(বাঁ দিক থেকে) সৌম বন্দ্যোপাধ্যায়, চৈতি ঘোষাল, ঊষসী চক্রবর্তী, দেবলীনা দত্ত। ছবি: ফেসবুক।
গত কয়েক বছর ধরে ওঁদের মেয়ে কোমর বেঁধে পুজোর আয়োজন করতেন। আর কাছের-দূরের সমস্ত মানুষকে বাড়ির পুজোয় আমন্ত্রণ জানাতেন। আরজি কর-কাণ্ডে সেই মেয়েটি অর্থাৎ তরুণী চিকিৎসক খুন হয়েছেন। বাড়ির পুজোও সম্ভবত চিরতরে বন্ধ। কিন্তু মেয়েকে মনে করে পরিচিতদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাতে ভোলেননি মৃতার মা-বাবা। সেই আমন্ত্রণ রাখতেই নবমীর সন্ধ্যায় তাঁদের বাড়িতে চৈতি ঘোষাল, দেবলীনা দত্ত, সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়, ঊষসী চক্রবর্তী। ঊষসী আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, পুজোয় একটি দিন তাঁরা ঠিক করেছিলেন, মৃতার পরিবারের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাবেন, তাই যাচ্ছেন। দেবলীনায় কথায়, “মেয়েকে হারিয়েও ওঁরা কত শক্ত! ওঁদের ওই সাহসটাই আনতে যাচ্ছি।”
নির্যাতনে মৃতা তরুণী আচমকাই বাড়িতে পুজো শুরু করেছিলেন। তিনি পুজোর জোগাড় একা হাতে সামলাতেন। তাঁর মায়ের দায়িত্বে ভোগ রান্না। এ ভাবেই প্রতি পুজো পরিবারের সকলকে নিয়ে আনন্দ করে কাটিয়ে দিতেন তিনি। তার ফাঁকে রোগীদের ফোন আসত। তিনি সাড়া দিতেন। আরজি কর হাসপাতালে ঘটে যাওয়া অঘটনে তিনি আজ শুধুই ‘স্মৃতি’! মেয়ের সেই স্মৃতি আঁকড়ে মা-বাবা ধর্না মঞ্চে যাচ্ছেন। যাঁরাই তাঁদের সমর্থন জানাচ্ছেন তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলছেন না। সেই জায়গা থেকে সৌম্যর মনে হয়েছে, “কলকাতা অনেক বছর দেখেনি, অন্যের দুঃখেও কাঁদা যায়। বিপন্ন মানুষের পাশে থাকা যায়। অভিযোগকারীদের জন্য ন্যায় বিচার চেয়ে পথে নামা যায়।” সেই জায়গা থেকেই তাঁর বক্তব্য, “এই অনুভূতি থেকে আমরা ওঁদের কাছে যাচ্ছি। এই বার্তা দিতে, ওঁদের যন্ত্রণা কেবলই ওঁদের নয়। সেই কষ্ট আজ সকলের বুকে আগুন ধরিয়েছে।”
পঞ্জিকা মতে শুক্রবার পুজোর শেষ দিন। এর পরে কী হবে? সেই ভাবনা থেকেই নির্যাতিতার বাড়ির পথে?
আনন্দবাজার অনলাইন প্রশ্ন রেখেছিল চৈতির কাছে। তাঁর কথায়, “পুজোর পঞ্জিকা কী বলছে জানি না। আমাদের পঞ্জিকায় পুজো চলবে ন্যায় বিচার না আসা পর্যন্ত।” আরও একটি ভুল সংশোধন করে দিয়েছেন পরিচালক-অভিনেত্রী। সাফ বলেছেন, “চিকিৎসকদের অনশনকে অনেকেই ভুল বুঝছেন। ভাবছেন, ওঁরা এ বার নিজেদের স্বার্থ দেখছেন। কিন্তু তলিয়ে ভাবলে দেখা যাবে এই ধারণা ভুল।” তাঁর যুক্তি, চিকিৎসদকের দাবির অন্যতম একটি ‘থ্রেট কালচার’ বন্ধ করা। এটি বন্ধ হলে ঘুষ দিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মতো বিষয়টি বন্ধ হবে। সকলে পড়াশোনা করে পাশ করবেন। ‘থ্রেট কালচার’ থাকলে অশিক্ষিত চিকিৎসকের সংখ্যা আরও বাড়বে। এতে সাধারণের ক্ষতি।