মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যযগয়ে সাধুবাদ জানিয়েছেন লোপমুদ্রা, জিৎ, ইমন সহ অনেকেই।
২০২২ ভরে উঠুক গানে গানে। সম্ভবত এই ভাবনা থেকেই ইংরেজি নতুন বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক বাংলা সঙ্গীত উৎসব। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, রেড রোডে বসবে গানের জলসা। শোনা যাবে আধুনিক থেকে টপ্পা, বাউল, সব ধরনের বাংলা গান। অনুষ্ঠানের থিম ‘গাইবে লোকাল, শুনবে গ্লোবাল’। দর্শক-শ্রোতা এবং দেশ-বিদেশের প্রথম সারির সঙ্গীতকারেরা সামনে বসে শুনবেন সেই গান। অতিমারি, লকডাউনে দীর্ঘ দিন বন্ধ গানের মঞ্চানুষ্ঠান। স্বাভাবিক ভাবেই শিল্পী থেকে যন্ত্রশিল্পীরা তাঁদের প্রিয় দর্শক-শ্রোতাদের থেকে দূরে। বন্ধ উপার্জনও। বিপর্যস্ত সঙ্গীত শিল্প।
শিল্পী এবং শিল্পকে চাঙ্গা করতেই কি মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ? জানতে আনন্দবাজার অনলাইনের যোগাযোগ করেছিল লোপামুদ্রা মিত্র, ইমন চক্রবর্তী, রণজয় ভট্টাচার্য, অর্কদীপ মিশ্র, মনোময় ভট্টাচার্য, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কী বলছেন তাঁরা?
আনন্দবাজার অনলাইনের থেকে খবরটি প্রথম জেনেছেন লোপামুদ্রা মিত্র। ফোনেই উচ্ছ্বাস শোনা গেল তাঁর গলায়। জানালেন, ‘‘বহু দিন পরে বাংলা গানের শিল্পীদের জন্য এত ভাল খবর শুনলাম। মন ভরে গেল। অনুষ্ঠানের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকব। বাউল গান আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলনায় জনপ্রিয় বাকি ধারার গানের থেকে। বাংলা গানের সব ধারার মিলন এক মঞ্চে মানে বাংলার সংস্কৃতি আরও এক বার বন্দিত হবে বিশ্বে।’’ গায়িকা এই পদক্ষেপের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চে এই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী ইমন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সামনে বসে যখন ঘোষণা করলেন ভীষণ আনন্দ হয়েছিল। অনুষ্ঠান বাস্তবায়িত হলে বাংলা সঙ্গীত জগতের পক্ষে বিশেষ উপকার হবে।’’ একই সঙ্গে তাঁর মত, দেশ-বিদেশের প্রথ সঙ্গীতকারেরা আমন্ত্রিত থাকবেন। ফলে, প্রত্যেক শিল্পীকে ভাল রকম প্রস্তুতি নিয়ে আসরে আসতে হবে।
মমতার এই উদ্যোগের কথা আনন্দবাজার অনলাইন থেকে প্রথম জেনেছেন মনোময় ভট্টাচার্যও। তাঁর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই শিল্পীদের পাশে। শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক। বিশিষ্ট শিল্পীর দাবি, এতে বাংলা গান যেমন সমৃদ্ধ হবে তেমনি নতুন করে মঞ্চানুষ্ঠানের পক্ষেও যেন সবুজ সঙ্কেত দিতে চলেছেন মমতা। তাঁর আশা, মুখ্যমন্ত্রী আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের পর শিল্পীরা হয়তো আগের মতো অনুষ্ঠান করতে আগ্রহী হবেন। দর্শক-শ্রোতারাও গান শুনতে আসার ভরসা পাবেন।
‘সারেগামাপা’ বিজয়ী অর্কদীপ মিশ্র এবং সুরকার-শিল্পী রণজয় ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। তাঁদের যুক্তি, আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হচ্ছে। বছরের শেষে এবং নতুন বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বইমেলা এবং কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। তা বলে গানমেলা বা গানের উৎসব বন্ধ থাকবে কেন? উভয়েরই সাফ জবাব, মুখ্যমন্ত্রী পাশে থাকলে বাংলা গান এবং শিল্পীরাও আর এর ফলে অবহেলিত থাকবে না।
এই পদক্ষেপে উচ্ছ্বসিত জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও। সাধুবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। বলেছেন, ‘‘দিদি সব সময়েই শিল্পী এবং শিল্পের পাশে। তিনি যা করছেন নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তে করছেন। টানা দু’বছর খুব খারাপ অবস্থা গিয়েছে বাংলা গানের শিল্পীদের। মঞ্চানুষ্ঠানের ছাড়পত্র মিললেও প্রশাসন বাধা দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপ সে ক্ষেত্রে দিশা দেখাবে।’’ একই সঙ্গে সুরকার-শিল্পীর আন্তরিক অনুরোধ, প্রশাসনও যদি মুখ্যমন্ত্রীর এই ইতিবাচক পদক্ষেপ অনুসরণ করে তা হলেই বাংলা গানের দুনিয়ায় আবার জোয়ার আসবে। শিল্পীদের আর অনাহারে, অর্ধ্বাহারে দিন কাটাতে হবে না।