Raghubir Yadav Interview

জনপ্রিয়তা চাই না, অতিরিক্ত টাকা মানুষকে ধ্বংস করে দেয়: রঘুবীর যাদব

পরিচালক ইন্দ্রনীল ঘোষের নতুন ছবি ‘সিনিওলচু’। ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনেতা রঘুবীর যাদব। ছবির ঘোষণার মঞ্চে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি অভিনেতা।

Advertisement

উৎসা হাজরা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২২ ১০:০১
Share:

আনন্দবাজার অনলাইনে খোলামেলা আড্ডায় রঘুবীর। ফাইল চিত্র।

প্রশ্ন: বাংলায় প্রশ্ন করব আপনাকে?

Advertisement

রঘুবীর: হ্যাঁ, একদম। কলকাতায় বসে আছি। ভাষাটা আমি পুরোই বুঝতে পারি। বলতে পারি খুব কম। তবে ভাষাটা শেখার সত্যিই ইচ্ছা আছে।

প্রশ্ন: কত দিন পর কলকাতায় আসা হল?

Advertisement

রঘুবীর: খুব বেশি দিন হয়নি। এক বছর আগেই ‘মনোহর পাণ্ডে’ ছবির শুটিং সেরে গিয়েছি। এই শহরের সব কিছু আমার প্রিয়। দর্শকও খুব সৎ। কোনও কিছু ভাল না লাগলে মুখের উপর সত্যিটা বলে দেয়। ভাল লাগলে ভাল। মন্দ হলে মন্দ। থিয়েটারের সময় থেকে যোগ কলকাতার সঙ্গে।

প্রশ্ন: খারাপ শুনতে ভাল লাগে?

রঘুবীর: হ্যাঁ,খুব ভাল লাগে। কারণ খারাপ না শুনলে ভালটা শুনব কী ভাবে? খারাপ শুনলেই তো ভাল করার ইচ্ছাটা বেড়ে যায়।

প্রশ্ন: প্রায় ৩৫ বছরের কেরিয়ার। ১৯৯৬ সালে ‘দামু’র মতো ছবি। এত বছরে কী কী পরিবর্তন লক্ষ করলেন?

রঘুবীর: ১৯৯৬ সালে যে সময়টায় আমি ‘দামু’ সিনেমায় অভিনয় করি, তখনকার ছবির ধারা আর এখনের মধ্যে আকাশপাতাল পার্থক্য। বাণিজ্যিক মশলা ছবিতে গা ভাসিয়ে অনেকটাই অবনতি হয় ভারতীয় সিনেমার। এটা আমার ধারণা। চারটে ছবি থেকে গল্প নিয়ে একটা ছবি তৈরি হচ্ছে। নকল করা হচ্ছে। যার প্রবণতা প্রচণ্ড বেড়ে গিয়েছিল। তা সত্যিই ক্ষতিকর এই ইন্ডাস্ট্রির জন্য। সকলের বক্তব্য দর্শক নাকি এমনটাই চান। কিন্তু এর আগেও তো দর্শক ছিল। যাঁরা ‘দো বিঘা জমিন’, ‘পথের পাঁচালি’, ‘কাবুলিওয়ালা’র মতো ছবি দেখেছেন। ভালও লেগেছে তাঁদের। যা আজও দর্শকের প্রিয়। সেটা কী ভাবে সম্ভব হচ্ছে। আর বর্তমানে যে ছবিগুলো তৈরি হচ্ছে তা এক বারের বেশি দ্বিতীয় বার দেখাই যায় না। তাঁর আগেই স্মৃতি থেকে চলে যায়। তাই তো সেই ১৯৯৬ সালে ‘দামু’র পর আর কোনও ছবিই করিনি আমি।

প্রশ্ন: কেন করেননি?

রঘুবীর: এই টাকার জন্য বাজে ছবিতে অভিনয় করতে পারব না। যেখানে না আছে কোনও গল্প। শুধুই ব্যবসার কথা মাথায় রেখে ছবি বানানো হলে সেই সিনেমায় আমি কাজ করতে চাই না।

প্রশ্ন: কিন্তু সেই ধরনের ছবিতে অভিনয় করলে তো বেশি জনপ্রিয়তা মেলে, তাই না?

