Celebrity Interview

বাংলার এত বড় নায়িকা হয়েও মুম্বইয়ের শুটিং ফ্লোরে রুক্মিণীর ব্যবহার মুগ্ধ করেছে: বিদ্যুৎ

এই প্রথম নিজের অভিনীত ছবির (‘আইবি সেভেন্টিওয়ান’) প্রচারে কলকাতায় বলিউড অভিনেতা বিদ্যুৎ জামওয়াল। শহরে একান্তে আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের উত্তর দিলেন অভিনেতা।

Advertisement

অভিনন্দন দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৩ ১৮:৫৭
Share:

বুধবার তাঁর নতুন ছবির প্রচারে কলকাতায় এসেছিলেন বিদ্যুৎ জামওয়াল। ছবি: সংগৃহীত।

সাধারণত কলকাতায় কোনও বলিউড তারকা পা রাখলেই তাঁর সামনে হাজির করা হয় মিষ্টি দই এবং সন্দেশ। কিন্তু তিনি খেলেন কয়েক বাটি ঝালমুড়ি! বললেন, ‘‘ততটা ভাল নয়। আসল স্বাদ পেতে মনে হয় রাস্তার কোনও দোকানে আমাকে যেতে হবে।’’ কারণ ব্যক্তিটির নাম বিদ্যুৎ জামওয়াল। ‘ফিটনেস’ যাঁর নামের সঙ্গে সমার্থক। বলিউডে বিগত এগারো বছরের কেরিয়ারে যাঁর নামের সঙ্গে ‘অ্যাকশন হিরো’ তকমা জুড়ে গিয়েছে।

Advertisement

বুধবার নিজের নতুন ছবি ‘আইবি সেভেন্টিওয়ান’-এর প্রচারে কলকাতায় এসেছিলেন বিদ্যুৎ। উল্লেখ্য, এই প্রথম নিজের কোনও ছবির প্রচারে কলকাতায় এলেন তিনি। কলকাতায় এসেই প্রথমে কালীঘাটে পুজো দিয়েছেন। এর পিছনেও অবশ্য কারণও রয়েছে। সাক্ষাৎকার দিতে বসে বিদ্যুৎ বললেন, ‘‘আমার বাবা ছিলেন সেনায়। আমার শৈশবের তিন বছর কলকাতায় কেটেছে। কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। রেস কোর্সের কাছেই আমরা থাকতাম।’’ এই ছবির মাধ্যমেই প্রযোজক হিসেবে নতুন যাত্রা শুরু করলেন বিদ্যুৎ। তাই কলকাতায় নিজের ছবির প্রচারে এসে নিজের বহু দিনের ইচ্ছে পূরণ করতে পেরেছেন বলেই জানালেন বিদ্যুৎ।

শহরে পা রেখে আগে কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন বিদ্যুৎ। ছবি: সংগৃহীত।

বিদ্যুতের ছবি মানেই জমকালো অ্যাকশনে ভরপুর। সত্তরের দশকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবিতে ইন্টালিজেন্স ব্যুরোর একজন স্পেশ্যাল এজেন্টের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। অনুরাগীরা বলছেন, ছবিতে বিদ্যুৎকে নাকি কম অ্যাকশন করতে দেখা যাবে। অভিনেতা বললেন, ‘‘এই অনুরাগীরাই কিন্তু আমাকে এক সময় নতুন নতুন চরিত্রে অভিনয় করতে দেখতে চাইতেন।’’ তবে অ্যাকশন ছবিতে অভিনয় করে টাইপকাস্ট হওয়ার ভয় কিন্তু নেই বিদ্যুতের। তাঁর সহজ উত্তর, ‘‘মাইকেল জ্যাকসনকে তো কেউ গান ছেড়ে নতুন কিছু করতে বলেননি! আবার বিরাট কোহলিকে ক্রিকেট ছেড়ে কেউ ইলেকট্রিশিয়ান হতে বলেন না! তাই আমি যেটা ভাল পারি, সেটাই করি।’’

