কাজ নিয়ে আড্ডা দিলেন দেবপ্রসাদ।
রাতুল মুখোপাধ্যায়ের ‘ইকির মিকির’। তিগমাংশু ধুলিয়ার ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান মার্ডার’। অভিনয় জীবন শুরু সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘২২শে শ্রাবণ’ দিয়ে। ঝুলিতে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘মেঘে ঢাকা তারা’। ১০ বছর ধরে ক্যামেরার মুখোমুখি হওয়ার পরে ‘খুন’ দেবপ্রসাদ হালদার! খুনি কে?
প্রশ্ন: পরপর দুটো রহস্য-রোমাঞ্চ, কার কাজ আগে করলেন? তিগমাংশু ধুলিয়া না রাতুল মুখোপাধ্যায়?
দেবপ্রসাদ: রাতুলের ‘ইকির মিকির’ অনেক আগে করেছি। তিগমাংশু স্যরের কাজ পরে। ওঁরা দ্রুত কাজ শেষ করে সিরিজ ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান মার্ডার’কে প্রকাশ্যে এনেছেন। রাতুলের ছবি এ বার মুক্তির পথে। তার প্রচার ঝলকও বেরিয়েছে সম্প্রতি। পরপর দুটো রহস্য-রোমাঞ্চধর্মী কাজ কিন্তু কাকতালীয় ভাবেই।
প্রশ্ন: পরিচালনায় প্রথম জন দুঁদে। দ্বিতীয় জন নবীন। কেমন লাগল কাজ করে?
দেবপ্রসাদ: আমি বরাবরই অভিজ্ঞ আর নবীন পরিচালকদের সঙ্গে কাজে অভ্যস্ত। আমার অভিনয় জীবন শুরু সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘২২শে শ্রাবণ’ দিয়ে। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ করেছি। অরিন্দম শীল, মৈনাক ভৌমিকের সঙ্গেও কাজ করেছি। পাশাপাশি, রাতুলের ছবি বা তারও পরে তিগমাংশু স্যরের সঙ্গে কাজ। তিগমাংশু স্যর পরিচালনা, অভিনয়ে দিনযাপন করেন। ওঁকে কাটাছেঁড়া করার স্পর্ধা আমার নেই। আবার নতুন পরিচালক রাতুলও যথেষ্ট প্রতিভাবান। সেটা ওঁর সঙ্গে কাজ করতে করতেই বুঝেছি
প্রশ্ন: ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান মার্ডার’-এর পর রাতুলের ‘ইকির মিকির’-এর প্রচার ঝলক কেমন লাগল?
দেবপ্রসাদ: তুলনা বোধহয় না টানাই ভাল। তবে কোনও ভাবেই ছোট করা যাবে না রাতুলকে। গান ছাড়া একটি ছবি। রহস্য-রোমাঞ্চে ভরপুর। টানটান চিত্রনাট্য। রজতাভ দত্ত, রূপাঞ্জনা মিত্র, সৌরভ দাস আমার সঙ্গে ছিলেন। প্রত্যেকে ভাল অভিনেতা। প্রচার ঝলকেও সেই উত্তেজনা চারিয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে আমি খুশি।
প্রশ্ন: তুল্যমূল্য বিচার চলে আসেনি?
দেবপ্রসাদ: একেবারেই আসেনি। কারণ, আমি যখন ফ্লোরে যাই, নিজেকে পরিচালকের হাতে সঁপে দিই। যা শিখেছি বা শিখছি, সমস্তটা ভুলে গিয়ে। পরিচালকের টুপি বা কুর্সিটাকে ভীষণ সম্মান করি। কারও সঙ্গে কাউকে তুলনা করার কথা মাথাতেই আনি না। নতুন-পুরনো নির্বিশেষে। তিগমাংশু স্যর খুব ভাল অভিনেতাও। ওঁর সঙ্গে আমার চরিত্র, অভিনয় নিয়ে তর্কও করেছি। স্যর বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমার মতামত মেনেও নিয়েছেন। দিনের শেষে আমি কিন্তু পরিচালক যা চাইবেন, সেটাই দেব।
প্রশ্ন: ছবিতে আপনিই তো খুন হয়ে যাবেন...!
