কাঞ্চন মল্লিকের ছেলে ওশকে নিয়ে বললেন শ্রীময়ী চট্টরাজ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ছেলের মা বরাবর ছেলের পক্ষে। শত অন্যায় করুক ছেলে, মা তাকে আড়াল করবেনই। এ ভাবেই ছেলেকে বড় করতে গিয়ে মা তাঁর জীবনের সর্বস্ব দিয়ে ফেলেন। বদলে চান, ছেলে মানসিক ভাবে সমর্থন করবে মাকে। মা-বাবা কেমন আছেন— খোঁজ নেবে, এটুকুই। সব সময় অর্থ দিয়ে সাহায্য করবে, কখনওই কিন্তু চান না। রাজ চক্রবর্তীর ছবি ‘সন্তান’ সেই দিক তুলে ধরেছে পর্দায়। এই মা বুঝতেই চান না, সন্তান বড় হয়ে গিয়েছে। এমনকি বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরেও নয়।
ছবি দেখতে দেখতে শিউরে উঠেছি। ছেলের মায়ের জীবনের এটাই বড় ‘ট্র্যাজেডি’। যার জেরে ছেলের বিয়ের পর এত অশান্তি। ভুরি ভুরি বৃদ্ধাশ্রম গজিয়ে উঠেছে শহরে। প্রচুর সম্পদ থাকতেও তাঁরা সন্তানের কাছে বোঝা। শুনতে শুনতে চোখ ভিজেছে। একটাই কথা মনে হচ্ছিল, আমিও সদ্য মা হয়েছি। আমারও সন্তানের প্রতি কিছু আশা বা চাওয়া থাকবে। খুব ভুল সেটা?
অনেকেই হয়তো বলবেন, আমার শ্বশুর-শাশুড়ি নেই। তাই এত কথা বলছি। বিশ্বাস করুন, কাঞ্চনের মা-বাবা থাকলে আমার মা-বাবার মতোই সমান গুরুত্ব পেতেন। কখনও ছেলেকে তাঁদের থেকে আলাদা করার চেষ্টাও করতাম না। মা-বাবার চোখের জল সন্তানের পক্ষে অমঙ্গলজনক। সেই জায়গা থেকে বলব, একসঙ্গে থাকলে ঘটিবাটিতে ঠোকাঠুকি লাগবেই। মানিয়ে নিতে হয়। মেয়ের মায়েদের অবশ্য এক দিকে সুবিধে। তাঁরা শাসনটুকুই করেন। সোহাগ করেন বাবারা। এটাও আমার জীবন দিয়ে বুঝতে পারছি। কাঞ্চন মেয়ে বলতে অজ্ঞান!
আমি তাই সন্তানের থেকে আমার বা আমাদের জন্য বেশি কিচ্ছু চাইব না। ও যাতে নিজের জীবন গুছিয়ে নিতে পারে, সবার আগে এই চাওয়াটাই থাকবে আমাদের। একুশ শতকে দাঁড়িয়েও বলছি, মেয়ে তো, বেশি অনুভূতিপ্রবণ না হওয়াই মঙ্গল। না হলে ওকে প্রতি পদে কষ্ট পেতে হবে। মান আর হুঁশ যেন থাকে। বদলে মেয়ে আমাদের বুকে জড়িয়ে ধরে বলুক, “মা তোমার কী চাই” বা “বাবা তোমার কী চাই”— তাতেই খুশি। সেটাই যথেষ্ট।
হ্যাঁ, এই চাওয়া কাঞ্চনের আগের পক্ষের সন্তান ওশের থেকেও। আমি হয়তো ওকে গর্ভে ধারণ করিনি। কিন্তু ওশ তো আমারও সন্তানসম। আমার কাছে কৃষভি যা, ওশ-ও তাই। বিয়ের আগে দেখেছি, পরীক্ষার ফল প্রকাশ থেকে অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকদের কথা— সব হত কাঞ্চনের সঙ্গে। ছেলে যখনই ভাল কিছু করত, কাঞ্চন গর্ব করে আমায় বলত, “দ্যাখ, আমার ছেলে কত ভাল করেছে।” সেই আবেগ আজও রয়ে গিয়েছে। কাঞ্চন ছেলেকে প্রচণ্ড ভালবাসে, আজও। প্রতি পদে মিস করে। জানি না, ওশ বড় হয়ে কাঞ্চনের এই অনুভূতি বুঝবে কি না। তবে আমার দিক থেকে বলছি, আমাদের বাড়িতে ওশের অবারিত দ্বার। ওশ কোনও দিন যদি কাঞ্চনের কাছে এসে দাঁড়ায়, থাকতে চায় আমাদের কাছে, ‘তৃতীয় ব্যক্তি’ হয়ে বাধা দেব না। ওই পাপ ভুলেও না। আমারও সন্তান আছে। সে-ও কিন্তু এই ব্যবহার আমাকে ফেরত দেবে।
জানেনই তো, শিশুরা কাদার তাল। শিব গড়তে গিয়ে বাঁদর গড়ে ফেললে, নিজেকেই তার মাশুল গুনতে হবে।