প্রয়াত ধারাবাহিক ‘বিবাহ অভিযান’-এর পরিচালক দেবকুমার বসু। ছবি সৌজন্য: পরিচালক প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী।
বাংলা বিনোদন দুনিয়ায় একের পর এক দুঃসংবাদ। বৃহস্পতিবার চলে গেলেন বাংলা পর্দা, মঞ্চ দুনিয়ার জনপ্রিয় অভিনেতা, সংবাদপাঠক দেবরাজ রায়। শুক্রবার সকালে প্রয়াত খ্যাতনামী পরিচালক দেবকীকুমার বসুর ছেলে পরিচালক পুত্র দেবকুমার বসু। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। পরিচালক প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী এই খবর আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “দীর্ঘ দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এ দিন বেলায় তাঁর মুদিয়ালির বাসভবনে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ নিয়ে আসা হবে।” বর্ষীয়ান পরিচালকের প্রয়াণে সমাজমাধ্যমে শোক জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স (সাবেদ টুইটার)-এ তিনি লেখেন, “আপাদমস্তক সজ্জন, শিক্ষিত মানুষ চলে গেলেন। নানা সমাজসেবামূলক কাজে জড়িয়ে থাকতেন। বিশেষ করে শিবমন্দির দুর্গাপুজোর প্রধান স্তম্ভ ছিলেন দেবকুমার বসু।” এও জানান, প্রয়াত পরিচালকের বিশেষ স্নেহধন্যা ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ছোট পর্দায় দেবকুমার বসুর ধারাবাহিক ‘বিবাহ অভিযান’ বহুল জনপ্রিয়। এই ধারাবাহিকের হাত ধরে প্রথম খ্যাতি পান শঙ্কর চক্রবর্তী, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, জয় বদলানি প্রমুখ। প্রেমেন্দুবিকাশ আরও বলেন, “বাবাকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করতেন। দেবকীকুমার বসুর সঙ্গে তাঁর কাজের যাতে কোনও সংঘাত না হয়, তার জন্য দেবকুমার বসু মণিপুরী ছবির দুনিয়ায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। মণিপুর তাঁকে ‘দেবতা’জ্ঞানে পুজো করে।” খবর ছড়াতেই উত্তর-পূর্ব ভারতের বিনোদন দুনিয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
দেবকুমার বসু স্মরণে পরিচালক প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী, অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তী। ছবি: ফেসবুক
যাঁর হাত ধরে বিনোদন দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা, সেই দেবকুমার বসু মানুষ হিসাবে কেমন ছিলেন? জানতে আনন্দবাজার অনলাইন কথা বলেছিল অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তীর সঙ্গে। সকালে উঠেই দুঃসংবাদ শুনেছেন তিনি। ভারী গলায় বললেন, “অত্যন্ত ভদ্র ছিলেন দাদা। নিচু গলায় কথা বলতেন। কখনও কাউকে বকতে দেখিনি। আমাদের বলতেন, বার বার অভ্যাস করলে অভিনয় ভাল হতে বাধ্য। ‘বিবাহ অভিযান’-এ কাজ করতে গিয়ে আমরা একটি পরিবার হয়ে গিয়েছিলাম।”
দীর্ঘ দিন রোগভোগ। ফলে অনেক দিন ধরেই তিনি হাসপাতালে। খবর পেয়ে টিম ‘বিবাহ অভিযান’ দেখতে গিয়েছিল তাঁকে। সেই স্মৃতি শঙ্করকে তাড়া করে ফিরছে। অভিনেতার কথায়, “বয়সের ভারে, অসুস্থতার কারণে কাউকে চিনতে পারছিলেন না। কী করে যেন আমার মুখ মনে ছিল। গিয়ে দাঁড়াতেই কাঁপা কাঁপা হাতে আমার গাল ছুঁয়েছিলেন। চোখ দিয়ে ঝরঝর কর জল ঝরছিল! ওঁর কষ্ট দেখে আমিও কেঁদে ফেলেছিলাম।” বাবার মতো দেবকুমার বসু পরিচালনায় এলেও তাঁর ছেলে দেবাশিস বসু বিনোদন দুনিয়ায় নেই। তিনি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। দেবকুমার বসুর পুত্রবধূ মানসী বসু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তিনি কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর।