বিদ্যা বালন।
প্র: আসন্ন ছবিতে আপনার চরিত্রের নামও বিদ্যা। পর্দার ‘শেরনি’ হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনি কী ছিল?
উ: ছবিটা করতে গিয়ে আমার এই বিশ্বাসটা আরও জোরালো হয়েছে যে, সব নারীই কোথাও না কোথাও একজন বাঘিনি। কেউ গর্জন করেন, কেউ শান্ত। ‘শেরনি’ ছবিতে বিদ্যা ভিনসেন্ট দ্বিতীয় ধরনের। কম কথার মানুষ, কিন্তু দৃঢ়চেতা। একজন ফরেস্ট অফিসার হিসেবে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ করতে, জঙ্গলকে বাঁচাতে সে জান লড়িয়ে দেয়।
প্র: মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কী রকম ছিল?
উ: আমরা ছবির প্রথম শিডিউল শুট করেছিলাম অতিমারি আসার আগেই। গত বছর লকডাউনের শেষে অক্টোবর-নভেম্বরে ফের মধ্যপ্রদেশে গিয়েছিলাম, সেকেন্ড শিডিউল শুট করতে। সব নিয়ম মেনে, বায়ো বাবলের মধ্যে শুট করেছিলাম বলে আমাদের সেটে একজনও আক্রান্ত হননি। জঙ্গলে শুট করছিলাম বলে এমনিতেই একটু নিশ্চিন্তে ছিলাম। ভিড়ভাট্টা কম, ইউনিটের বাইরের কারও সঙ্গে যোগাযোগও ছিল না তেমন। এত শান্ত, নির্ঝঞ্ঝাট শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা আমার এর আগে কখনও হয়নি। পরিচালক অমিত মসুরকরও তাড়াহুড়ো পছন্দ করেন না। কোনও কোনও সময়ে দু’-আড়াই ঘণ্টার জার্নি করতে হলেও ক্লান্ত লাগত না, জঙ্গলের হাওয়া এত তাজা। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট এবং এম.পি. টুরিজ়ম খুবই সাহায্য করেছিল আমাদের। তবে জঙ্গলের কয়েকটি নির্দিষ্ট জায়গাতেই শুটিং পারমিট পেয়েছিলাম। বন্ধ থাকায় তখন সাফারিও করতে পারিনি।
প্র: আপনার শেষ ছবি ‘শকুন্তলা দেবী’ও ওটিটি-তে মুক্তি পেয়েছিল। এ বার ‘শেরনি’। বড় পর্দার রিলিজ় কতটা মিস করেন?
উ: শুক্রবারে যে টেনশনটা হত, সেটা মিস করি না (হাসি)! তবে হ্যাঁ, সিনেমা হলে ছবি রিলিজ় করার ব্যাপারটা মিস করছি তো বটেই। তা সত্ত্বেও বলব, আমি নিজে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নানা ধরনের কনটেন্ট দেখতে ভীষণ পছন্দ করি। যখন খুশি, যেখানে খুশি, যা খুশি দেখার একটা স্বাধীনতা পাওয়া যায়। সেটার সঙ্গে এখন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। উপভোগও করছি। এই ওটিটি-র মাধ্যমেই যখন আমার ছবি একসঙ্গে প্রায় ২৪০টা দেশে মুক্তি পেতে পারে, তার চেয়ে বেশি আনন্দের আর কী হতে পারে!
প্র: গত এক বছরে অনেক বড় বাজেটের ছবি ধরে রাখা হয়েছে, যেখানে তুলনামূলক ভাবে কম বাজেটের ছবি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে...
