‘বাজিগর’ ছবিতে শিল্পপতি চোপড়া পরিবারের পরিচারক বাবুলাল ছিল ভুলোমনের। পর্দার বাইরে বাবুলাল চরিত্রের কারিগর জনি লিভারের কিন্তু স্পষ্ট মনে পড়ে নিজের তিক্ত অতীত। যখন তিনি হিন্দি সিনেমার অভিনেতাদের নকল করে কলম বিক্রি করতেন।
১৯৫৭ সালের ১৪ অগস্ট জন্ম অন্ধ্রপ্রদেশের কানিগিরিতে। তবে তিন বোন ও দু’ ভাইয়ের সঙ্গে বড় হওয়া মুম্বইয়ের কিংস সার্কল এলাকার ধরাভি বা ঘিঞ্জি বস্তিতে। ছোটবেলায় তাঁর নাম ছিল জন। বাবার নাম প্রকাশ রাও জানুমালা। মা, করুণাম্মা।
ছোটবেলা থেকেই মিমিক্রি করার অদ্ভুত ক্ষমতা জনির। একবার নিজের অফিসের অনুষ্ঠানে মঞ্চে নকল করে দেখাচ্ছিলেন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষদের। তুমুল জনপ্রিয় হয় তাঁর পারফরম্যান্স। সংস্থার কর্মীরা তাঁর নতুন নাম দেন।
ওই অনুষ্ঠানের পর থেকে ‘জন রাও’ হয়ে গেলেন ‘জনি লিভার’। তিনি তখন কাজ করতেন হিন্দুস্তান লিভার প্রাইভেট লিমিটেড-এ। ‘লিভার’ শব্দটা নিজের নামে রেখেই দেন তিনি। পরবর্তী কালে ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত হন ‘জনি লিভার’ নামেই।
জনি পড়তেন অন্ধ্র্ এডুকেশন সোসাইটি ইংলিশ হাই স্কুলে। কিন্তু সপ্তম শ্রেণিতেই বন্ধ হয়ে যায় স্কুলের পর্ব। অর্থাভাবে আর এগোয়নি পড়াশোনা। বাধ্য হয়ে জনি রাস্তায় কলম বিক্রি করতেন। সঙ্গে চলত বলিউড তারকাদের মিমিক্রি। মাঝে মাঝে জনপ্রিয় হিন্দি গানের সঙ্গে নাচতেনও তিনি।
এছাড়াও নানারকমের কাজ করেছেন তিনি। তারপর হিন্দুস্তান লিভার সংস্থায় চাকরি। তবে সে চাকরিও ১৯৮১ সালে ছেড়ে দিলেন। কারণ তখন তাঁর স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হিসেবে নামডাক হতে শুরু করেছে।
ক্রমে জলসা জমাতে জনি লিভার হয়ে উঠলেন অপরিহার্য। শো করে ফেললেন বিগ বি-র সঙ্গেও। এরকমই এক শোয়ে তাঁর প্রতিভা চোখে পড়ল সুনীল দত্তের। তিনি জনিকে সুযোগ দেন ‘দর্দ কা রিস্তা’ ছবিতে। এটাই জনি লিভারের প্রথম ছবি।
এরপর ‘হত্যা’, ‘তেজাব’, ‘চালবাজ’, ‘জাদুগর’, ‘মুজরিম’, ‘খিলাড়ি’, ‘চমৎকার’, ‘রূপ কি রানি চোরো কি রাজা’, ‘আনাড়ি’-সহ বেশ কিছু সফল ছবিতে কমেডিয়ানের ভূমিকায় অভিনয় করেন জনি।
তবে তাঁর কেরিয়ারের প্রথম নজরকাড়া ছবি ‘বাজিগর’। ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁকে পায়ের তলায় শক্ত জমি দেয় ‘বাবুলাল’ চরিত্র।
সাড়ে তিন দশকের কেরিয়ারে জনি লিভার অভিনয় করেছেন তিনশোরও বেশি ছবিতে।
‘ক্রিমিনাল’, ‘প্রেম যোগ’, ‘ম্যাঁয় খিলাড়ি তু আনাড়ি’, ‘দিলবর’, ‘করণ অর্জুন’, ‘রাম শাস্ত্র’, ‘রাজা হিন্দুস্তানি’, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘সোলজার’, ‘চোরি চোরি চুপকে চুপকে’, ‘লজ্জা’, ‘চলতে চলতে’, ‘কোই মিল গ্যায়া’, ‘দিলওয়ালে’, ‘গোলমাল এগেইন—অসংখ্য ছবিতে দর্শককে তিনি উপহার দিয়েছেন নির্মল আনন্দ।
হিন্দি ও মাতৃভাষা তেলুগু ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি প্লে ব্যাক করেছেন কিছু ছবিতে। জনপ্রিয়তা পেয়েছেন টেলিভিশনেও। একাধিকবার পুরস্কৃত হয়েছেন তাঁর কাজের জন্য।
জনি ও তাঁর স্ত্রী সুজাতার দুই সন্তান। কন্যা জ্যামি ও পুত্র জেস। বাবার মতো জ্যামিও স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান। জনির একদমই ইচ্ছে ছিল না, মেয়ে তাঁর পেশায় আসুক। মেয়েকে পড়তে পাঠিয়েছিলেন লন্ডনে, মার্কেটিং কমিউনিকেশন নিয়ে। কিন্তু জ্যামি শেষ অবধি পা রাখেন বাবার পথেই।
জনি লিভার বরাবরই ধর্মপ্রাণ। তবে একটি ঘটনা তাঁকে ঈশ্বরের প্রতি অগাধ বিশ্বাসী করে তুলেছে। জনির বিশ্বাস, ঈশ্বরের আশীর্বাদেই তাঁর ছেলে দুরারোগ্য অসুখ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে। জনি জানিয়েছেন, এটা তাঁর কাছে নতুন জীবন লাভের মত।
হৃদয়ের ক্ষত আর চোখের জল লুকিয়ে রেখেই দর্শককে হাসিয়ে যান কমেডিয়ান জনি লিভার।