মঞ্জুষা নিয়োগী এবং বিদিশা দে মজুমদার।
বুধবার ঝুলন্ত দেহ মিলেছে বিদিশা দে মজুমদারের। শেষকৃত্য বৃহস্পতিবার। সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই নতুন অঘটন। পল্লবী দে, বিদিশার মতোই একই ভাবে নিজের ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে আরও এক মডেল-অভিনেত্রী মঞ্জুষা নিয়োগীকে। আনন্দবাজার অনলাইনকে তাঁর মা বলেছেন, ‘‘শুধু বলত বিদিশার কথা। ওরা খুব বন্ধু ছিল। ও চলে যাওয়ার পরই মৃত্যুর বাসনা আরও বেশি জেগে ওঠে আমার মেয়ের মধ্যে।’’ মঞ্জুষার মায়ের আরও দাবি, ‘‘ও আমাকে বলেছিল, ‘পল্লবীর বাড়িতেও সাংবাদিকরা এসেছিল, তোমার বাড়িতেও আসবে।’ আমি ওকে কত করে বোঝাতাম। কোনও লাভ হল না।’’ প্রথমে পল্লবী এবং তার পর বিদিশার মৃত্যুতেই নাকি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন মঞ্জুষা। এমনটাই জানিয়েছেন তাঁর মা।
মঞ্জুষার মায়ের এই কথাতেই আপত্তি বিদিশার মডেল-বন্ধুদের। আনন্দবাজার অনলাইনে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। নাম গোপন রাখার শর্তে মুখ খুলেছেন একাধিক জন। কনফারেন্স কলে প্রত্যেকেরই দাবি, ‘‘বন্ধুত্ব দূরের কথা, বিদিশা-মঞ্জুষা একসঙ্গে কাজ করেছে কি না, তাই নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আমাদের। মঞ্জুষার ফেসবুক দেখে জেনেছি, বেশি দিন এই পেশায় আসেননি ওই তরুণী। তা ছাড়া, বিদিশার স্বভাব ছিল, যার সঙ্গে আলাপ হত তার সঙ্গেই ছবি তুলত। সেটা ফেসবুকে পোস্টও করত। আমরা কোনও দিন ওর ফেসবুকে মঞ্জুষার কোনও ছবি দেখিনি। নামও শুনিনি বিদিশার মুখে।’’
সদ্য বন্ধুহারা। সেই মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার আগেই বিদিশাকে নিয়ে মঞ্জুষার মায়ের এই বক্তব্য। মডেল-বন্ধুরা প্রত্যেকেই রীতিমতো বিরক্ত। কেউ কেউ এমনও প্রশ্ন করেছেন, ‘‘প্রচারের আলো গায়ে মাখতেই মঞ্জুষার মা বিদিশার নাম নেননি তো? তিনি হয়তো সম্পূর্ণ ভুল তথ্য দিচ্ছেন। দেখুন, হয়তো ঘরের অন্য কারণ লুকোতে সচেতন ভাবেই সংবাদমাধ্যমে এ কথা বলেছেন। এতে সবার নজর অন্য দিকে ঘুরে যেতেও পারে।’’ প্রশ্ন তোলার পিছনে যুক্তিও দিয়েছেন সবাই। তাঁদের মতে, অনেকেরই প্রিয় মানুষ থাকেন। তাঁদের অকালপ্রয়াণে শোকাহতও হন। অবসাদে ডুবে যান। এই মুহূর্তে যেমন বিদিশার বন্ধুদের অবস্থা। তার মানেই এ বার তাঁরাও একে একে মৃত্যুর পথে হাঁটবেন? মঞ্জুষার থেকেও তাঁরা তো বিদিশার অনেক বেশি কাছের!
মডেলরা জানেন, এই পেশা ভীষণ অনিশ্চয়তার। তার পরেও তাঁরা ভালবেসে এই পেশাকেই আঁকড়ে বেঁচে থাকেন। শুরুতে সবাইকেই লড়াই করতে হয়। বিদিশার বন্ধুরাও করেছেন। কাজ না থাকলে দাঁতে দাঁত চেপে অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু লড়াই থেকে সরে যাননি। সেই জায়গা থেকেই তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘এই মডেল-অভিনেত্রী আদৌ এক বছর কাজ করেছেন তো? শুরুতে একটুও লড়াই করবেন না!’’ খবরে প্রকাশ, মঞ্জুষার বাবা সরকারি কর্মী। স্বামী চিত্রগ্রাহক। আর্থিক অসচ্ছলতা নেই। অর্থনৈতিক চাপও নেই। সে সব জেনেই সবার প্রশ্ন, তা হলে কিসের জন্য মঞ্জুষা এত অবসাদে ডুবে গিয়েছিলেন?
পাশাপাশি আরও একটি আশঙ্কাও গেঁথে যাচ্ছে বিদিশার বন্ধুদের মনে। মঞ্জুষার মৃত্যু বিদিশা মৃত্যুরহস্যকে ঢেকে দেবে না তো? এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অন্যায় করেও ছাড়া পেয়ে যাবেন না তো অনুভব বেরা? প্রত্যেকেই বিদিশার বর্তমান প্রেমিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে তাঁর কড়া শাস্তি চাইছেন। একই সঙ্গে নিজেদের মতো করে খতিয়ে দেখছেন, পল্লবী, বিদিশা, মঞ্জুষার মৃত্যু। তাঁদের সন্দেহ, কোনও ভাবে তিন জনের মৃত্যু এক সুতোয় গাঁথা নয় তো?