ইন্ডাস্ট্রিতে শাহরুখ এবং আমির খানের যে খুব একটা দোস্তি নেই, সে কথা প্রায় সকলেরই জানা। কিন্তু শাহরুখের জন্য যে আমির খানের সঙ্গেও কাজলের ঠান্ডা লড়াই চলেছিল বেশ কিছু বছর ধরে তা কি আপনি জানতেন? সেই তিক্ততা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে, দীর্ঘ দিন কথা বলেননি আমির-কাজল। একসঙ্গে ছবিতে অভিনয়! তাহয়েছিল অনেক পরে... কী হয়েছিল?
ইন্ডাস্ট্রিতে শাহরুখ খান যখন ডেবিউ করেন, তাঁর আগে থেকেই ইন্ডাস্ট্রি দাপিয়ে বেরাচ্ছিলেন আমির খান। সে সময় জুহি চাওলার সঙ্গে তাঁর বেশ কিছু সিনেমা সুপারহিট। জুহি আর আমিরের বন্ধুত্বও বেশ জমে উঠেছে।
ঠিক এমনই সময়ে জুহির সঙ্গে শাহরুখের একটি ছবির অফার আসে। ছবির নাম ‘রাজু বন গয়া জেন্টলম্যান’। সেই ছবি চলাকালীন জুহির সঙ্গেও বেশ ভালই সখ্যতা গড়ে ওঠে শাহরুখের।
জুহির সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্রেই শাহরুখের আলাপ হয় আমির খানের সঙ্গে। জুহিই আলাপ করিয়ে দেন। শাহরুখ এবং আমিরের মধ্যেও ভালই আলাপ জমে ওঠে। শাহরুখ তখন নতুন। ভবিষ্যতে তিনি কী কাজ করবেন, কী করবেন না সে বিষয়েও আমিরের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতেন কিং খান।
ঠিক এমন সময়েই শাহরুখের কাছে ‘বাজিগর’ ছবির অফার আসে। শাহরুখের চরিত্রটি নেগেটিভ। কিন্তু তা-ও চরিত্রটি করতে রাজি হয়ে যান এসআরকে। শাহরুখ শোনেন বিপরীতে একটি নতুন মেয়ে কাজ করবে। নাম কাজল।
কাজল কেমন তা জানতে আমিরকেই জিজ্ঞাসা করেন এসআরকে। কাজলকে চিনতেন আমির। “সেলেবের(তনুজা) মেয়ে, তাই অ্যাটিটিউড প্রবলেম থাকতে পারে”, কাজল সম্পর্কে শাহরুখকে এমনটাই বলেন আমির।
শুরু হয় ‘বাজিগর’-এর শুটিং। কাজলকে নিয়ে প্রথমে চিন্তায় থাকলেও দেখতে দেখতে শাহরুখ-কাজলের অফস্ক্রিন রসায়ন জমে ওঠে। সুপারহিট হয় ‘বাজিগর’ ছবিটিও। দেখতে দেখতে কাজল এবং শাহরুখ হয়ে ওঠেন ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’।
একের পর এক ছবি করছেন। আর প্রত্যেক ক’টাই সুপারহিট। এমন সময়ে শাহরুখ তাঁর কেরিয়ারের প্রথম দিকে বলা আমিরের ওই কথাগুলো ফাঁস করে দেন কাজলকে। আমিরের কথায় তাঁর যে কাজল সম্পর্কে প্রথমে বেশ নেতিবাচক ধারণাই হয়েছিল, সে কথাও প্রিয় বন্ধুকে বলেন কিং খান।
এ দিকে কাজল তো রেগে লাল। আমিরের সঙ্গে তখনও পর্যন্ত একটাও ছবি করেননি তিনি। তা সত্ত্বেও কেন আমির তাঁকে বাইরে থেকে দেখে এমন ‘আলটপকা’ মন্তব্য করেছেন সে ব্যাপারে জবাব চান কাজল।
আর ইন্ডাস্ট্রির অলিখিত প্রোটোকল অনুযায়ী, একজন অভিনেতা কখনওই আর এক জন অভিনেতা সম্পর্কে জনসমক্ষে নেতিবাচক মন্তব্য করতে পারেন না। আমির প্রোটোকল ভেঙেছেন, সে অভিযোগও আনেন কাজল।
এ দিকে একদা বন্ধু শাহরুখও সমস্ত কথা কাজলকে ফাঁস করে দেওয়ায় শাহরুখের উপরেও রেগে যান আমির। সব মিলিয়ে শাহরুখ এবং আমিরের বন্ধুত্বে ফাটল ধরে। কাজল এবং আমিরের সম্পর্কও খারাপ হয়ে যায়। কাজল দীর্ঘদিন ছবি করতে চাননি আমিরের সঙ্গে। কথাও খুব একটা হত না তাঁদের।
এর পর ১৯৯৭ সালে কাজলের কাছে ‘ইশক’ ছবির অফার আসে। কাজল ছাড়াও সেই ছবিতে ছিলেন জুহি চাওলা, আমির খান এবং অজয় দেবগণ। শোনা যায়, এই ছবিতে প্রথমে কাজলকে নেওয়ার কথা ভাবেননি পরিচালক। পছন্দ ছিলেন মনীষা কৈরালা।
কিন্তু মনীষার ডেট ম্যাচ না করায়, এবং সে সময় অজয়ের অনুরোধে শেষমেশ কাজলকে নেওয়া হয় ওই ছবিতে। সে সময় অজয়ের সঙ্গে কাজলের প্রেম নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ গুঞ্জন।
যাই হোক, একসঙ্গে সিনেমা করলেও আমির নয়, অজয়ের বিপরীতেই অভিনয় করেছিলেন কাজল। এমনকি সেটেও তাঁদের খুব একটা যে কথা হত, এমনটা নয়।
এর পর আর আমিরের সঙ্গে আরও দীর্ঘ সময় ছবি করেননি কাজল। অজয়ের সঙ্গে বিয়ে, সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কাজল। সাল ২০০৬। কাজল ভাবেন অনেক হয়েছে, এ বার কামব্যাক করতে হবে তাঁকে।
যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারে তাঁর কাছে অফার যায় ফিল্ম ‘ফানা’-র। বিপরীতে আমির খান। আগে হলে হয়ত কাজল না করতেন। কিন্তু সেই সময় তাঁর কেরিয়ারের ক্ষেত্রে ওই ছবি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
আর ব্যক্তিগত সম্পর্ক যা-ই থাকুক না কেন, আমির যে শক্তিশালী অভিনেতা, তা সম্পর্কে ওয়াকিবহল ছিলেন কাজলও। তিনি রাজি হয়ে যান। আর সেই ছবি বক্স অফিসে সুপারহিট হয়। কেন যে এর আগে আমির-কাজল জুটি বাঁধেননি, প্রশ্ন তোলেন ফ্যানেরা।
এর পিছনে যে দায়ি ছিলেন শাহরুখই তা কি আর ফ্যানেরা জানেতেন?