রুক্মিণী মৈত্র। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দুর্গাপুজো আসন্ন। এ দিকে আরজি কর-কাণ্ডে শহরের পরিস্থিতি অস্থির। লাগাতার নাগরিক প্রতিবাদের পাশাপাশি পুজো বয়কট করার ডাক দিয়েছেন কেউ কেউ। পাশাপাশি, টলিউডে যৌন হেনস্থার অভিযোগে তোলপাড়। পুজো নিয়ে কী ভাবছেন অভিনেত্রী রুক্মিণী মৈত্র?
সম্প্রতি বিদেশে ছুটি কাটিয়ে শহরে ফিরেছেন রুক্মিণী। তার পরেই শুরু হয়ে গিয়েছে তাঁর নতুন ছবি ‘টেক্কা’র প্রচার। রুক্মিণী বললেন, ‘‘এখনও কিছুই ভেবে উঠতে পারিনি। শহরে ফিরেই পরিবারে কিছু সমস্যা হয়। এখন তো ছবির প্রচারে ব্যস্ত হয়ে যাব।’’ আরজি কর আবহে সাধারণ মানুষের একাংশ উৎসবের বিপক্ষে। রুক্মিণীর মতে, কেউ কোনও বিষয়কে সমর্থন করবেন, না কি তার বিরোধিতা করবেন, সেটা ব্যক্তির নিজস্ব সিদ্ধান্ত। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘কেউ চাইলে উৎসবে অংশ না নিতেই পারেন। সেটা তাঁর সিদ্ধান্ত। তার জন্য কেউ তাঁকে অসম্মান করবে না।’’
তবে একই সঙ্গে রুক্মিণী বিশ্বাস করেন, উৎসব খুবই সীমিত সংখ্যক মানুষের কাছে ‘উৎসব’ হয়ে ওঠে। রুক্মিণী বললেন, ‘‘সমাজের খুব ছোট্ট একটা অংশ অর্থনৈতিক দিক থেকে সুরক্ষিত। তাঁরা আগামী এক বছর কিছু না করলেও হয়তো কোনও সমস্যা হবে না।’’ কিন্তু অভিনেত্রীর আশঙ্কা ক্ষুদ্র বিক্রেতাদের সেই অংশকে নিয়ে, যাঁরা পুজোর কয়েক দিনের উপার্জনের উপর নির্ভর করে আগামী কয়েক মাসের পরিকল্পনা করেন। রুক্মিণী বললেন, ‘‘উৎসবে ফিরতে বলছি না। কিন্তু, এই মানুষগুলোর দিকে সাহায্যের হাতটা বাড়িয়ে দিই, তা হলে হয়তো মানুষ হিসেবেও আমরা আরও একটা ধাপ এগিয়ে যাব।’’ আরজি করের ঘটনাকে মনে রেখেই রুক্মিণী জানালেন, ভাল-খারাপের মিশেলেই সমাজ। কিন্তু কোনও একটি খারাপ ঘটনাকে ভাল করতে গিয়ে আরও একাধিক খারাপ পদক্ষেপের বিরোধী তিনি।
টলিপাড়ায় একের পর এক নারীনিগ্রহের ঘটনা সম্পর্কে অবগত রুক্মিণী। এক দিকে ইন্ডাস্ট্রিতে নারীসুরক্ষা বজায় রাখতে টলিপাড়ার মহিলা শিল্পীরা সংগঠন তৈরি করেছেন। অন্য দিকে, সম্প্রতি হেমা কমিটির আদলে রাজ্যে একটি কমিশন তৈরির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তী। রুক্মিণী বললেন, ‘‘খুবই ভাল উদ্যোগ। সুদীপ্তাদি (অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী) আমাকে সে দিনই বিষয়টা জানিয়েছেন। আর আমার মনে হয়, এই ধরনের সংগঠনে নিরপেক্ষ একটি প্যানেলও থাকা উচিত।’’
রুক্মিণীর মতে, অনেক দিন আগেই ইন্ডাস্ট্রিতে নারীসুরক্ষার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘যেটা ঘটেছে, সেটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক! দুঃখের বিষয়, কিছু একটা ঘটে গেলে তখন আমরা নড়েচড়ে বসি। দেরি হলেও সেটা শুরু হয়েছে দেখে আমি খুব খুশি।’’ রুক্মিণী জানালেন, কেরিয়ারের শুরু থেকেই তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে নারীসুরক্ষার পক্ষে বার্তা দিচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ বললেন, ‘‘২০১৭ সালের ঘটনা, কিন্তু আমার এখনও মনে আছে। কোনও একটি প্রতিযোগিতায় আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, নিজের জন্য কী করার ইচ্ছা জানতে চাওয়া হয়। অনেকেই ভেবেছিলেন, আমি নায়িকাসুলভ কোনও উত্তর দেব। আমি বলেছিলাম, আমি নারীসুরক্ষার ক্ষেত্রে কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে চাই।’’
দেবের প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত রুক্মিণী। শুটিংয়ের সময় মহিলা শিল্পীদের সুবিধার জন্য তাঁদের প্রযোজনা সংস্থা যে বাড়তি সুবিধা ফ্লোরে রাখে, সে কথা অনেকেরই জানা। রুক্মিণী বললেন, ‘‘মহিলাদের সুরক্ষা বা হাইজিন শুধু নয়, আমরা কোনও প্রজেক্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নারীসুরক্ষার বিষয়টি খেয়াল রাখি।’’ শিল্পীদের সুবিধার্থে তাই প্রযোজনার সঙ্গে নিজেও জড়িয়ে থাকেন রুক্মিণী। বললেন, ‘‘পুরুষ এবং মহিলা, প্রত্যেকেই যেন সঠিক সময়ে গাড়ি পান, ভাল খাবার পান— এ রকম কিছু জিনিস ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়। কারণ, একজন মানুষকে ভাল এবং সুরক্ষিত পরিবেশ দিলে আমার বিশ্বাস, তিনিও নিজের সেরাটা দিতে পারেন।’’
ইন্ডাস্ট্রিতে নারীসুরক্ষা বজায় রাখতে অবশ্যই পদক্ষেপ করা উচিত বলে মনে করেন রুক্মিণী। তবে ‘চ্যাম্প’ ছবির সময় থেকেই যে তিনি নিজের সংস্থার মাধ্যমে সেই প্রচেষ্টা শুরু করেছেন বলে দাবি করলেন। রুক্মিণীর কথায়, ‘‘নিজেদের ঢাক পেটাতে চাই না। কিন্তু আমি একটা ইতিবাচক উদ্যোগ বা একটা ছোট্ট পদক্ষেপ নিলে চারজন সেটা দেখেও আরও ছড়িয়ে দিতে পারে। যা আরও কিছু সংখ্যক মানুষকে হয়তো অনুপ্রাণিত করবে।’’
রুক্মিণী নিজেও একাধিক ছবি দেবের সঙ্গে সহ-প্রযোজনা করেছেন। জানালেন, প্রযোজনা সংস্থার তরফে ‘বাঘা যতীন’ ছবির জন্য প্রায় দু’-তিন হাজার অভিনেত্রীর অডিশন নেওয়া হয়। রুক্মিণী বললেন, ‘‘সংস্থার কর্মীদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয় যে, কাজের বাইরে কোনও অভিনেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। আর আগামী দিনেও একই নিয়ম জারি থাকবে।’’