(বাঁ দিকে) চালচিত্র ছবিতে জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। সুদীপ মুখোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
বাংলা ছবিতে কারও কণ্ঠস্বর ডাবিংয়ের ইতিহাস দীর্ঘ। কখনও কখনও তা নিয়ে বিতর্কও দানা বেঁধেছে। তবে এ বার কোনও বিতর্ক নয়, বরং নেহাত কৌতূহলবশত দুই অভিনেতাকে নিয়ে সমাজমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে। ‘অপরাজিত’ ছবিতে জীতু কমলের কণ্ঠস্বর ডাবিং করেছিলেন চন্দ্রাশিস রায়। কেউ কেউ সেই প্রসঙ্গকেও টেনে এনেছেন। শুরু হয়েছে চর্চা।
প্রেক্ষাগৃহে চলছে প্রতিম ডি’গুপ্ত পরিচালিত ছবি ‘চালচিত্র’। এই ছবির শেষ লগ্নে পর্দায় নজর কেড়েছেন বাংলাদেশি অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। সমাজমাধ্যমে কেউ কেউ দাবি করেছেন, ছবিতে অপূর্বের কণ্ঠস্বরটি ডাব করেছেন টলিপাড়ার অভিনেতা সুদীপ মুখোপাধ্যায়। ছবির শেষে সুদীপকে ক্রেডিট দিয়েছেন পরিচালক। এ দিকে অপূর্বের অনুরাগীদের দাবি, ছবিতে অভিনেতার কণ্ঠস্বরই তাঁরা শুনেছেন।
বিষয়টা কী? জানতে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে প্রতিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অপূর্বের কণ্ঠস্বর যে তিনি সুদীপকে দিয়ে ডাব করিয়েছিলেন, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন প্রতিম। তবে তিনি জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত ছবিতে অপূর্বের কণ্ঠস্বরকেই রাখা হয়েছে। প্রতিম বললেন, ‘‘শুটিংয়ের সময় অডিয়ো খুব স্পষ্ট ছিল না। ফলে ছবির সঙ্গীতের কাজ এগোতে পারছিলাম না। এ দিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য তখন অপূর্ব কলকাতায় ডাবিংয়ের জন্য আসতে পারবে কি না, সেটাও বুঝতে পারছিলাম না।’’ অগত্যা ছবির স্বার্থেই সুদীপের শরণাপন্ন হতে হয় প্রতিমকে। এক দিনেই অপূর্বের অংশের ডাবিং করে দেন সুদীপ। প্রতিমের কথায়, ‘‘দু’জনের কণ্ঠস্বরের ধরনটা খুব মেলে। সেই ভাবনা থেকেই কাজটা করা। তবে আমি সুদীপদাকে এটাও জানিয়েছিলাম যে অপূর্ব ডাবিং করলে আর সুদীপদার কণ্ঠস্বর রাখা হবে না।’’
‘চালচিত্র’ ছবির জন্য ডাবিং করছেন সুদীপ মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
আসলে প্রথমে ছবির ট্রেলারে সুদীপের কণ্ঠস্বরই রাখা হয়। কিন্তু তার পর অপূর্ব কলকাতায় আসার ভিসা পান। তবে মজার বিষয়, ছবির জন্য তাঁর অংশের ডাবিং অভিনেতা শেষ পর্যন্ত ঢাকায় বসেই সেরেছিলেন। কলকাতা থেকে তাঁকে পরিচালনা করেছিলেন প্রতিম। পরিচালক বললেন, ‘‘দু’দিনে আমরা ডাবিংটা শেষ করেছিলাম। তার পর অপূর্বের কণ্ঠস্বর দিয়ে আমরা ট্রেলারটাও নতুন করে প্রকাশ করি।’’
প্রতিমের ছবিতে আগে অভিনয় করেছেন সুদীপ। ছবিতে তাঁর ডাবিং না থাকলেও প্রতিম ছবির শেষে তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। পরিচালক বললেন, ‘‘সুদীপদার সঙ্গে তো আমার সেই সম্পর্ক নয়। খুবই সিনিয়র অভিনেতা। তিনি যখন কাজটা আমাদের জন্য করেছেন, তাঁকেও আমি শ্রদ্ধা জানিয়েছি।’’
যাঁকে নিয়ে এত আলোচনা, সেই সুদীপ কি বিষয়টা জানেন? আনন্দবাজার অনলাইনকে অভিনেতা জানালেন যে পরিচালকের থেকে তিনি পুরো বিষয়টা জেনেছেন। তবে এখনও ‘চালচিত্র’ দেখেননি। সুদীপ বললেন, ‘‘আমি প্রথমে অপূর্বকে চিনতাম না। প্রতিমের জন্য ডাবিংয়ে করতে গিয়ে দেখলাম কী অসাধারণ অভিনয় করেছে। সেটা আমি প্রতিমকেও জানাই।’’ এরই সঙ্গে সুদীপ যোগ করলেন, ‘‘আমার ডাব করা ভয়েসটা শুনেই অপূর্ব ডাবিং করেছে। প্রতিম তো আমাকে মেসেজ করে না-ও জানাতে পারত যে আমার কণ্ঠস্বর রাখা হচ্ছে না। কিন্তু ও তো সেটা করেনি। ওর ব্যবহারে আমি অত্যন্ত খুশি হই।’’
দুই অভিনেতার কণ্ঠস্বর নিয়ে দর্শকের কৌতূহল সুদীপ উপভোগ করছেন। তবে তাঁর দাবি, দু’জনের কণ্ঠস্বরের ধরন এক হলেও অপূর্বের থেকে তাঁর শব্দ উচ্চারণে পার্থক্য রয়েছে। তাই অনুরাগীরা সহজেই বুঝতে পারবেন। এই ছবিতে তাঁর কণ্ঠস্বর রাখা হয়নি বলে তাঁর মনে কোনও রকম আক্ষেপ নেই বলেই জানালেন সুদীপ। তিনি বললেন, ‘‘আমি তো অভিনয় করিনি। অপূর্ব অভিনয় করেছে এবং ওরই কণ্ঠস্বর রাখা হয়েছে। এর মধ্যে তো কোনও দোষ নেই।’’