Advertisement

সাম্প্রতিক অতীতে বলিউডে অ্যাকশন ছবির সংখ্যা বেড়েছে। স্বয়ং শাহরুখ খান ‘পাঠান’-এর মাধ্যমে অ্যাকশন হিরো হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। অথচ বিদ্যুৎ দীর্ঘ দিন ধরেই এই পথে হেঁটেছেন। বললেন, ‘‘অ্যাকশন ঘরানার পরিধি খুবই বিস্তৃত। ভাল লাগে যে এখন অ্যাকশনের প্রেক্ষাপটে আরও ছবি তৈরি হচ্ছে। প্রযোজকরাও বড় অঙ্ক বিনিয়োগ করছেন।’’ বলিউডের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ আশাবাদী, বেশি সংখ্যক অ্যাকশন ছবি তৈরি হলে, আগামী দিনে ইন্ডাস্ট্রিতে আরও দক্ষ কলাকুশলীর আগমন ঘটবে।

‘আইবি সেভেন্টিওয়ান’ ছবিতে বিদ্যুৎকে এই লুকেই দেখা যাবে। ছবি: সংগৃহীত।

বলিউডে বিদ্যুৎ বহিরাগত। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। তাঁর লড়াই দেখে অনুরাগীরাও সমাজমাধ্যমে বার বার বিদ্যুৎকে সমর্থনের আবেদন জানান। তিনি বলিউডে প্রথম সারির প্রযোজক এবং তারকাদের থেকে যোগ্য সমর্থন পেয়েছেন? কিছু ক্ষণ চুপ থাকার পর বিদ্যুৎ বললেন, ‘‘সেটা মানুষের ধারণা এবং তা কিছুটা হলেও সত্যি। যুদ্ধক্ষেত্রে কে অসহযোগিতা করছেন সেটা না ভেবে কে সাহায্য করছেন, সেটাই একজন সেনা দেখেন।’’ এই প্রসঙ্গেই তাঁর সংযুক্তি, ‘‘বলিউডে জায়গা পাওয়া একদমই সহজ নয়। আমি সেখানে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা ছেলেমেয়েদের স্ট্রাগল দেখেছি। কিন্তু আমি এ বার তাঁদের সুযোগ দিতে চাই।’’ ‘আইবি সেভেন্টিফাইভ’ ছবিতেও ৩০ জন নতুন অভিনেতাদের সুযোগ দিয়েছেন বিদ্যুৎ। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ কোনও বদল ঘটাবেন বলে আমি অপেক্ষা করতে পারব না। আমি নিজে ইন্ডাস্ট্রিতে পরিবর্তন আনতে চাই।’’

‘সনক’ ছবিতে বিদ্যুতের বিপরীতে ছিলেন টলিপাড়ার অভিনেত্রী রুক্মিণী মৈত্র। কলকাতায় আসছেন, আগে থেকেই রুক্মিণীকে জানিয়ে রেখেছিলেন বিদ্যুৎ। বললেন, ‘‘দেব আর রুক্মিণী আমার খুব ভাল বন্ধু। বাংলার এত বড় নায়িকা হয়েও মুম্বইতে শুটিং ফ্লোরে রুক্মিণীর ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করেছিল। স্পটবয় থেকে শুরু করে পরিচালক— প্রত্যেকের সঙ্গে ও যে ভাবে মিশেছে, সেটা ওঁর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ।’’

ফিরে তাকালে নিজের এই যাত্রা থেকে কি উপলব্ধি বিদ্যুতের? ‘‘আমি যখন ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখি, অনেকেই বলেছিলেন এখানে কেউ কাউকে সাহায্য করে না। কঠিন পেশা ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এটাও সত্যি যে বিপরীতে কিছু ভাল মানুষও রয়েছেন যাঁরা প্রয়োজনে একে অপরকে সাহায্য করেন। তা না হলে আজকে আমি এখানে বসে হয়তো সাক্ষাৎকার দিতাম না।’’ একটানা বলে থামলেন তিনি।

বাঙালি অভিনেত্রীর সঙ্গে ছবি করলেও সেই ভাবে বাংলা ছবি দেখেননি বিদ্যুৎ। তবে, বাংলার প্রতিভা সম্পর্কে তিনি অবগত। বললেন, ‘‘বলিউডে সব সময়েই দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির কথা বলা হয়। কিন্তু বাংলার কথা কেউ বলেন না, কারণ জানেন না। এত কম বাজেটে এত ভাল ছবি বাংলা ছাড়া দেশের অন্য কোথাও তৈরি হয় বলে তো শুনিনি।’’ নিজের প্রযোজনা সংস্থার অধীনে আগামী দিনে বাংলা থেকে প্রতিভার সন্ধানে রয়েছেন বিদ্যুৎ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement