বলিউডি গানের দুনিয়ায় তিনি তখন খ্যাতির শীর্ষে। ঠিকই করে নিয়েছিলেন, বাকি জীবনটা কাটাবেন সঙ্গীতসাধনাতেই। কিন্তু চল্লিশে পৌঁছে আচমকাই অন্য খাতে বইতে শুরু করল জীবন। মনের মানুষকে বিয়ে করে রাতারাতি চার সন্তানের মা হয়ে গেলেন কবিতা কৃষ্ণমূর্তি।
নয়াদিল্লির তামিল আইয়ার পরিবারে কবিতার জন্ম ১৯৫৮-র ২৫ জানুয়ারি। বাবা টি এস কৃষ্ণমূর্তি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রকের কর্মী। জন্মের পরে মেয়ের নাম রেখেছিলেন শারদা। ধ্রুপদী সঙ্গীতের পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই তিনি তালিম নিয়েছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীতে। মাত্র আট বছর বয়সে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন সঙ্গীত প্রতিযোগিতায়।
মু্ম্বইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী ছিলেন কবিতা। কলেজ ফেস্টে আলাপ রাণু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। গান শুনে মুগ্ধ রাণু কবিতাকে নিয়ে গিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর বাবা হেমন্ত মুখোপাধ্যারে কাছে। তিনি কবিতাকে নিজের অনুষ্ঠানে গাইবার সুযোগ করে দেন।
এরপর মান্না দে-এর সান্নিধ্যে আসেন কবিতা। তিনিও বেশ কিছু জায়গায় কবিতাকে গানের সুযোগ করে দেন। বলিউডে তাঁকে দিয়ে অনেক ছবিতে গান করান লক্ষ্মীকান্ত পেয়ারেলাল।
প্রথম প্লে ব্যাক-এর সুযোগ পান ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া কন্নড় ছবি ‘ওন্দানন্দু কালাদাল্লি’-তে। গিরিশ কারনাডের পরিচালনায় এই ছবিতে একটিমাত্র গান-ই ছিল। লোকসঙ্গীতের আঙ্গিকে কবিতার গলায় সেই গান খুবই জনপ্রিয় হয়।
হিন্দি ছবিতে তাঁর প্রথম বড় ব্রেক ১৯৮৫ সালে, ‘প্যায়ার ঝুকতা নহি’ ছবিতে। এরপর ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘১৯৪২: আ লভ স্টোরি’, ‘ইয়ারানা’, ‘অগ্নিসাক্ষী’, ‘খামোশি’-র মতো ছবিতে তাঁর গান ইন্ডাস্ট্রিতে পায়ের তলায় জমি শক্ত করে।
কিশোর-রফি থেকে শুরু করে সোনু নিগম-শান। কয়েক দশক ধরে সেরা গায়কদের সঙ্গে পারফর্ম করেছেন কবিতা। গায়কদের পাশাপাশি অলকা যাজ্ঞিক, অনুরাধা পোড়ওয়াল, শ্রেয়া ঘোষাল, সাধনা সরগমের মতো গায়িকাদের সঙ্গেও তাঁর দ্বৈত সঙ্গীত সুপারহিট।
গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর ও আশা ভোঁসলের সঙ্গেও। হিন্দির পাশাপাশি তেলুগু, মরাঠি, উর্দু, তামিল, মালয়ালম, কন্নড়, গুজরাতি এবং বাংলা গানের দুনিয়া দাপটের সঙ্গে শাসন করেছেন কবিতা। গান গেয়েছেন ইংরেজি ও উর্দুতেও।
ধ্রুপদী সঙ্গীত, প্লেব্যাক-এর সঙ্গে তাঁর সাবলীল বিচরণ রবীন্দ্রসঙ্গীতেও। গান করেছেন ‘রামায়ণ’, মহাভারত’, ‘আলিফ লায়লা’-র মতো দূরদর্শনের জনপ্রিয় সিরিয়ালেও।
‘ডোলা রে ডোলা’, ‘আজ ম্যায়ঁ উপর’, ‘মেরা পিয়া ঘর আয়া’, ‘প্যায়ার হুয়া ছুপকে সে’, ‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘নিম্বুরা’-র মতো গান তাঁকে অজস্র পুরস্কার এনে দিয়েছে। ২০০৫ সালে ভূষিত হন ‘পদ্মশ্রী’-তে।
এই ভাবে গান নিয়েই থাকবেন, ঠিক করে নিয়েছিলেন কবিতা। কিন্তু হঠাৎ করেই জীবন জড়িয়ে ফেললেন ডি এল সুব্রহ্মণ্যমের সঙ্গে। যশস্বী এই বেহালাবাদকের সঙ্গে আগে অনুষ্ঠান করেছেন কবিতা। ১৯৯৯ সালে তাঁর সঙ্গে বাঁধলেন গাঁটছড়া। দু’জনের বয়সের ব্যবধান ১১ বছর।
সুব্রহ্মণ্যম-এর প্রথম স্ত্রী ভিজি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ১৯৯৫ সালে। তার চার বছর পরে নিতান্ত সাদামাটা অনুষ্ঠানে তিনি বিয়ে করেন কবিতাকে। স্বামীর আগের পক্ষের চার সন্তানকে পরম যত্নে আপন করে নিয়েছেন কবিতা।
বিয়ের পরে কবিতার জীবন আমূল বদলে যায়। বিয়ের পর মুম্বইয়ের পাট তুলে তিনি স্থায়ী ভাবে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। সুব্রহ্মণ্যমের চার সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে এবং এক ছেলে কোনও না কোনও ভাবে সঙ্গীতজগতের সঙ্গে যুক্ত। আর এক ছেলে নারায়ণ পেশায় চিকিৎসক।
কবিতা জানিয়েছেন, বিয়ের আগে তাঁর পায়ের কাছে জুতো এগিয়ে দেওয়ার জন্যেও একজন থাকত। সেখান থেকে বিয়ের পরেই গুরু দায়িত্ব এসে পড়ে কাঁধে।
এখন কবিতা একজন দায়িত্বশীল স্ত্রী, স্নেহময়ী মা এবং দিদিমা। প্রতিটা মুহূর্ত এবং ভূমিকা ভরপুর উপভোগ করছেন তিনি। জীবনের চলার পথকে নিজের ছন্দেই সুরেলা করে নিতে ভালবাসেন তিনি। (সোশ্যাল মিডিয়া)