বিদিশা দে মজুমদার।
ক্রমশ ভয় দানা বাঁধছে কাঁকিনাড়ার দে মজুমদার পরিবারে। বুধ আর বৃহস্পতিবার পাল্টে দিয়েছে তাঁদের জীবন। বড় মেয়ে বিদিশার অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পেয়েই অসুস্থ মা পম্পা। গুটিয়ে গিয়েছে ছোট বোন। বাবা বিশ্বনাথ শোকে পাথর। বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তের পরে হাতে পেয়েছেন মেয়ের দেহ। বিদিশার বিকৃত, কাটাছেঁড়া শরীর দেখে আবারও শোক পেয়েছেন। মা ঘন ঘন মূর্ছা যাচ্ছেন। মুখে কুলুপ এঁটেছে ছোট বোন। আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল তাঁদের সঙ্গে। তাঁরা কথা বলতে চাননি। বদলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন বিদিশার বন্ধুরা। তাঁদের কথায়, ‘‘শোকের পাশাপাশি ভয় জাঁকিয়ে বসেছে কাকু-কাকিমার মনে। তাঁদের কথায়, বড় মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু ছোট মেয়ের জীবনে ছায়া ফেলবে না তো?’’
যে গিয়েছে সে আর ফিরবে না। কিন্তু যে রয়ে গেল? তাকে নিয়েই যাবতীয় চিন্তা, আশা-নিরাশা বিশ্বনাথ-পম্পার। তাঁদের ছোট মেয়ে। মাত্র ১২-১৩ বছরের মেয়েটি স্কুলে যায়। আগামীতে কী কী প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তাকে? ভেবেই আকুল তাঁরা। বিদিশার সবচেয়ে পুরনো বন্ধুর দাবি, ‘‘এই উৎকণ্ঠা টের পেয়েছি শ্মশানে। চুল্লিতে বন্ধু শুয়ে। দূরে দাঁড়িয়ে ওর বাবা, আমাদের কাকু। সংবাদমাধ্যম ঘিরে ধরেছে আমাদের। সবাই বিদিশাকে নিয়ে কিছু না কিছু বলছি। বিদিশার অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ্যে আসছে। লজ্জায়, সংকোচে ক্রমশ গুটিয়ে যাচ্ছেন তিনি!’’
শ্মশানে দাঁড়িয়েই সংবাদমাধ্যমের কাছে বিদিশার প্রেমিক অনুভব বেরার শাস্তি দাবি করেছেন তাঁর একাধিক বন্ধু। বন্ধুর বাবাকেও আর্জি জানিয়েছেন, ‘‘অনুভবকে ছেড়ে দেবেন না কাকু। শাস্তি দিন ওকে। থানায় ওর নামে অবশ্যই অভিযোগ দায়ের করবেন।’’ তখনও জোর গলায় হ্যাঁ-না কিচ্ছু বলেননি বিদিশার বাবা। সংকোচ, কুণ্ঠা, লজ্জা, ভয় কণ্ঠরোধ করেছে তাঁর। তিনি তো জানেন, যে গিয়েছে সে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর সঙ্গে করেই নিয়ে গিয়েছে। সেও আর ফিরবে না। উত্তরগুলোও অজানাই থেকে যাবে। মৃত মানুষকে নিয়ে অকারণ কাটাছেঁড়া করে আর লাভ কি? সেই জায়গা থেকেই মৃত মেয়ের বন্ধুদের কাছে বিশ্বনাথের আর্তি, ‘‘তোরা একটু রয়েসয়ে বলিস!’’