ইশা সাহা আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য ছবি শ্যুট করলেন ইশা সাহা।
প্রশ্ন: দিন এগোচ্ছে, ইশা সাহা আরও সুন্দর! ব্যাপারটা কী ?
ইশা: (হেসে ফেলে) ও রকম মনে হচ্ছে। হয়তো কাজের সংখ্যা বাড়ছে। অভিজ্ঞতা বাড়ছে। তারই প্রতিফলন চোখেমুখে পড়ছে। যাকে সৌন্দর্য বলে মনে হচ্ছে।
প্রশ্ন: তাই কি! ইশা বুঝি খুব বেছে কাজ করছেন?
ইশা: আমি আগেও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের উপরে ভরসা করে ছবি বাছতাম। এখনও তাইই বাছি। আসলে এখন ছবির সংখ্যা বেড়েছে। তাই মনে হচ্ছে, ইশা বোধ হয় বেছে বেছে কাজ করছে। তেমনটা একেবারেই না।
প্রশ্ন: সেই তালিকায় এই মুহূর্তে সব চেয়ে বড় কাজ ‘কাছের মানুষ’?
ইশা: একদম। ‘গোলন্দাজ’-এর শ্যুট শেষ হওয়ার পরে দেব যখন ‘কাছের মানুষ’ ছবির জন্য ডাকলেন তখন কিন্তু আগের ছবির ডাবিং-ও হয়নি! তখন প্রযোজক দেব আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন, ডিসেম্বরে কোনও কাজ করছি কিনা। না করলে যেন ওঁর প্রযোজনা সংস্থার জন্য সময় রাখি। দেব নিজেও তখন 'কিশমিশ'-এর শ্যুট করছিলেন। তারই ফাঁকে নতুন ছবির কথা বলেন। বুম্বাদা থাকবেন, জানান। অভিনেতাদের নাম শোনার পরে না বলার প্রশ্ন আর ওঠে? আবার দেবের সঙ্গে কাজ। এ বার সঙ্গে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। শোনার পরে সবটাই স্বপ্নের মতো লেগেছিল।
প্রশ্ন: ছবির নিরিখে কাজের নিরিখে তা হলে এখন ইন্ডাস্ট্রির রিপোর্ট কার্ডে মিমি চক্রবর্তীর পরেই ইশা?
ইশা: কেন এটা বলা হবে? কোথায় মিমি কোথায় আমি! নানারকম মাধ্যমে সুযোগ পাচ্ছি। সিরিজ থেকে বড় পর্দা। করে যাচ্ছি। মিমিও তাঁর মতো করেই এত দিন ধরে কাজ করে আসছেন। সুতরাং, কেউ যদি তুলনা টানেনও সেটা একেবারেই ঠিক নয়। তা ছাড়া, মিমি অভিজ্ঞতায় অনেকটাই এগিয়ে। মিমি কেন ইন্ডাস্ট্রির কারওর সঙ্গেই নিজেকে তুলনা করতে চাই না।
প্রশ্ন: এ বার তবে বলিউড?
ইশা: মু্ম্বই যাওয়ার আলাদা করে কোনও পরিকল্পনা এখনও নেই। ডাক আসছে। অডিশন দিচ্ছি। কিছু বিজ্ঞাপনের ছবি করলাম। এই পর্যন্তই। এখনও ঠিক মতো ব্যাটে বলে হচ্ছে না। ওটা হলেই তখন হয়তো বাকিদের মতো বাংলার সঙ্গে হিন্দিতেও কাজ করব। তবে পুরোপুরি বাংলা ছেড়ে বলিউডে বসতির কোনও ইচ্ছে নেই।
ইশা সাহা আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য ছবি শ্যুট করলেন ইশা সাহা।
প্রশ্ন: ২০২২ কেমন ভাবে সাজিয়েছেন ইশা?
ইশা: ২০২০ আর ২০২১-এর কাজগুলো ২০২২-এ জড়ো হয়েছে। ফলে, চলতি বছরে ব্যস্ত থাকব। মোট ছ’টি ছবি হয়তো মুক্তি পাবে। অনেকে হয়তো ভাববেন, ইশা একাই সব কাজ করে ফেলছে! তা নয়। জমে ছিল। এ বার আস্তে আস্তে সব এক সঙ্গে সামনে আসছে।
প্রশ্ন: নতুন ছবি কী করছেন?
ইশা: 'কাছের মানুষ' ছাড়া ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গুপ্তধন’ সিরিজের তিন নম্বর ছবি করছি। আরও একটা ছবির কথা চলছে। এখনই বলতে পারব না।
প্রশ্ন: এ সবের মধ্যেই বসন্ত পঞ্চমী, বাগদেবীর আরাধনা। ইশার কাছে সরস্বতী পুজো মানে?
ইশা: আমার চোখে দেবী সরস্বতী সবার আগে বিদ্যার দেবী। যে কোনও পেশায় বিদ্যার প্রয়োজন ভীষণ বেশি। আমরা কাউকে ‘ক্লাসি’ তখনই বলি যার চোখে মুখে জ্ঞানের একটা বাড়তি ছটা থাকে। একমাত্র বিদ্যা সেটা দিতে পারে। তা ছাড়া, বাঙালি হিন্দু ঘরে জন্মেছি। দেব-দেবী মানব না তা কি হয়! তবে সরস্বতী পুজো বললেই যে ‘প্রেম প্রেম’ ব্যাপারটা চলে আসে সেটা আর এই বয়সে ঠিক হয় না (হাসি)।
প্রশ্ন: যখন বয়স ছিল তখন নিশ্চয়ই কিছু তো হয়েছে?
