কাঞ্চন মল্লিক
গত এক সপ্তাহ ধরে সাংবাদমাধ্যমে চোখ রাখতে পারছি না। নোংরামি, কাদা ছোড়াছুড়ির জঘন্যতম পর্যায় চলছে। আমি চুপচাপ দেখে গিয়েছি। জলঘোলা করতে চাইনি। কিন্তু আমি না চাইলে কী হবে! পিঙ্কি চেয়েছে। আর চেয়েছে বলেই সংবাদমাধ্যমে যা ইচ্ছে বলে যাচ্ছে আমার বিরুদ্ধে। আমার সঙ্গে শ্রীময়ী চট্টরাজকে জড়িয়ে। এই পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি চিনি না। যাঁকে আমি ৯ বছর আগে বিয়ে করেছিলাম। এবং যে মানুষ আমার ৮ বছরের একমাত্র ছেলের মা! কেন এ রকম করছে পিঙ্কি? জানি না। তবে ওর ব্যবহার দেখে একটা প্রশ্ন বার বার উঠে আসছে, এত দিন পরে কেন মুখ খুলল পিঙ্কি? কেন আরও আগে নয়? কেন বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিককে নিয়ে হঠাৎ ওর এত ক্ষোভ? অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিককে নিয়ে তো কোনও দিন টুঁ শব্দ করেনি! কেন করেনি?
অনেকেই পাল্টা জানতে চাইছেন, এটা কি তা হলে উদ্দেশ্য প্রণোদিত? পুরোটাই রাজনৈতিক চক্রান্ত? আমি বলব, আমি জানি না। তবে এ বার আমারও কিছু বলার আছে। আপনারা কেউ জানেন, বিয়ের পরে মাত্র ২০ দিন সংসার করে পিঙ্কি বাবার বাড়িতে চলে গিয়েছেন? কেন গিয়েছেন? আমার মায়ের সঙ্গে নাকি থাকা যায় না! আমি মেনে নিয়েছি। আমার মা এর পর গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। ২ বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছেন। একটা সময় চির বিদায় নিয়েছেন। গত বছর আমার বাবাও চলে গিয়েছেন। পিঙ্কিকে কিন্তু পাশে পাইনি। তাই নিয়েও আমার কোনও অভিযোগ নেই। আমি কোনও দিন মুখও খুলিনি এই নিয়ে কোথাও। তাই আজ এক তরফা পিঙ্কির কথা শুনে অনেকেই আমায় নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছেন।
ঠিক একই ভাবে আমি অবাক হয়েছি শনিবার পিঙ্কির ব্যবহার দেখে। সংবাদমাধ্যমে খবরের পর খবর দেখতে দেখতে বিভ্রান্ত আমি পিঙ্কিকে ফোনে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, মুখোমুখি বসে কথা বল। সরাসরি আলোচনা করলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। পিঙ্কি সেই অনুরোধ রাখেনি। এর পরেই আমি ওর সঙ্গে কথা বলার জন্য চেতলা রওনা হই। সঙ্গে শ্রীময়ী ছিলেন। সেখানে গিয়ে শুনি, নিউ আলিপুরে আমার দিদিশাশুড়ি সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে পিঙ্কি ওর দাদাকে নিয়ে গিয়েছে। আমি সেখানেও পৌঁছোই। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের কাছে গিয়ে জানতে পারি, ছেলেকে আনতে ওরা আবার চেতলায় গিয়েছে। প্রবীণ অভিনেত্রীও জানান, সব শুনেছেন তিনি। মুখোমুখি কথা বললে সব সমস্যা মিটে যায়। সেটা করলেই তো হয়!
এর পরেই রাস্তায় পিঙ্কির সঙ্গে দেখা। তখনও আমি ভাল করে বলি, তোমার যা অভিযোগ মুখোমুখি বসে জানাও। উত্তরে পিঙ্কি চেঁচিয়ে ওঠে! শ্রীময়ী হাতজোড় করে বলে, পিঙ্কিদি কথা বল আমার সঙ্গে। যা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে চল মিটিয়ে নিই। সে কথা শুনে শ্রীময়ীর দিকে তেড়ে আসেন পিঙ্কির দাদা। আমি তখন বাধা দিয়ে বলেছিলাম, অচেনা এক জন মহিলার দিকে এ ভাবে কেন তেড়ে যাচ্ছেন? পিঙ্কির চিৎকারে ততক্ষণে লোক জড়ো হয়ে গিয়েছে। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার।
এ বার আসি শ্রীময়ী চট্টরাজের কথায়। শ্রীময়ীকে আমি অভিনয়সূত্রে চিনি। আমার সঙ্গে থিয়েটার কর্মশালায় যোগ দিয়ে অভিনয় শিখেছে, এই পর্যন্ত। বলার মতো কোনও সম্পর্কই ওঁর সঙ্গে আমার ছিল না। ফলে, বিয়ের পরেও ওঁর নাম আমার মুখে পিঙ্কি শোনেনি। তা বলে পিঙ্কি ওঁকে চেনে না তা কিন্তু নয়। আমার সঙ্গে শ্রীময়ী পিঙ্কির চেতলার বাড়িতে গিয়েছেন। কথা হয়েছে ওঁদের মধ্যে অনেক বার। তার পরেও পিঙ্কি যে কথা বলছে, যে ধরনের আচরণ করছে শ্রীময়ীর সঙ্গে অবাক হচ্ছি আমিও। কল শো-এ মায়াপুরে আমরা গিয়েছিলাম। সেই নিয়েও এখন তোলপাড় হচ্ছে। সবার একটাই প্রশ্ন, ২৫ বছর এত অভিনেত্রীর সঙ্গে অভিনয়ের পর হঠাৎ আনকোরা এক জন অভিনেত্রীকে নিয়ে কেন কাঞ্চন মল্লিকের নামে মিথ্যে রটনা?
বিশ্বাস করুন, আমিও জানি না। তবে আমায় যখন আইনি পথ দেখানো হয়েছে এ বার আমিও সেই পথেই হাঁটব। আমিও আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েই আগামী দিনে মুখ খুলব। পদক্ষেপও করব সেই মতো