জনপ্রিয়তার দৌড়ে স্থূল চেহারা যে কোনও বাধা হতে পারে না, তা দেখিয়ে দিয়েছেন রাম কপূর। টেলিভিশনের এই অভিনেতার জনপ্রিয়তা যে কোনও তারকার কাছে ঈর্ষণীয়। অভিনয় আর ব্যক্তিত্বের জোরে তিনি পৌঁছে গিয়েছেন দর্শকদের অন্তরমহলে।
পঞ্জাবের জালন্ধরে রামের জন্ম ১৯৭৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর। শৈশবেই তাঁর পরিবার চলে আসে মুম্বইয়ে। তারপর সেখানেই তাঁর বড় হওয়া। পড়াশোনা স্কটিশ স্কুলে। তারপর নৈনিতালের শেরউড কলেজ। কিছু দিন পড়েছেন কোদাইকানাল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলেও।
স্নাতক স্তরের পরে তিনি চলে যান লস অ্যাঞ্জেলস। ইচ্ছে ছিল উকলা-য় ফিল্ম স্টাডি নিয়ে পড়া। কিন্তু তা না করে তিনি স্তানিসলাভস্কি অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন। অভিনয় নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য।
দেশে ফিরে অভিনয়ের কেরিয়ার শুরু ১৯৯৭ সালে। সুধীর মিশ্রের পরিচালনায় টেলিভিশনে ‘ন্যায়’ সিরিয়াল দিয়ে। সিরিয়াল সে ভাবে জনপ্রিয় হয়নি। কিন্তু রামের অভিনয় প্রশংসিত হয়। আসতে থাকে বহু অফার। এর পর তাঁর দুটো শো, ১৯৯৮ সালে ‘হেনা’ এবং ১৯৯৯ সালে ‘সংঘর্ষ’।
তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে ২০০০ সালের ‘ঘর এক মন্দির’ সিরিয়ালে। কার্যত দর্শকদের পরিবারের সদস্য হয়ে যায় তাঁর করা ‘রাহুল’ চরিত্রটি। এরপর তাঁর কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ‘কসম সে’ সিরিয়াল। তুমুল জনপ্রিয় হয় প্রাচী দেশাইয়ের সঙ্গে তাঁর জুটি।
একে একে ‘রিশতে’ সিরিয়ালের সুজয় চৌধুরি, ‘কেহতা হ্যায় দিল’ সিরিয়ালের জয় সিংহ চরিত্রকে জীবন্ত করে তোলেন রাম কপূর। সবথেকে জনপ্রিয় ‘কিঁউকি সাস ভি কভি বহু থি’-র শাদাব এবং যশ ঠকরাল।
তাঁর কেরিয়ারের সবথেকে উল্লেখযোগ্য মোড় ‘বড়ে অচ্ছে লগতে হ্যায়’ সিরিয়াল। তাঁর চরিত্রের নাম এখানে রাম কপূর-ই। সাক্ষী তনওয়ারের সঙ্গে রাম কপূরের যুগলবন্দি ছোট পর্দার জনপ্রিয়তম জুটি হয়ে ওঠে। ছোট পর্দায় চুম্বনরত হয়েছেন, এমন গুটিকয়েক জুটির মধ্যে তাঁরা একজন।
বড় পর্দাতেও রাম কপূরের সাফল্য উল্লেখযোগ্য। বড়পর্দা তো বটেই, ছোট পর্দাতেও যে চরিত্রাভিনেতা হয়ে ক্যামেরার লেন্স নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেওয়া যায়, দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’, ‘উড়ান’, ‘মনসুন ওয়েডিং’, ‘হামশকল’-এর মতো ছবিতে রাম কপূরের অভিনয় নজর কেড়েছে দর্শক ও সমালোচক মহলে।
২০০৬ থেকে ২০০৮ পরপর তিন বছর রাম কপূর টেলিভিশনের সেরা অভিনেতা নির্বাচিত হয়েছেন। ‘ঘর এক মন্দির’ সিরিয়ালের তাঁর সহঅভিনেত্রী ছিলেন গৌতমী। সিরিয়ালের সেটেই পরিচয় থেকে প্রেম। দু’জনে বিয়ে করেন ২০০৩-এর ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে।
রাম-গৌতমীর ছেলের নাম অক্ষ এবং মেয়ের নাম সিয়া। সংসার এবং দুই সন্তান সামলানোর জন্য গৌতমী কয়েক বছর সে ভাবে অভিনয় করতে পারেননি। পরে দুই ছেলেমেয়ে বড় হয়ে যাওয়ায় তিনি আবার ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে আসেন।
রাম নির্দ্বিধায় জানান, তাঁর স্ত্রী প্রায় সিঙ্গল পেরেন্ট হয়ে একা হাতে বড় করেছেন দুই সন্তানকে। তার জন্য স্ত্রীকে সুপারউওম্যান বলে কুর্নিশ জানান তিনি।
এক সময় দিনে প্রায় ৫০টি সিগারেটের প্রয়োজন হত চেনস্মোকার রাম কপূরের। নেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন মেয়ে সিয়ার আর্জিতে। টেলিভিশনে ধূমপান বিরোধী প্রচার দেখে সিয়া তাঁকে অনুরোধ করেছিল এই অভ্যাস ছেড়ে দেওয়ার জন্য। মেয়ের অনুরোধ ফেলতে পারেননি রাম কপূর।
দু’দশকের উপর টেলিভিশনে অভিনয় করছেন রাম কপূর। এখনও তাঁর জনপ্রিয়তায় তিনি প্রথম সারিতে। তাঁকে টেলিভিশনের সম্পদ বলা হয়। ( ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)