উ: এই মুহূর্তে দর্শকের কাছে পৌঁছতে গেলে ওটিটি ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প আছে বলে আমার মনে হয় না। বড় পর্দায় ছবি রিলিজ় করানোর উপায় নেই এখন। সিনেমা হলের পুরনো চেহারা কবে ফিরবে, সে নিশ্চয়তাও নেই। তাই যে কোনও ছবির ক্ষেত্রেই ওটিটি রিলিজ় এখন একমাত্র ভরসা। আমার বিশ্বাস, পরবর্তীকালে ওটিটি এবং সিনেমা হল, দুটোই পাশাপাশি থেকে যাবে। কারণ, দুটো মাধ্যমই একেবারে ভিন্নধর্মী বিনোদনের জোগান দেয় দর্শককে। বড় পর্দার সামগ্রিক অভিজ্ঞতাকে রিপ্লেস করা সম্ভব নয়। আবার ওটিটি-র স্বাধীনতার সঙ্গেও পাল্লা দেওয়া মুশকিল। আগামী দিনে দুটো মাধ্যমই নিজের জায়গা ধরে রাখতে পারবে।
প্র: আপনি নিজে কী ধরনের কনটেন্ট দেখতে পছন্দ করেন?
উ: এই রে...এটা চট করে বলা মুশকিল! আপাতত ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ সিজ়ন টু দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছি। তবে আমার ছবি মুক্তি পাওয়ার পরেই ওটা দেখব। এ দিকে আমার প্রায় সব বন্ধুই দেখে ফেলেছে! তাই এখন ওই সিরিজ় নিয়ে কোনও আলোচনা হলেই আমি কান বন্ধ করে রাখি (হাসি)!
প্র: লকডাউন কী ভাবে কাটালেন?
উ: গত দেড় বছরে নিজের জন্য প্রচুর সময় বার করতে পেরেছি। সিদ্ধার্থের (রায় কপূর) সঙ্গেও এতখানি সময় একসঙ্গে কাটাতে পারব, আগে কোনও দিন ভাবিনি। আগের বছর লকডাউনে একটু-আধটু রান্নাবান্না করার চেষ্টা করেছিলাম তা-ও। এ বছর সেকেন্ড ওয়েভ আসার পরে সত্যিই আর কিছু করার উৎসাহ পাচ্ছিলাম না। চারপাশে এত খারাপ খবর যে, প্রত্যেক দিন প্রার্থনা করে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। তবে লকডাউনে বই পড়ার অভ্যেস ফিরে এসেছে, সেটা একটা ভাল ব্যাপার। তা ছাড়া সিনেমা, সিরিজ় তো দেখতেই থাকি।
প্র: দক্ষিণের একঝাঁক অভিনেত্রী মেনস্ট্রিম বলিউডে জায়গা করে নিচ্ছেন ইদানীং। আপনার শিকড়ও দক্ষিণে। গর্ববোধ হয় নিশ্চয়ই?
উ: অবশ্যই। হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতারাও দক্ষিণে যাচ্ছেন কাজ করতে। সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অভিনেতাদের কাছেই সুযোগ বেড়ে গিয়েছে। এই আদানপ্রদান সামগ্রিক ভাবেই খুব আশাপ্রদ। আর মেনস্ট্রিম বলিউডে তথাকথিত ‘হিরো’র সংজ্ঞা অনেক দিনই বদলে গিয়েছে। ওটিটি-র জনপ্রিয়তা বাড়ার পর থেকে যে কোনও প্রজেক্টের কাস্টিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চরিত্রটা প্রথমে গুরুত্ব পায়। তার পরে দেখা হয়, কে সেটা সবচেয়ে ভাল করতে পারবেন।
প্র: ভাল ওয়েব সিরিজ়ের প্রস্তাব পেলে করবেন?
উ: আসলে আমি নিজে অনেকটা দু’ঘণ্টার ছবির মতো। নির্দিষ্ট কয়েক দিনের শিডিউল, তার পরে কাজ শেষ। ওয়েব সিরিজ়ে মাসের পর মাসের পরিশ্রম থাকে। সেটা করতে পারব কি না, এখনও স্থির করতে পারিনি (হাসি)!