Soumitrisha Kundu

বিলাসিতা না হোক, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানটা যেন নিশ্চিত করতে পারে সরকার: সৌমিতৃষা কুন্ডু

চলতি নির্বাচনকে মাথায় রেখে শুরু হয়েছে আনন্দবাজার অনলাইনের বিশেষ বিভাগ ‘ভোটের দিব্যি’। নির্বাচন নিয়ে তাঁদের মনোভাব ব্যক্ত করছেন আপনাদের পরিচিত মুখেরা। এ বারে ভোট নিয়ে লিখলেন অভিনেত্রী সৌমিতৃষা কুন্ডু।

Advertisement

সৌমিতৃষা কুন্ডু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৪ ০৯:০২
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

‘ভোট’, ‘রাজনীতি’ শব্দগুলো বড্ড ভারী। এর সঙ্গে জটিলতাও জড়িয়ে রয়েছে। আমি খুব ছোট্ট মানুষ। সকলকে আনন্দ দেওয়ায় বিশ্বাসী। তবে আমার মনে হয়, ভোটটা সবার দেওয়া উচিত, সকলকে দিতে দেওয়া উচিত।

Advertisement

অভিনয় আমার পেশা। সেই স্বপ্ন দেখেই ছোট থেকে বড় হয়েছি। একই সঙ্গে, ছোট থেকেই আমি রাজনীতি নিয়ে সচেতন। আমার চারপাশে কী ঘটছে, কেন ঘটছে, তা নিয়ে আগ্রহ ছিল বরাবর। খুব ছোট থেকেই একটি দলের আর্দশের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ি। গত বছর প্রথম বার আমি ভোট দিই। নিজের পছন্দের দলকে ভোট দিতে পেরে ভাল লেগেছিল। আসলে যে কোনও প্রথমই যে ভীষণ ‘স্পেশ্যাল’! সাধারণত অনেকের বাড়িতে দেখা যায়, বাবা-মায়ের পছন্দ কিংবা তাঁদের রাজনৈতিক মতাদর্শ সন্তানকে প্রভাবিত করে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো। আমি মতাদর্শ নিয়ে কিংবা আমার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য মা-বাবাকে জোরাজুরি করি রীতিমতো। তবে হ্যাঁ, তাঁরা আমার কথা শোনেন বলে মনে হয় না।

নতুন প্রজন্মের উপর যেমন সমাজের একটা দাবি থাকে। আশা করা হয়, তারা যুগ পাল্টাবে কিংবা দিন বদল করবে। কিন্তু, এই নতুন ভোটারদেরও সরকারের কাছে কিছু চাওয়া বা পাওয়ার থাকে। তার মধ্যে যে বিষয়ে লাগাম টানা উচিত বলে আমার মনে হয়, সেটা মূল্যবৃদ্ধি। যে ভাবে প্রতিদিন সব কিছুর দাম বাড়ছে, সেটা আমার কাছে চিন্তার। আমি আজকাল দেখছি, বড়লোকেরা আরও ফুলেফেঁপে উঠছেন। অন্য দিকে, গরিবের দু’বেলার অন্নসংস্থান করতে কালঘাম ছুটছে। বিলাসিতা না-ই বা পেলাম জীবনে, তবে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানটা যেন নিশ্চিত করতে পারে সরকার। আরও একটা জিনিস আমাকে ভীষণ ভাবাচ্ছে, সেটা হচ্ছে উত্তরোত্তর করের বৃদ্ধি। মানুষ রাখবে কত টাকা, আর দেবে কত টাকা? আমাকে কর দিতে হয়। নিশ্চয়ই করের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু যে গতিতে কর বাড়ছে, তাতে সাধারণ মানুষের সমস্যাই হয়।

Advertisement

তবে ছোটবেলায় ভোটের দিনটা নিয়ে আমার খুব উত্তেজনা থাকত। বাবা-মার সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে যেতাম। আর নিজের আঙুলে ভোটের কালি লাগিয়ে দেওয়ার জন্য খুব জেদ করতাম। আবার মা-বাবাকে নির্দেশ দিতাম কোন চিহ্নে তাঁরা ভোট দেবেন সে ব্যাপারে। সে সময় কে সরকার গঠন করছে, কে ক্ষমতায় আসছে— এ সব নিয়ে আলোচনা হত। আমার মনে হয়, ভেবেচিন্তে ভোট দেওয়াটা জরুরি। কোনও সরকারই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। সমস্যা সব জায়গাতেই রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে দেখে নিতে হয়, কাকে ভোট দিলে আমি একটু কম সমস্যায় থাকব! যাকে ভোট দিলে একটু কম খারাপ থাকা যায়, তাকেই নির্বাচন করা উচিত।