ইশা: হয়নি। হওয়ানোর মতো বুকের পাটাই ছিল না! সারা ক্ষণ বাবার ভয়ে জু জু হয়ে থাকতাম। এই বুঝি বাবা দেখে ফেলল। কিংবা পাড়ার কেউ। ফলে, দেদার ঝারি মেরেছি। কিন্তু দুম করে একটা প্রেম করে ফেলব, এমন অঘটন ঘটিয়ে উঠতে সত্যিই পারিনি। একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণিতে যখন পড়ি তখন এই দিনে আলগা একটা ভাললাগা জড়িয়ে থাকত। আলপনা দিচ্ছি। হয়তো যাকে ভাল লাগত সে পাশে পাশে সারা দিন থাকছে। ব্যস, এটুকুই।
‘গোলন্দাজ’-এ দেব এবং ইশা
প্রশ্ন: আধুনিক ইশা জিন্স পরে বীণা নিয়ে জাঙ্ক জুয়েলারিতে সেজে সরস্বতী পুজোয় ছবি তুলল...
ইশা: কেন নয়! দারুণ ভাবনা। আরাম করে শ্যুট করতে পারব। কারণ, এই ধরনের সাজ-পোশাকেই আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আধুনিক সরস্বতী এ রকমই হওয়া উচিত।
প্রশ্ন: এমন ‘অন্য রকম সরস্বতী’ নাকি এসভিএফেরও ভীষণ পছন্দ? ইন্ডাস্ট্রি বলে ইশার হাতে তাই অনেক কাজ...
ইশা: আমিও তেমনই শুনছি ইদানীং। কিন্তু কেরিয়ার বলছে এসভিএফের সঙ্গে সাকুল্যে আমার তিনটি কাজ। 'গুপ্তধন' সিরিজ আর 'গোলন্দাজ'। আর শুনুন, হইচই আর এসভিএফ কিন্তু এক নয়। হইচই মানেই এসভিএফ এটা ভেবে লোকে ভুল করে। আমার ‘ইন্দু’ বা ‘গোরা’ সাহানা দত্তের কাজ। লোকে সেটাও বোঝে না! ফলে, পুরোটাই তাদের সমস্যা। আমি নিশ্চিত, এটা আম জনতা বলে না। যা বলে ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা বলে। এবং তারা ভুল বলে। ইশা একা নিজের জোরেই উঠেছে এটা বোধহয় কেউই মেনে নিতে পারে না। ফলে, কারওর সঙ্গে কাউকে না কাউকে জুড়ে দেয়। এবং এটা কিন্তু অভিনেত্রীদের সম্বন্ধেই বেশি রটে। নায়কদের শুনতে হয় না! কবে যে এই একঘেয়েমি থেকে বেরোবে ইন্ডাস্ট্রি! নতুন চর্চার বিষয় তৈরি হোক এ বার। এক জন পুরুষের মতো এক জন নারীও পারে নিজের জোরে উঠতে। এটাও বুঝুন সবাই। ভাগ্যের জোরে বা মাথার উপরে কারওর হাত থাকার মতো কথাগুলো এ বার বন্ধ হোক।
প্রশ্ন: কখনও কাজ, কখনও একটা সম্পর্ক নিয়ে ইশা চর্চায়। খ্যাতির বিড়ম্বনা সামলান কী করে?
ইশা: কী বলছেন! একটা সম্পর্ক? আমার নাকি চার-চারটে সম্পর্ক! ইশা একজন মেয়ের সঙ্গেও শুনছি প্রেম করছে। এই খবরটা লেখেননি এখনও?
প্রশ্ন: তাই! তাঁরা কে কে?
ইশা: আমিই জানি না। এ সব সংবাদমাধ্যম জানে। তারা প্রচার করে। আমি পড়ি। মজা পাই। তাই নিয়ে হা হা হি হি করি। স্রেফ পাত্তা দিই না। খুব সত্যি কথা বলব? প্রেম কার না করতে ইচ্ছে করে! সেটা জানাতেও সবাই ভালবাসে। কিন্তু আমি সেই সুযোগ পাচ্ছি কই? একে নাকি প্রযোজনা সংস্থার হাত মাথার উপরে! ফলে, হাত ভর্তি কাজ (বলেই হাসি)। দম ফেলার ফুরসৎ নেই। সব সামলে যদিও বা কাউকে মনে ধরল ওমনি ভুলভাল খবর। ব্যস, শুরুর আগেই প্রেম কেঁচে গন্ডুষ। সংবাদমাধ্যমই তো আমার প্রেমের পথের বাধা! এক জনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করি। সঙ্গে সঙ্গে কিচ্ছু না জেনে খবর বেরিয়ে যায়। সে সব পড়ে আমার পছন্দের মানুষ ভাবেন, আমি তো ফাঁকা নেই। তিনিও গুটি গুটি পায়ে ফিরে চলে যান। অগত্যা কাজ করেই চলেছি।