক প্রচার শুরু হয়। সংবাদমাধ্যমে ছাপা হতে শুরু হয় যে, তিনি নাকি হেমা মালিনীকে নকল করেন। তার প্রভাব পড়েছিল তাঁর কেরিয়ারেও। ভাল চরিত্র তিনি পাচ্ছিলেন না। এরই মধ্যে আরও এক ঘটনা তাঁর কেরিয়ারে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল। এই দুইয়ের প্রভাবে এক সময় বলিউড থেকেই বিরতি নিতে বাধ্য হয়েছিলেন শোমা।
প্রযোজক-অভিনেতা তারিক শাহের সঙ্গে বিয়ে করেন শোমা। তারিক নিজে ইন্ডাস্ট্রির লোক হয়েও ঘরের বাইরে স্ত্রীর পা রাখা বিশেষ পছন্দ করতেন না। স্বামীর পরামর্শে শোমাও তাই অভিনয় ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের এক কন্যা সন্তানও রয়েছে।
এ ভাবে ছ’বছর কেটে যায়। ১৯৯৫ সালে স্বামী তারিকের একটি ছবিতে জিতেন্দ্র কাজ করছিলেন। সেই সূত্রেই শোমার সঙ্গে পরিচয় হয় জিতেন্দ্রর। তখন আবার জিতেন্দ্রর মেয়ে একতা কপূরও একটি ধারাবাহিকে কাজ করছিলেন।
শোমাকে ওই ধারাবাহিকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন জিতেন্দ্র। শোমা তাতে রাজিও হয়ে যান। এ ভাবেই প্রত্যাবর্তন হয়। জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘হম পাঁচ’-র হাত ধরে নতুন করে যাত্রা শুরু করেন শোমা।
তত দিনে চেহারার অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। ওজনও খানিক বেড়ে গিয়েছিল তাঁর। তাই কেরিয়ারের প্রথমার্ধের মতো নায়িকা হওয়ার সুযোগ হারিয়েছিলেন। তবে অভিনয়ের গুণে ফের দ্বিতীয় ইনিংস-এও নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন তিনি।