যদিও ‘রাজনীতি’ শব্দটা নিয়ে অনেক ভারী ভারী তত্ত্ব বা ন্যারেটিভ রয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয়, রাজনীতি হল শেষ পর্ষন্ত জনসেবা। আসলে মানুষের চাহিদা খুব বেশি নয়, তাঁরা চান যাঁকে তাঁরা নির্বাচিত করছেন, তিনি যেন পাশে থাকেন। আমার মনে হয়, মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছেন। আগে লোকে ভোট দিতে যেতেন না। এখন লোকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভোট দিতে যান। এই পরিবর্তনটা আমি লক্ষ করেছি।

আমি যে পেশার সঙ্গে যুক্ত, তা হল অভিনয়। সেই জগতের প্রচুর মানুষ প্রতি বছর রাজনীতির ময়দানে নামেন। ভোটে লড়াই করেন, কেউ কেউ জেতেন। তবে তাঁদের কাজের সুযোগ হওয়ার আগেই তাঁদেরকে নিয়ে ট্রোল যেন বড্ড বেশি হচ্ছে। যে সব অভিনেতা-অভিনেত্রী ভোটে টিকিট পান, তাঁদের বোধশক্তি দলের বিচারে নিশ্চয়ই আমাদের থেকে অনেক বেশি। সেই কারণেই তাঁদের ভোটে লড়তে পাঠানো হয়। অন্য অনেক পেশার মানুষও তো আসেন রাজনীতিতে! কিন্তু অভিনেতা-অভিনেত্রী দেখলেই এতটা সংশয় কেন? আর রাজনীতি মানে তো মানবধর্ম, তাই যে কোনও ক্ষেত্রের মানুষ যোগদান করতে পারেন। এবং তাঁরা যদি মানুষকে দেওয়া কথা রাখতে পারেন, তা হলে সমস্যাটা কোথায়? আসলে এ সবের উৎপত্তি হয় সমাজমাধ্যম থেকে। বর্তমান সময়ে সমাজমাধ্যমটা ‘চা ব্রেক’-এর জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চায়ের আসরে যেমন ঠাট্টা-ইয়ার্কি চলে, এটাও তেমন হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।

সমালোচনা, কাটাছেঁড়া চলবে। তবে এটাও তো মিথ্যে নয় যে, এতগুলো পার্টি, এত প্রার্থী এই গরমের মধ্যে খেটে প্রচার করছেন। সেটা তো মানুষেরই জন্য, তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। যেটা আমার মনে হয়, অন্তত এই ভোটের সময়টা আসলে বোঝা যায়, মানুষের ঠিক কী প্রয়োজন।

নিজে কখনও সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত পারিনি। অনেক সময় ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে অনেকের হাতেখড়ি হয়। আমার সেই অবকাশ হয়নি। সেন্ট পলস কলেজে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হই। কিন্তু তত দিনে আমার সিরিয়ালের কাজ চলছিল জোরকদমে। কাজ ও পড়াশোনা, দুটোই একসঙ্গে চালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। তাই ছ’মাসের মধ্যে সেন্ট পলস কলেজ ছেড়ে ওপেন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই। যদি কলেজে পড়তাম, তা হলে নিশ্চয়ই রাজনীতি করতাম।

আমার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আদৌ কতটা ভাল? চাকরি নিয়ে সমস্যার কথা প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু এই সমস্যা মান্ধাতার আমল থেকে শুনে আসছি। কিছু সমস্যা থেকেই যায়, যা মেটার নয়। বিতর্ক, সমালোচনা চলবেই। এই গরমে উত্তাপ আরও খানিকটা যেন বেড়ে গিয়েছে রাজনীতির তাপে। কিন্তু, এত কিছুর মধ্যে যে জিনিসটা আমার ভাল লাগে যখন ভোটের ফল প্রকাশিত হয়। জয়ী দলের সমর্থকেরা যখন আবির মেখে উল্লাসে মেতে ওঠেন, সেটা দেখতে ভাল লাগে। তখন মনে হয়, গণতন্ত্র আর রঙের উৎসব মিলেমিশে একাকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement