বাবার সঙ্গে ইমন।
দিনের শেষে বাবাকে নিয়ে লিখতে বসেছি। কিন্তু বুঝে উঠতে পারছি না কী লিখব। আমার কাছে বাবা আর প্রিয় বন্ধু সমার্থক। ছোট বেলায় মা খুব কড়া ছিল। শাসন করত। কিন্তু বাবাই ছিল বন্ধুর মতো। কখনও ভয় পাইনি বাবাইকে। উল্টে আমার সব দুষ্টুমিতেই আমার সঙ্গী ছিল বাবাই।
ছোট বেলায় মা বাড়িতে না থাকলে বই পত্র শিকেয় তুলে টিভির সামনে বসে পড়তাম। আমি আর বাবাই একসঙ্গে বসে ফুটবল ম্যাচ দেখতাম। মায়ের ফেরার সময় আবার পড়তে বসে যেতাম। তখন বাবাই চুপটি করে আমার সামনে বসে থাকত। মা ভাবত, পড়াশোনার সময় বাবাই আমাকে পাহারা দিচ্ছে। এ রকম যে কত কাণ্ড আমরা করেছি!
আমার বাবা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী ছিলেন। খুব মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। কিন্তু সারা জীবন আমার জন্য সেরা জিনিসগুলোই নিয়ে এসেছে বাবাই। সব থেকে ভাল খাতাগুলোয় লিখেছি, সব থেকে উন্নত মানের রেকর্ডারটা ব্যবহার করেছি। অভাবের অর্থটাই কখনও বুঝিনি ওই মানুষটার জন্য। আমার গান শেখার পিছনে মায়ের অবদানের কথা অনেকবার বলেছি। কিন্তু বাবাইয়ের উৎসাহ কোনও অংশে কম ছিল না। আমার গান, আমার সুর, সব ওই মানুষ দুটোর জন্যই।
মেয়েদের যে কাজগুলো সচরাচর মায়েরা করে দেন, আমার ক্ষেত্রে সেগুলো বাবাই করে দিত। আমাকে শাড়ি পরিয়ে দেওয়া, সুন্দর করে চুল বেঁধে দেওয়া— এ সব কিছুই ছিল বাবাইয়ের দায়িত্ব! জীবনে প্রথম যে দিন ডেটে গিয়েছিলাম, সে দিন বাবাই আমাকে পৌঁছে দিয়েছিল। আমার কোনও প্রেমিককেই যদিও সহ্য করতে পারত না সে। ভাবত, পাছে মেয়েকে ছিনিয়ে নিল! আমার উপর নজরদারি করতে ইদানিং ফেসবুকেও অ্যাকাউন্ট খুলেছে। কোথায় যাচ্ছি, কী করছি, সব খবর থাকে তার কাছে।
বাবাই আমাকে কখনও দূরে চলে যেতে দিতে চায়নি। সব সময় আগলে রাখতে চেয়েছে নিজের কাছে। ২০১৪ সালে মা চলে যাওয়ার পর থেকে আমরাই একে অপরের সম্বল। আমার মনে আছে, নীলাঞ্জনকে বিয়ে করার কথা যখন জানিয়েছিলাম, তখনও বিশেষ খুশি হয়নি বাবাই। কিন্তু ওর সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর আর কোনও আপত্তি ছিল না আমার প্রিয় বন্ধুটির। আসলে নীলাঞ্জনও অনেকটা বাবার মতোই। অনেক মিল আছে আমার প্রিয় দুই মানুষের।
বাবাই বা আমি, কেউই আজ পর্যন্ত নিজেদের অনুভূতিগুলো ঠিক করে প্রকাশ করে উঠেতে পারিনি। আজ পিতৃদিবস। বাবাইকে নিয়ে এত কথা লিখছি। কিন্তু বাবাইয়ের সামনে গিয়ে একবারও ‘হ্যাপি ফাদারস ডে’ বলতে পারিনি। কিন্তু বাবাই তো আমার সব চেয়ে প্রিয় বন্ধু। আমার মন বুঝতে কোনও শব্দের দরকার নেই তার। তবু এই লেখার মাধ্যমেই বলছি, তোমায় আমি খুব ভালবাসি বাবাই। হ্যাপি ফাদারস ডে।