ছবি: সংগৃহীত।
পরের পর শো হাউসফুল। টিকিটের চাহিদা এমনই যে জন্য সোমবার থেকে বাড়িয়ে দেওয়া হল ‘ছপাক’-এর শো’য়ের সংখ্যা। জলপাইগুড়ি শহরের উকিলপাড়ার একটি হলের ঘটনা। শুক্রবার থেকে দিনে দু’টি করে ‘ছপাক’য়ের শো চলছিল সেখানে। সোমবার থেকে তা বেড়ে হয়েছে তিন। সপ্তাহের মাঝপথে এমন ভাবে শো বাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ‘নজিরবিহীন’ বলে জানাচ্ছে হল কর্তৃপক্ষও।
সম্প্রতি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের উপর আক্রমণের অভিযোগ ওঠে একদল দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। সেই নিয়ে তোলপাড় হয় দেশ। সেই রেশ এখনও চলছে। ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করেন দীপিকা পাড়ুকোন। তারপরেই গেরুয়া শিবিরের রোষের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। দীপিকা অভিনীত ‘ছপাক’ বয়কট করার কথা বলেন গেরুয়া শিবিরের নেতা। বিজেপির এক নেত্রী সরাসরি দীপিকাকে কংগ্রেস সমর্থক বলে দেগে দেন। সেই সব হুমকি, রাজনৈতিক আক্রমণে জলপাইগুড়ি শহর কান দেইনি বলে দাবি করছেন নাগরিক সমাজ।
শহরের উকিল পাড়ার সিনেমা হলে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া সব শো-ই হাউসফুল। সিনেমা হলের কর্ণধার বিশান্ত চৌধুরী বলেন, “সোমবার থেকে শোয়ের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শো হাউসফুল চলছে। টিকিটের চাহিদা থাকাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।” জলপাইগুড়ির কদমতলার মাল্টিপ্লেক্সেও ভিড়ে ঠাসা থাকছে ‘ছপাকে’র শো। এই হলে ১৪৬টি আসন রয়েছে। গত সপ্তাহ থেকেই প্রতিদিন চারটে করে শো চলছে।
আরও পড়ুন: অস্কারে এগিয়ে জোকার
এ দিকে জেএনইউ-এর পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে এবং নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে জলপাইগুড়িতে নাগরিক আন্দোলন চলছেই। পড়ুয়াদের অনেকেই দলবেঁধে যাচ্ছেন সিনেমা দেখতে। তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অর্চিস্মিতা ঘোষ যেমন বললেন, “জেএনএইয়ের পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে দীপিকাকে যেদিন আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ছপাক দেখে আমরা প্রতিবাদ জানাব। তাই করেছি। আমরা বন্ধু-পরিচিত মিলে ৭৫ জন একসঙ্গে টিকিট কেটে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম।” স্কুল শিক্ষক অরিন্দম ভট্টাচার্যের কথায়, “যাঁরা প্রতিবাদী, যাঁরা নাগরিক আন্দোলনকে সমর্থন করেন তাঁদের সকলের এই সিনেমা দেখা উচিত। একটি সিনেমা দেখেও আমরা একসঙ্গে আছি এই বার্তা দেওয়া যেতে পারে।”
সোমবার বিকেলেও জলপাইগুড়িতে নাগরিক সমাজের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল। গত এক সপ্তাহে একাধিকবার নাগরিক আন্দোলন পথে নেমেছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ স্বস্তিশোভন চক্রবর্তী জানালেন দীপিকার সিনেমা না দেখার ফতোয়া শুনে তাঁর স্কুলপড়ুয়া ছেলেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাঁর কথায়, “ফতোয়া দিয়ে কোনও শিল্পকে আটকানো যায় না। জলপাইগুড়িতে এই সিনেমায় ভিড় বাড়ছে শহরের নাগরিক মনন সুস্থই রয়েছে।”