দেবপ্রসাদ: (হেসে ফেলে) বলে দিলে তো মজাটাই মাটি! হ্যাঁ, আমি খুন হব। ছবিতে এক বহুতলের আমি নিরাপত্তারক্ষী। আমার খুনের পিছনে রজতাভ এবং রূপাঞ্জনার হাত রয়েছে বলে পুলিশের সন্দেহ। কিন্তু কেন? এটাই ছবির মুখ্য আকর্ষণ। আমাকে ঘিরে গল্প ঘুরবে, এটুকু বলতে পারি।
প্রশ্ন: রজতাভ, রূপাঞ্জনা, সৌরভের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
দেবপ্রসাদ: রূপাঞ্জনা ছাড়া বাকি দুই অভিনেতার সঙ্গে আগেও কাজ করেছি। বিশেষ করে সৌরভের সঙ্গে বেশ কিছু কাজ হয়ে গিয়েছে। ওঁরা তো খুবই ভাল। রূপাঞ্জনাকেও বেশ ভাল লাগল। ছোট পর্দায় অভিনয়ের পরেও সুন্দর করে বড় পর্দায় কাজ করতে পারেন। এই জন্যই রূপাঞ্জনা বড় মাপের অভিনেতা।
প্রশ্ন: সবাই শুধুই নামি পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে চান, আপনি নতুনদেরও প্রাধান্য দেন। এটা কেন?
দেবপ্রসাদ: নতুন নতুন জিনিস শিখব বলে। বড় বড় পরিচালকের সঙ্গে কাজ করলে আমি আমার ১০ বছরের অভিজ্ঞতা ঝালিয়ে নিতে পারি। নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারি। নতুন পরিচালকেরা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে সাহায্য করেন। নতুন ভাবনার কথা জানতে পারি। ওঁরা যেন টাটকা অক্সিজেন। যেটা শিল্পীজীবনে খুবই দরকার। নিজেকে অভিনয় দুনিয়ায় টিকিয়ে রাখতে পুরনোদের পাশাপাশি নতুনদের সঙ্গেও থাকতে হবে।
টলিউড এবং বলিউড, দু’জায়গাতেই কাজ করেছেন দেবপ্রসাদ।
প্রশ্ন: বলিউড-টলিউডের পার্থক্য দেখলেন?
দেবপ্রসাদ: হ্যাঁ, সে তো দেখলামই। খুব সত্যি বলব? বাংলা ইন্ডাস্ট্রি বলে, বলিউডের অনেক টাকা। বড় বাজেট। তাই কাজও বড় মাপের। খাঁটি কথা। কিন্তু যেটা বলে না সেটা হল, ওখানে কাজের প্রতি ভালবাসা আছে। ভীষণ সম্মান আছে। যদিও এ পর্যন্ত একটিমাত্র কাজ করেছি বলিউডে। আরও একটি কাজের কথা চলছে। তবু এই ভালবাসা-সম্মান কিন্তু অনুভব করেছি। ওঁরা জানেন, শিল্পীকে কী ভাবে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয়। ওঁরা ছোট ছোট শিল্পীদেরও ‘স্যর’ সম্বোধন করেন। ফলে, আপনা থেকেই ভাল কাজ করতে ইচ্ছে করে। যতই স্বজনপোষণের কথা উঠুক, ওখানে কেবল আপনার কাজই আপনার মাপকাঠি। টলিউডের মতো তেল-মাখন সহজলভ্য নয়! যা এন্তার মাখিয়ে নিজের কাজ আদায় করা যাবে। সেই কারণেই তিগমাংশু স্যরের সিরিজের দলের সঙ্গে এতটাই ভাল সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল যে, আন্দামানে শ্যুট করার পর আমরা একটি দিন সবাই মিলে সেলুলার জেল দেখতে চলে গিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: দুই ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতাদের কাজের ধারাও নিশ্চয়ই আলাদা?
