বিদিশা দে মজুমদার।
‘‘কোমর ছোঁয়া চুল ছিল বিদিশার। বৃহস্পতিবার কোথায় সেই এক মাথা ঘন কালো চুল? মাথা ন্যাড়া তো মেয়েটার!’’ ফোনেই আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে ডুকরে উঠেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সদ্যপ্রয়াত বিদিশা দে মজুমদারের প্রিয় বন্ধু। কেউ বলেছেন, ‘‘মুখে কাপড় গোঁজা ছিল। তাই আগে থেকেই মুখ হাঁ হয়ে গিয়েছিল। ঠোঁট শুকিয়ে কালো। দু’তিনটে দাঁত খোলা মুখের ভিতর থেকে উঁকি দিচ্ছে। কী বীভৎস! ওর দিকে ভয়ে তাকাতেই পারছিলাম না!’’ বৃহস্পতিবার বিদিশার শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছিলেন সমস্ত মডেল-বন্ধুরাই। তাঁরা এখন ভয়ে কাঁপছেন। যাঁরা মডেলিংয়ের পাশাপাশি অভিনয় দুনিয়ায় আসার স্বপ্নও দেখছেন, তাঁদের প্রশ্ন, গ্ল্যামার জগৎ কি সত্যিই এতটা ভয়াবহ? তাঁরাও কি যে কোনও সময় এ ভাবে তলিয়ে যেতে পারেন ? বিদিশার নিথর দেহ মিলেছে বুধবার বিকেলে। ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁকে প্রথম দেখেন ফ্ল্যাটমেট এবং হাতেগোনা কয়েক জন কাছের বন্ধু। সেই থেকেই রাতের ঘুম উড়েছে তাঁদের। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠছে মাত্র ২০-তে ফুরিয়ে যাওয়া বন্ধুর মুখ। আতঙ্ক কাটাতে পাশে বসিয়ে রাখছেন মা বা বাড়ির অন্য কোনও সদস্যকে। আর যাঁরা এই শহরে একা? পেশার কারণে পরিবারের থেকে দূরে? এক বন্ধুর দাবি, এমন কয়েকজন মডেল শেষকৃত্য থেকে ফিরে এক জনের বাড়িতে সবাই মিলে থেকেছেন। একা থাকার সাহস সে দিন আর কারও ছিল না। ভয়ে, আতঙ্কে, অবসন্ন তাঁরাও।
বিদিশাকে হারিয়ে বিধ্বস্ত এমনই এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি ভাল নেই। ক্রমশ মনের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। সারা ক্ষণ অজানা ভয়, আতঙ্ক গ্রাস করে রয়েছে। কোনও মতে খাচ্ছি। চোখ বন্ধ করলেই বিদিশা সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে ফেলছি। মাকে পাশ থেকে নড়তেই দিচ্ছি না। আত্মীয়দের সমানে ফোন করছি। তাঁদের আসতেও বলেছি বাড়িতে। তাঁরা সবাই আসছেন।’’
পরপর রাত জাগা, ভয়, মানসিক চাপে কাহিল হয়ে পড়েছেন বিদিশার ওই বান্ধবী। কথা ভুলে যাচ্ছেন। বলতে বলতে কথার খেই হারিয়ে ফেলছেন। তরুণীর দাবি, তিনিই বিদিশার সবচেয়ে পুরনো বন্ধু। ২০১৮-য় আলাপ। একে অন্যকে কাজের খোঁজ দিতেন। তাঁর বাড়িতে বিদিশা বহু বার থেকেছেন। এখন তাঁর মনে হচ্ছে, বিদিশার অনেক কিছু বলা বাকি ছিল।