‘জাদুগর’ জিতেন্দ্র কুমার ফাইল চিত্র
অন্ধকার অডিটোরিয়াম, শুধু মঞ্চ থেকে আলো ভেসে আসছে। দর্শকের আসনে বসে থাকা বাচ্চাটির চোখ ছানাবড়া হয়ে যাওয়ার জোগাড়। কখনও কালো টুপির ভিতর থেকে পায়রা বেরিয়ে আসছে, কখনও বা পকেটের ভিতর থেকে ইয়া বড় রুমাল বেরিয়েই চলেছে। মঞ্চে একের পর এক ম্যাজিক দেখিয়ে দর্শকদের মন জিতে নিচ্ছেন জমকালো পোশাক পরা ম্যাজিশিয়ান। ‘জাদুগর’ ছবিটি দেখেও যেন ছোটবেলার স্মৃতি নাড়া দিয়ে উঠল।
গত শুক্রবার অর্থাৎ ১৫ জুলাই নেটফ্লিক্স ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সদ্য মুক্তি পেয়েছে ‘জাদুগর’। এই ছবির পরিচালনা থেকে শুরু করে প্রযোজনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ‘টিভিএফ’ (দ্য ভাইরাল ফিভার)-এর সঙ্গে যুক্ত বড় বড় নাম। ‘পোশাম পা’ প্রযোজনা সংস্থার ‘জাদুগর’ ছবির মাধ্যমেই বড়পর্দায় প্রথম পদার্পণ। সমীর সাক্সেনা এই ছবির পরিচালক। একই সঙ্গে সৌরভ খন্না, অমিত গোলানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রযোজক হিসাবে কাজও করেছেন তিনি। হাস্যরস ও রোম্যান্সে পরিপূর্ণ এই ছবিটির গল্প বুনেছেন স্বয়ং বিশ্বপতি সরকার। রোম্যান্টিক কমেডি ঘরানার সঙ্গে নাটকীয়তার অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন তিনি।
জিতেন্দ্রর বিপরীতে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী আরুশি শর্মা। ফাইল চিত্র
ব্ল্যাকবোর্ডে ভৌতবিজ্ঞানের জটিল সমীকরণ ছেড়ে ফুটবল খেলোয়াড় ও ‘জাদুগর’ জিতেন্দ্র কুমার সত্যিই ভেলকি দেখিয়েছেন। তাঁর শরীরের প্রতিটি ভঙ্গিতে জাদুর পরশ। অভিনেতা জিতেন্দ্র কুমার। দর্শকদের প্রিয় ‘জীতু ভাইয়া’ এই সিনেমায় হয়ে উঠেছেন জাদুকর মীনু। মধ্যপ্রদেশের মীনচ শহরের বাসিন্দা মীনু। ছোটবেলায় কুলফি বিক্রেতা হতে চাওয়া এই ছেলেটি বিশ্বাস করত, ভালবাসা থাকলেই সেখানে ম্যাজিক হয়। তাই হয়তো, তাঁকে ভালবাসা থেকে কেউ আলাদা করতে পারে না। অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা তাঁকে নিয়ে দর্শকদের মনে সত্যিই বিস্ময় তৈরি করেছে।
যে শহরে মীনুর বড় হয়ে ওঠা, তার অলিগলিতে সকলেই ফুটবলপ্রেমী। কিন্তু মীনু ফুটবল থেকে শতহস্ত দূরে। অথচ তাঁর বাবা এই শহরের বিখ্যাত ফুটবলার ছিলেন। ফুটবল না ম্যাজিক, প্রেম না বন্ধুত্ব— দুইয়ের মধ্যে কোনটি বেছে নেবে মীনু? ২ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই সিনেমাটি জুড়ে চরিত্রের মনের মধ্যে চলতে থাকা অন্তর্দ্বন্দ্বগুলিই একের পর এক দৃশ্যের জন্ম দিয়েছে।
জিতেন্দ্র ছাড়াও বাকি অভিনেতাদের অভিনয় বেশ সাবলীল। জিতেন্দ্রর বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে আরুশি শর্মাকে। ইতিমধ্যেই ‘তামাশা’, ‘লভ আজ কাল ২’ ছবিতে কাজ করে নিজের অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। এই ছবিতেও জিতেন্দ্রর সঙ্গে মিষ্টি প্রেমের রসায়ন খুব সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন আরুশি। এ ছাড়াও পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন জাভেদ জাফরী। হাস্যরসের কমতি না থাকলেও জাভেদকে গুরুগম্ভীর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে এই ছবিতে। কমেডি ঘরানার ছবি হিসাবে দেখলে ‘জাদুগর’ সিনেমায় কমিক টাইমিং কম। বেদনাদায়ক দৃশ্যগুলি অতিরঞ্জিত করার ফলে হিতে বিপরীত হয়েছে বলা যায়। মূল গল্প অনুযায়ী, এই ছবিটি আরও স্বল্প দৈর্ঘ্যের হতে পারত। প্রায় তিন ঘণ্টার কাছাকাছি এই সিনেমার গতি খানিকটা মন্থর। তবে, ‘জাদুগর’ সত্যিই মন ভাল করে দেওয়ার মতো একটি ছবি। সিনেমাটি দেখার সময় কখন যে জাদুকর মীনু সকলের অগোচরে ভালবাসা দিয়ে ম্যাজিক করে ফেলবেন, দর্শকরা সত্যিই তা বুঝতে পারবেন না।