'বিগ বস'-এর দামামা বেজে গিয়েছে। তৈরি প্রতিযোগীরা। এরই মধ্যে যে খবরে বিনোদন জগৎ উত্তাল, তা হল, বিগ বসে নাকি এ বার প্রতিযোগীর আসনে রয়েছেন 'রাধে মা'। সেই রাধে মা্ যিনি নিজেকে মা দুর্গার রূপ বলে দাবি করেন। যাঁর ভক্ত সংখ্যা নেহাতই কম নয়। শুধু ভক্ত সংখ্যাই সুবিশাল, তা নয়। একই সঙ্গে তাঁকে ঘিরে বিতর্কও প্রচুর। কখনও বলিউড অভিনেত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আবার কখনও বা বিদেশের মাটিতে স্বল্প পোশাকে নাচ। এখানেই শেষ নয়, আশ্রমের আড়ালে তাঁর বিরুদ্ধে মধুচক্র চালানোর অভিযোগও উঠেছিল কয়েক বছর আগে।
সূত্র বলছে, এ বারের সিজনে রাধে মা-ই নাকি সবচেয়ে দামি প্রতিযোগী। প্রতি সপ্তাহে তাঁর প্রাপ্য পারিশ্রমিক জানলে অবাক হবেন আপনিও। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক, এক সময় দর্জির কাজ করা রাধে মা'র ধর্মগুরু হয়ে ওঠার নেপথ্যের কাহিনি।
রাধে মা'র প্রকৃত নাম সুখবিন্দর কউর। পঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলায় এক গ্রামে তিনি জন্ম নেন। ক্লাস ফোর অবধি পড়াশোনা। মাত্র ১৭ বছর বয়েসেই বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। তাঁর ঠিক তিন বছরের মধ্যেই দুই সন্তানের মা হন তিনি।
নিজের শ্বশুরবাড়ি সম্পর্কে এক বার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, তাঁর স্বামী পেশায় ছিলেন মিষ্টি বিক্রেতা। নিম্নবিত্ত পরিবার। অভাবের সংসার হলেও শ্বশুরবাড়িতে বেশ ভালই দিন গুজরান হচ্ছিল তাঁর। আচমকাই ব্যবসায় বড় ধস। কাজের খোঁজে স্বামী পাড়ি দেন বিদেশে। অভাবের তাড়নায় রাধে মা বেছে নেন নতুন পেশা। সেলাইয়ের কাজ করতে শুরু করেন তিনি।
এর পর ২৩ বছর বয়সে রাধে মা ওরফে সুখবিন্দর কউর ধর্মগুরু রামদীন দাসের সংস্পর্শে আসেন। রামদীন দাসের আশ্রম পরমহংস ডেরাই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা হয়ে ওঠে। রামদীন দাসই সুখবিন্দর কউরকে প্রথম 'রাধে মা' নামে ভূষিত করেন। রাধে মা অর্থাৎ রাধার অংশ, ক্রমে এ ভাবেই পরিচিতি পেতে থাকেন পঞ্জাবের এক প্রত্যন্ত গ্রামের বধূ সুখবিন্দর।
নাম-যশ ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগল না। একের পর এক বাড়তে থাকল ভক্তসংখ্যাও। ভক্তদের বিশ্বাস, তিনি মা দুর্গার অংশ। শক্তির প্রতীক লাল রং। আর সে কারণেই রাধে মা'কে লাল ছাড়া আর অন্য কোনও রঙের পোশাকে আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি বললেই চলে। পঞ্জাবের পর্ব মিটিয়ে রাধে মা চলে আসেন মুম্বইতে। সেখানেই বরিভালিতে তাঁর নতুন আস্তানা হয় ব্যবসায়ী সঞ্জীব গুপ্তের বাড়িতে।
সঙ্গে পেয়ে যান দু'জন অনুচরকেও। 'ছোটি মা' এবং 'তালি বাবা'। শুধু সাধারণ মানুষই নন, মুম্বইয়ের নামজাদা সেলিব্রিটিরাও রাধে মা'র শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে শুরু করেন ক্রমশ। এঁদের মধ্যে রয়েছেন, পরিচালক সুভাষ ঘাই, অভিনেতা রবি কিষণ সহ অনেকেই।
তবে ২০১৫ সাল থেকেই রাধে মা'কে জড়িয়ে প্রকাশ্যে আসতে থাকে একের পর এক বিতর্ক। মুম্বইয়ের বরিভালিতে ব্যবসায়ী সঞ্জীব গুপ্তের বাড়িতেই নিজের আশ্রম খোলেন রাধে মা। আর এই সঞ্জীবেরই পুত্রবধু নিক্কি রাধে মা'র বিরুদ্ধে তাঁর শ্বশুর-শাশুড়িকে উস্কানোর এবং পণ নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টির অভিযোগ আনেন। শুধু তাই নয়, নিক্কি আরও দাবি করেন, রাধে মা'র ভক্তরা নাকি তাঁকে শারীরিক নির্যাতনও করেছেন।
নিক্কির অভিযোগের ভিত্তিতে মুম্বই পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারি করলেও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজয় সাম্পলা পাশে দাঁড়ান রাধে মা'র। প্রকাশ্যেই রাধে মা'র হয়ে তিনি বলেন, মিডিয়া ইচ্ছাকৃত ভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। রাধে মা'র জীবনে কোনও কালো দাগ নেই।
শুধু নিক্কিই নয় মডেল-অভিনেত্রী আরশি খানও ওই একই বছরে রাধে মা'র বিরুদ্ধে থানায় গুরুতর অভিযোগ করেন। আরশি তাঁর বয়ানে দাবি করেন, আশ্রমের আড়ালে রাধে মা এবং তাঁর অনুগামীরা মধুচক্র চালান। তিনি আরও দাবি করেন, রাধে মা'র ঘনিষ্ঠরা নাকি আরশিকে এই পেশায় আসার জন্য প্রস্তাবও দিয়েছেন। এই নিয়ে বেশ কয়েক দিন মিডিয়ায় তোলপাড় হলেও পড়ে তা ক্রমশ চাপা পড়ে যায়।
এর ঠিক দু'বছর পরেই আবারও রাধে মা'র বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ আনেন অভিনেত্রী ডলি বিন্দ্রা। ডলি এক সময় রাধে মা'র একান্ত অনুগামী ছিলেন। ডলি পুলিশে অভিযোগ করেন, আশ্রমে রাধে মা এবং তাঁর অনুগামীরা নাকি তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছেন। যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন ওই স্বঘোষিত ধর্মগুরু।
২০১৫ সালে রাধে মা'র ওয়েবসাইট হঠাৎই হ্যাক হয়ে যায়। হ্যাকার ছড়িয়ে দেয় রাধে মা'র বেশ কিছু নতুন রূপের ছবি। শাড়ি নয়, রাধে মা পরেছেন মিনি স্কাররট। মাথায় টুপি। একেবারে অন্য অবতারে। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব ভাইরালও হয়েছিল। শুধু তাই নয় এক পুরুষ অনুগামীর সঙ্গে রাধে মা'র ঘনিষ্ঠ ছবি নিয়েও এক সময়ু উত্তাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া।
সেই রাধে মা'ই এ বার বিগ বসে। সূত্রের খবর, এই সিজনে প্রতি সপ্তাহে তাঁর প্রাপ্য পারিশ্রমিক ২৫ লক্ষ টাকা, যা তাঁকে বানিয়ে দিয়েছে এই সিজনের সবচেয়ে দামি প্রতিযোগী। সেরার শিরোপা কি উঠবে তাঁর মাথায়? তা অবশ্য বলবে সময়।