বলিউডে এমন অভিনেত্রী হাতেগোনা, যাঁরা একে অপরের ভাল বন্ধু। আবার এমন অনেক অভিনেত্রী রয়েছেন, যাঁরা যে শুধু একে অপরের ভাল বন্ধু হতে পারেননি তা-ই নয়, বরং একে অপরের সঙ্গে তাঁদের আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক।
দুই বলি অভিনেত্রীর মধ্যে এমন সম্পর্কের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে দীপিকা পাডুকোন এবং সোনম কপূরের কথা। পেশার জন্য ক্যামেরার সামনে নিজেরা মুখোমুখি ভাল সম্পর্ক দেখাতে চাইলেও, প্রকৃতপক্ষে তাঁরা যে কতটা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী, তা বলি মহলের অজানা নয়।
একটা সময় এমন ছিল, তাঁরা একে অপরের মুখ দর্শনও করতেন না। এমনকি ‘দীপিকা আগে ভাল ছিল, এখন খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে’ প্রকাশ্যে সোনম কপূর এমন মন্তব্যও করেন।
ইন্ডাস্ট্রিতে দীপিকা এবং সোনম দু’জনেই সমসাময়িক। একই বছরে, ২০০৭ সালে দু’জনেই বলিউড ডেবিউ করেন।
ফিল্ম ‘ওম শান্তি ওম’-ই দীপিকাকে কাস্ট করেন শাহরুখ খান, ঠিক সে সময়ই সঞ্জয়লীলা ভন্সালীর বিগ ব্যানার ফিল্ম ‘সাওয়ারিয়া’-তে রণবীর কপূরের বিপরীতে ডেবিউ করেন সোনম কপূর। ‘ওম শান্তি ওম’ সুপার হিট হয় বক্স অফিসে। কিন্তু ‘সাওয়ারিয়া’ তেমন ফল করতে পারেনি।
এই দুই সমসাময়িক অভিনেত্রীর প্রথম মন কষাকষি শুরু রণবীর কপূরকে নিয়ে। ‘সাওয়ারিয়া’ ফিল্মের সময় সোনম এবং রণবীরের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে যায়। তাঁদের দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে বলিউডে গুঞ্জনও শুরু হয়ে যায়।
কিন্তু ছবি ফ্লপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের জুটি ভেঙে যায়। এর পর রণবীরের সঙ্গে ‘বচনা অ্যায় হাসিনো’-তে অভিনয় করেন দীপিকা। তখন দীপিকার সঙ্গেও রণবীরের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। বলিউডে কান পাতলে শোনা যায়, তখন থেকেই নাকি সোনম আর দীপিকার সম্পর্কের দূরত্ব শুরু।
কিন্তু যখন রণবীর কপূরের সঙ্গে দীপিকার ব্রেক আপ হয়ে যায়, সোনম আর দীপিকার সম্পর্কও আবার আগের মতো ভাল হয়ে যায়। দু’জনকে একসঙ্গে কর্ণ জোহরের শো ‘কফি উইথ কর্ণ’-তেও দেখা যায়।
সেই শো-এ দু’জনেই রণবীরের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছিলেন। কারণ তত দিনে দীপিকার সঙ্গে ব্রেক আপ করে ক্যাটরিনা কইফের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন রণবীর।
এই পর্যন্ত তো সব ঠিকঠাকই মনে করছিলেন ভক্তেরা। কিন্তু দু’জনের মধ্যে যে আদৌ সম্পর্ক ঠিক হয়নি, সেটা বোঝা যায় সোনম কপূর যখন দ্বিতীয় বারের জন্য অনিল কপূরের সঙ্গে ‘কফি উইথ কর্ণ’-এ এসেছিলেন।
তাঁকে যখন দীপিকার ফ্যাশন নিয়ে কিছু বলতে বলা হয়, সোনম গড়গড় করে তাঁর ফ্যাশনের তুলোধনা করে বলেন, দীপিকার কোনও ফ্যাশন সেন্স নেই। ভোগ ম্যাগাজিনে আসার জন্য জোর করে নিজেকে ফ্যাশনিস্তা দেখাতে চান। তার চেয়ে ক্যাটরিনার পোশাক বাছাই ভাল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর পর দীপিকা এক বার টুইটারে শেয়ার করেন যে, তিনি এ বার মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতাকে সমর্থন করতে চান। তার পরই সোনম পাল্টা টুইটে দীপিকাকে আক্রমণ করে লেখেন, এ রকম সচেতনতামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হলে তিনি কখনও তা টুইটারে লিখবেন না, বরং কাজটাই করবেন মন দিয়ে।
দীপিকার উপর সোনমের আক্রোশ থাকার অনেকগুলো কারণও রয়েছে। প্রথমত রণবীর কপূর, দ্বিতীয়ত সঞ্জয়লীলা ভন্সালী। ডেবিউ ফিল্মে সোনমকে সুযোগ দিলেও, তার পর আর কোনও ফিল্মে সোনমকে নেননি পরিচালক। বরং দীপিকাকে অনেক ফিল্মে নিয়েছেন।
জানা যায়, ‘রামলীলা’-র জন্য প্রথমে নাকি সোনমের কথা ভেবেছিলেন সঞ্জয়। সোনমের অডিশনও নেন। কিন্তু পরে সোনমের পরিবর্তে এই ফিল্মে দীপিকাকে সই করান।
এমনকি দীপিকা এবং সোনমের জন্য একই পিআর এজেন্সি কাজ করত। কিন্তু সোনম পরে নিজের পিআর এজেন্সি বদলে নেন। তার কারণ, সোনম জানতে পেরেছিলেন, যে সমস্ত ব্র্যান্ড বা অনুষ্ঠান দীপিকা প্রত্যাখ্যান করতেন, সেগুলোই ঘুরে ফিরে তাঁর কাছে আসতে শুরু করে।
তবে সোনমের কাছে সবচেয়ে কষ্টের ঘটনা ছিল, যখন একটা অ্যাওয়ার্ড ফাংশানে তাঁর বদলে দীপিকার নাম ঘোষণা করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে রেখার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার কথা ছিল। তার আগে রেখার একটি গানে সোনম পারফর্ম করবেন এবং পরে তিনিই রেখার হাতে এই সম্মান তুলে দেবেন, এমনই কথা ছিল।
কিন্তু দীপিকা আয়োজক কর্তাদের শর্ত দিয়ে বসেন যে, তিনিই রেখার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেবেন। তা না হলে এই অনুষ্ঠানে থাকবেন না। দীপিকার মতো তারকাকে অনুষ্ঠানে রাখার জন্য শর্তে রাজি হয়ে যান কর্মকর্তারা। সোনমের পারফর্ম্যান্সের পর যখন পুরস্কারদাতার নাম ঘোষণা হয়, সোনমের বদলে দীপিকাকে মঞ্চে ডাকা হয়। রাগে অনুষ্ঠান ছেড়েই বেরিয়ে যান সোনম।
দু’জনের মধ্যে এখনও সেই একই সম্পর্ক রয়েছে। তবে দু’জনেই অত্যন্ত পেশাদার হওয়ায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় বা সাংবাদিকদের সামনে একে অপরের সম্পর্কে প্রশংসাই করে থাকেন।