রঘুবীর: আমি বেশি জনপ্রিয় হতে চাই না। অল্প কাজ করতে চাই, অল্প জনপ্রিয়তাতেই আমি খুশি।

প্রশ্ন: বাংলা সিনেমা দেখা হয়?

রঘুবীর: এখানেও এখন সেই রিমেক ছবি তৈরির হিড়িক। আগে দেখতাম। ‘পথের পাঁচালি’ আমার প্রিয় ছবি। ‘জলসাঘর’ দেখেছি। ঋত্বিক ঘটকের বেশ কিছু ছবি আমি দেখেছি। সেই ছবিগুলোই আমায় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে ভাল কাজ করার।

প্রশ্ন: ‘ওটিটি’ প্ল্যাটফর্ম আসায় যে অভিনেতাদের খুব উপকার হয়েছে, তা নিশ্চয়ই মানেন?

রঘুবীর: কাজের মান যে উন্নত হয়েছে তা হলফ করে বলতে পারি। কোভিড এক দিকে ক্ষতি করেছে, আবার ভালও করেছে। একটা সময় দর্শক সিনেমা দেখা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ‘ওটিটি’ প্ল্যাটফর্ম আসায় দর্শক কাজের মান বিচার করতে শিখেছে। এর ফলে রিমেক বাণিজ্যিক মশলা ছবির প্রতিপত্তি কমেছে। তা সত্যিই খুব ভাল লক্ষণ।

প্রশ্ন: গ্রামের বাড়িতে যান?

রঘুবীর: হ্যাঁ, যাব না? অবশ্যই যাই। ওখানে গিয়ে অক্সিজেন নিয়ে আসি ইট, কাঠ, পাথরের এই মুম্বই শহরে টিকে থাকার জন্য। কৃষকের বাড়ির ছেলে আমি। ওখানে গিয়ে ক্ষেতে চলে যাই। আমার ভাই আছে।

প্রশ্ন: মুম্বইয়ের এই ইঁদুরদৌড়, লাইমলাইটে থাকার প্রতিনিয়ত লড়াই, এই চাপগুলো কী ভাবে সামলান?

রঘুবীর: আমার কোনও চাপ নেই জীবনে। বেঁচে থাকার জন্য খাবার পাই। যেটুকু কাজ করি তাতেই আমি খুশি। লজ্জা ঢাকার জন্য জামাকাপড় আছে। আর কী চাই জীবনে! শুরুতে বুঝতে পারতাম না। কিন্তু কখনও ঘাবড়ে যাইনি। টাকার পিছনে কোনও দিনই ছুটিনি। টাকার জন্য ছবি করলে নিজের সঙ্গে অন্যায় করা হত। কম টাকায় জীবন সুন্দর হয়। বেশি টাকা জীবন ধ্বংস করে দেয়। টাকা, গ্ল্যামার, জনপ্রিয়তা সারা জীবন থাকে না। প্রলোভন মানুষকে বেপথে চালনা করে।

প্রশ্ন: নতুন প্রজন্মের আপনার পছন্দের অভিনেতা কারা?

রঘুবীর: কার নাম বলব। প্রচুর ভাল অভিনেতা আছে। তবে এটা ঠিক, এই ‘ওটিটি’ প্ল্যাটফর্মের দৌলতে এখন বাণিজ্যিক ঘরানার অভিনেতারা কিছুটা ভয়ই পাচ্ছেন।

প্রশ্ন: ‘পঞ্চায়েত’-এর নতুন সিজন কবে আসছে?

রঘুবীর: জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ শুরু হবে শুটিং। তার পরই আসবে সিজন ৩। সিজন ৫ অবধি তো পরিকল্পনা রয়েছে দেখা যাক।

প্রশ্ন: ব্যস্ততার মাঝে সঙ্গীতের চর্চা চলছে?

রঘুবীর: সঙ্গীতচর্চা কোনও দিন বন্ধ হবে না। যে দিন পৃথিবী ছেড়ে যাব সেই দিনই এই চর্চা বন্ধ হবে। সঙ্গীত আমার প্রাণ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement