গ্যালাদ্রিয়েলের কাহিনির সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে চলে হারফুর্ট, ডোয়ার্ফ, এল্ভস এবং মানুষের গল্প, তাদের বেঁচে থাকার কাহিনি। ছবি: সংগৃহীত
‘মাইন!’, ‘মাই প্রেসেস!’— বুকের কাছে আংটি নিয়ে ফিসফিস করে বলে ওঠে গলাম। এই আংটি আঙুলের ভিতর গলালেই নাকি অদৃশ্য হয়ে যায় মানুষ। সোনালি রঙের এই আংটিকে ঘিরেই ‘মিডল আর্থ’-এ কত সংঘর্ষ, কত যুদ্ধ!
ড্রাগন, কথা বলা গাছ থেকে ভয়ানক সব জন্তু— সব কিছু মিলিয়েই ‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস’, ‘দ্য হবিট’-এর মতো দু-দুটো ফিল্ম সিরিজ দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিল। প্রায় এক দশক পর আবার সেই কাহিনি নিয়ে ফিরেছে ‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস: দ্য রিংস অব পাওয়ার’। কিন্তু এ বার আর ফিল্ম না। ওয়েব সিরিজ হিসাবে। ২ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওজ-এ মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় দু’কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ সিরিজটি দেখে ফেলেছেন। যদিও এখনও পর্যন্ত মাত্র দু’টি পর্বই মুক্তি পেয়েছে। জে আর আর টোকিয়েনের লেখা উপন্যাস পর্দায় ঠিক কতটা জীবন্ত হয়ে উঠল? ‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস’-এর সেই বিলবো ব্যাগিন্স, ফ্রোডো ব্যাগিন্স, গ্যান্ডাল্ফকে কি এই সিরিজেও দেখা যাবে? দর্শকের মনে অনেক প্রশ্ন, অনেক উৎসাহ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে এই সিরিজের অপেক্ষায় ছিলেন।
গ্যালাদ্রিয়েলের চরিত্রে মরফিড ক্লার্ক। ছবি: সংগৃহীত
‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস’-এর গ্যালাদ্রিয়েল চরিত্রটির কথা মনে পড়ে? সেই গ্যালাদ্রিয়েলই এই গল্পের কথক। ‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস’ গল্পের প্রায় হাজার বছর আগেকার ঘটনা। মিডল আর্থে তখন যুদ্ধ শেষ, ঘোষণা করেছেন হাই-কিং। কিন্তু গ্যালাদ্রিয়েলের মনে হয়, তাদের শত্রু মারা যায়নি, বরং সে অপেক্ষা করছে, নিজের শক্তি সঞ্চয় করছে। সঠিক সময় বুঝে আবার ‘মিডল আর্থ’-এ আক্রমণ করবে। সেই শত্রু হল সরোন। সরোনকে খুঁজতে গিয়েই গ্যালাদ্রিয়েলের দাদা মারা যায়। দাদার অপূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতেই গ্যালাদ্রিয়েল প্রতিজ্ঞা নেয়, সরোনকে সে খুঁজে বার করবে।
এক দিকে যেমন গ্যালাদ্রিয়েলের কাহিনি এগিয়ে চলে, একই সঙ্গে চলে হারফুর্ট, ডোয়ার্ফ, এল্ভস এবং মানুষের গল্প, তাদের বেঁচে থাকার কাহিনি। গল্প যত এগিয়ে যায়, ততই এক একটি চরিত্রের সঙ্গে আলাপ হতে থাকে। আগের গল্পগুলিতে যে পরিমাণ কৌতুকের ছোঁয়া ছিল, এই সিরিজে তা প্রায় নেই বললেই চলে। তবে তা না থাকলেও এই সিরিজের গল্পের বুনন বেশ ভাল। সকলেই নিজেদের চরিত্রে যথাযথ অভিনয়ও করেছেন। মরফিড ক্লার্কের (গ্যালাদ্রিয়েল) পাশাপাশি রবার্ট আরামায়ো (এলরন্ড), মার্কেলা কাভেনাঘ (নোরি) এবং ওয়েন আর্থারের (প্রিন্স ডুরিন) অভিনয় বিশেষ ভাবে মন কেড়েছে।
নোরির চরিত্রে মার্কেলা কাভেনাঘ। ছবি: সংগৃহীত
গল্পের চরিত্র সংখ্যা এত বেশি যে, তার উপর ভিত্তি করে গল্প বুনতে বেশ সময় নিতে হয়েছে। গল্পের গতি একটু মন্থর বলেও মনে হল। কিন্তু তার খামতি পূরণ করে দিয়েছে সিরিজের অসাধারণ ভিজ্যুয়াল এফেক্ট। এই সিরিজের চিত্রগ্রহণ ডিজিটাল কারসাজি আলাদা ভাবে মন কাড়তে বাধ্য।
প্রথম দুটি পর্বে গল্পের বুননের উপর বেশি নজর দেওয়া হয়েছে বলেই হয়তো এই সিরিজে আগের গল্পগুলোর মতো টানটান উত্তেজনা ছিল না। আশা করা যায়, পরবর্তী পর্বগুলি রোমাঞ্চে ভরপুর হবে। আগের ছবিগুলিতে প্রতিটা চরিত্রের মধ্যে সম্পর্কের রসায়ন মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই সিরিজের ক্ষেত্রে তা কমই বলা যেতে পারে। এত কম সময়ে এতগুলো চরিত্রের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় করাতে গিয়ে চরিত্রের পারস্পরিক সম্পর্কের রসায়ন পর্দায় ফুটে ওঠেনি।
প্রথম পর্ব দুটি দেখে এটুকু ধারণা পাওয়া যায় যে, এই সিরিজটি নতুন রূপে দর্শকের সামনে এসেছে। তাই আগের ছবিগুলোর সঙ্গে এর তুলনা না করাই ভাল। এখন এটাই দেখার, পরবর্তী পর্বগুলি কী চমক নিয়ে আসে।