তাঁর বাবা সতীশ পেডনেকর ছিলেন মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র ও শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী। ওরাল ক্যনসারে মৃত্যু হয় তাঁর। এর পর তাঁর মা সুমিত্রা সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়েছিলেন তামাকবিরোধী প্রচারে।
সেই প্রত্যয়ের অংশীদার পরবর্তী কালে হয়েছিলেন মেয়েও। বলিউডে ক্যামেরার পিছনে দীর্ঘ দিন থাকার পরে ভূমি পেডনেকর রাতারাতি ধরা দিয়েছিলেন নায়িকা রূপে।
ভূমির জন্ম ১৯৮৯-এর ১৮ জুলাই। তাঁর প্রাথমিক পড়াশোনা জুহুর আর্য বিদ্যামন্দির স্কুলে। লেখাপড়ায় মেধাবী ভূমির আগ্রহ ছিল পড়াশোনার বাইরে সৃষ্টিশীল কাজেও।
সেইসঙ্গে তাঁর নেশা ছিল সিনেমা। অভিনয়ের থেকেও তাঁকে বেশি আকর্ষণ করত ক্যামেরার পিছনে যাবতীয় কারিগরি ও কারসাজি।
মেয়ের আগ্রহের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াননি বাবা মা। ভূমিকে ভর্তি করে দেওয়া হল হুইসলিং উডস ইন্টারন্যাশনাল-এ।
সুভাষ ঘাইয়ের এই প্রতিষ্ঠানে অভিনয় শেখার কোর্স ছিল মহার্ঘ্য। মেয়েকে পড়ানোর জন্য আর্থিক ঋণও নিতে হয় ভূমির পরিবারকে।
কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানে ভাল লাগত না ভূমির। নির্ধারিত দিনের তুলনায় উপস্থিতি কম থাকায় নাম বাদ পড়ল তাঁর।
বছর দেড়েকের মধ্যে তিনি যোগ দিলেন যশরাজ ফিল্মসে। নিজের উপার্জনে ভূমি শোধ করলেন এডুকেশন লোন।
সহকারী পরিচালক হিসেবে ছ’বছর ভূমি কাজ করেছেন যশরাজ ফিল্মসে। তাঁর দায়িত্ব ছিল ছবির জন্য অভিনেতা অভিনেত্রী বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় সামিল হওয়া।
কুশীলবদের বাছাই করতে করতে ভূমি নিজেই এক দিন যশরাজ ফিল্মসের ছবির নায়িকা হয়ে গেলেন। ২০১৫ সালে মুক্তি পেল আয়ুষ্মান খুরানার বিপরীতে ভূমির প্রথম ছবি ‘দম লগা কে হইশা’।
ছবির জন্য এমন নায়িকা দরকার ছিল, যিনি ওজনের দিক দিয়ে একটু ভারী হবেন। সে কথা মাথায় রেখে বেছে নেওয়া হয় ভূমিকেই।
ছবির কাজ শুরুর আগে তাঁকে আরও ১২ কেজি ওজন বাড়াতে হয়। তবে যেমন রাতারাতি ওজন বাড়িয়েছিলেন, সে রকমই ওজন কমিয়েও ফেলেছিলেন।
প্রথম ছবিতে ভূমির সহজ সাবলীল অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে নেয়। তার পরেও বেশি ছবিতে সই করেননি ভূমি।
দু’বছর পরে মুক্তি পায় দ্বিতীয় ছবি ‘টয়লেট:এক প্রেম কথা’। এই ছবিতে অক্ষয় কুমারের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেন ভূমি।
এর পর ‘শুভ মঙ্গল সাবধান’, ‘লাস্ট স্টোরিজ’-এই নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন ভূমি। প্রথম থেকেই তিনি ছবি করেছেন বেছে বেছে। নায়িকাপ্রধান চিত্রনাট্যই প্রাধান্য পেয়েছে তাঁর পছন্দতালিকায়।
‘সোনচিড়িয়া’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ভূমি বন্দুক চালাতেও শেখেন। আবার ‘সাঁড় কী আঁখ’ ছবিতে তীব্র গরমে প্রস্থেটিক লাগিয়ে শুটিং করে ভূমির ত্বকে অ্যালার্জি দেখা দিয়েছিল। তবুও হার মানেননি ভূমি। অভিনয় করে গিয়েছেন যাবতীয় সমস্যা নিয়েই।
‘বালা’ এবং ‘পতি পত্নী অউর ওহ’ ছবিতেও ভূমির অভিনয় বাজিমাত করে বক্স অফিস এবং দর্শকমহলে। তথাকথিত বলিউডসুলভ গ্ল্যামার না থেকেও জনপ্রিয়তার প্রথম সারিতে জায়গা পেতে তাঁর অসুবিধে হয়নি।
নিজের সাফল্যের পিছনে পরিবারের অবদানের কথা বার বার বলেছেন ভূমি। বাবা যখন মারা যান, ভূমির বয়স ১৮ বছর। তাঁর বোন সমীক্ষা ১৫ বছরের। পরিবারের হাল শক্ত হাতে ধরেন তাঁদের মা।
মাকে নিজেদের বন্ধু বলেই মনে করেন ভূমি ও সমীক্ষা। দুই মেয়ের স্বপ্নপূরণের পথে যিনি সব সময় পাশে থেকেছেন। সমীক্ষা পেশায় আইনজীবী। তাঁর সঙ্গেও ভূমির সম্পর্ক অন্তরঙ্গ।
এক সাক্ষাৎকারে ভূমি মজা করে বলেছেন, বোনের জন্যই তাঁকে সারা জীবন সিঙ্গল থেকে যেতে হবে। কারণ, যাঁকেই তাঁর মনে ধরে, বোন সমীক্ষা এক কথায় খারিজ করে দেন!
তবে রসিকতা করলেও ভূমি এখনই সম্পর্কে বাঁধা পড়তে চান না। বলিষ্ঠ নায়িকা হিসেবে নিজের জায়গা ধরে রাখাই এখন তাঁর জীবনে ‘বুলস আই’।