দেবপ্রসাদ: একদম। ওখানে কাস্টিং ডিরেক্টর আছেন! যিনি চরিত্র অনুযায়ী অভিনেতা বেছে নেন। যার দৌলতে বলিউডে বাংলার অভিনেতারা ইদানীং ডাক পাচ্ছেন। আমাদের এখানে পুরোটাই উল্টো। পরিচালককে সবসময় খুশি করে চলেছেন তাঁর পেটোয়া কিছু অভিনেতা। এতে তিনি খুশি। তাঁরাই কাজ পাচ্ছেন। তিনি সেই চরিত্রে মানান বা না মানান! ফলে, বাংলায় কাস্টিং ডিরেক্টর শব্দটাই কেউ চেনেন না! এ ভাবে যদিও বেশি দিন নিজেকে প্রমাণ করা যায় না। একে আর যাই হোক পেশাদারিত্বও বলা যায় না। এই কারণেই বাকি গোটা বিশ্ব যেভাবে অভিনয় নিয়ে ভাবছে, সেই পথে বলিউড হাঁটতে শুরু করেছে। বাংলা এখনও পিছিয়ে। কী করা যাবে! যস্মিন দেশে যদাচার!
প্রশ্ন: টলিউডের এই ‘শেখা’র ইচ্ছে নেই বলছেন? তাই বাংলা ফাঁকা হয়ে বলিউডে ছুটছেন সবাই?
দেবপ্রসাদ: একেবারেই তাই। এখানকার মানুষেরা একটু শিখলেই অনেকটা শিখে ফেলেছেন মনে করেন। দেখুন, কাজ করতে করতে সবাই কিছু না কিছু শেখেন। সেটাই নিয়ম। কিন্তু শেখার তো শেষ নেই! সেই অভ্যেসটাই আমাদের খুব কম। ফলে, জাহির করে ফেলি বেশি। ১০ বছর পরেও ক্যামেরার মুখোমুখি হতে আমার খুব ভয় করে। নতুন পরিচালকদের থেকে আমি হয়তো বেশিই জানি। তবু কিচ্ছু জানি না এটা ভেবে তাঁদের দৃষ্টি দিয়ে তাঁদের কাজ, আমার কাজ দেখার চেষ্টা করি। এটা অতি বিনয় নয়। একে বলে শেখার চেষ্টা। বলিউডে প্রত্যেক তারকার মধ্যে এই ভাব প্রবল। তাই তাঁরা এগিয়ে। সবার আগে অভিনেতাকে ভাবতে হবে, আমি কিচ্ছু জানি না। টলিউডে সবাই স্ব-ঘোষিত তারকা। তাঁরা সব জানেন (হাসি)। যত দিন শিখতে পারবেন, তত দিন আপনি বেঁচে আছেন। নইলে আপনি মৃত!
প্রশ্ন: আপনার শেখার ইচ্ছে প্রবল, আগামী দিনে বলিউড ঠিকানা?
দেবপ্রসাদ: যেখানে ভাল কাজ হবে, সেখানেই আমি থাকার চেষ্টা করব। সেটা টলিউড, বলিউড বা যেখানেই হোক। আমার কাছে সিনেমার কোনও ভাষা নেই। যে ভাষায় কাজের সুযোগ পাব, সেই ভাষাতেই কাজ করব। এ ভাবেই শিখতে শিখতে চলব।
প্রশ্ন: পরিচালনায় আসবেন?
দেবপ্রসাদ: না-ও আসতে পারি। ভাল ভাবে না শিখতে পারলে আসব না। পরিচালনা করা এত সহজ নয়। যদিও প্রায় সবাই এখন পরিচালক। আমি সেই দল আরও ভারী করতে রাজি নই।
প্রশ্ন: হয় রহস্য-রোমাঞ্চ নয় অন্য ধারার ছবি? তথাকথিত বাণিজ্যিক বা প্রেমের ছবি করবেন না?
দেবপ্রসাদ: পর্দায় প্রেম করতে কে না ভালবাসেন! (অট্টহাসি)। আমিও বাসি। সুযোগ পেলে অবশ্যই করব। তবে আমার ব্যক্তিগত পছন্দ এই বিশেষ ধারার কাজ। আরও বিশদে বললে যে চরিত্র ভাবায়, মস্তিষ্ক দিয়ে বুঝতে হয়, আমি সেই ধরনের কাজ করতে বেশি আগ্রহী। যেখানে নিজেকে নিংড়ে দিতে পারব। আমার অভিনয় সত্ত্বা বেঁচে থাকার রসদ পাবে। সাধারণ চরিত্রাভিনেতা হয়ে থাকতে রাজি নই।
প্রশ্ন: ব্যক্তিজীবনে প্রেম আছে?
দেবপ্রসাদ: আছে। আমার স্ত্রীর সঙ্গে। খুব বেরসিক কথা হয়ে গেল, তাই না? (হো হো হাসি)