Ashok Kumar

Ashok Kumar: যৌনকর্মীরাই নায়িকা, তাই অভিনয়ে আসতে চাননি অশোককুমার, মৃত্যুদিনে ফিরে দেখা ‘দাদামণি’কে

বোম্বাই তখন ‘দাদামণি’র! তিনি রাস্তায় বেরোলে যানজটে আটকা পড়ে গোটা মায়ানগরী। শুধু মাত্র তাঁর অনুরাগীদের ভিড়ে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২১ ১৪:০২
Share:

২০ বছর আগের ১০ ডিসেম্বর প্রয়াত হন অসংখ্য মহিলার নয়নের মণি, অশোককুমার।

বোম্বাই তখন ‘দাদামণি’র! তিনি রাস্তায় বেরোলে যানজটে আটকা পড়ে গোটা মায়ানগরী। শুধু মাত্র তাঁর অনুরাগীদের ভিড়ে। প্রিয় অভিনেতাকে এক ঝলক দেখবেন বলে রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন তাঁরা!

রাজ কপূরের বিয়ে। বিয়ের মণ্ডপে রাজের নতুন বউকে দেখতে গিয়েছেন অশোককুমার। সব ভুলে নতুন বউ নাকি ঘোমটা সরিয়ে তাঁকে দেখেই বলে উঠেছিলেন, ‘‘অশোক কুমার আপনি! আপনি আসবেন ভাবতেই পারিনি।’’ খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন রাজ কপূর স্বয়ং!

২০ বছর আগের ১০ ডিসেম্বর প্রয়াত হন অসংখ্য মহিলার নয়নের মণি, অশোককুমার। তার আগেই অবশ্য রুপোলি পর্দা থেকে অবসর নিয়েছিলেন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায়।

ইদানীং, কোটি টাকার ক্লাবের কথা আকছার শোনা যায়। কোনও ছবির বাণিজ্য ১ কোটির উপরে হলেই নির্দিষ্ট ক্লাবে তার জায়গা হয়। এখানেও পথিকৃৎ অশোক কুমার। তাঁর অভিনীত ‘কিসমত’ প্রথম হিন্দি ছবি, যেটি ১ কোটি টাকার উপরে ব্যবসা করেছিল। পুরোটাই ‘দাদামণি’-র অভিনয়ের গুণে।
এ হেন অশোককুমার নাকি অভিনয়েই আসতে চাননি! বরং স্বপ্ন দেখতেন, তিনি ছবি পরিচালনা করবেন। কারণ কী? একান্ত সাক্ষাৎকারে অশোক কুমার নিজে বলেছেন, তাঁর সময়ে সবাই মনে করতেন যৌনকর্মীরাই রুপোলি পর্দায় নায়িকা হন। দালালেরা নায়ক! এই বদনামের ভয়ে তিনি কিছুতেই অভিনেতা হতে রাজি ছিলেন না। এমনকি, অভিনয়ে আসার পরে সত্যিই তাঁর বিয়ে ভেঙে যায়। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি, তাঁদের জামাই অভিনয় করবেন!

Advertisement

অশোককুমার নাকি অভিনয়েই আসতে চাননি!

অথচ অভিনয়ের প্রতি এমন বীতশ্রদ্ধ মানুষই পরে সর্বভারতীয় ছবির দুনিয়ায় জায়গা করে নিয়েছিলেন। পুরোপুরি প্রতিভার গুণে। কী ভাবে সম্ভব হয়েছিল সেই অসম্ভব? সেই গল্পও সাক্ষাৎকারে নিজের মুখে জানিয়ে গিয়েছেন ‘দাদামণি’। ১৯৩৬ সালে তাঁর প্রথম ছবি ‘জীবন নাইয়া’ মুক্তি পেয়েছিল। সেই খবর তাঁর খান্ডোয়ার বাড়িতে পৌঁছতেই হুলুস্থুল।

ছবি মুক্তির পরেই বিয়ে ভেঙে যায় অশোককুমারের। এই কারণে তখন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তাঁর মা। বাবা ফতোয়া দিয়েছেন, তাঁকে অভিনয় ছেড়ে চাকরি করতে হবে। এইটুকু বলেই তিনি বসে থাকেননি। ছেলের মতি ফেরাতে সোজা পৌঁছে গিয়েছেন নাগপুরে। তাঁর কলেজের বন্ধু রবিশঙ্কর শুক্লা সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী। ছেলের সমস্ত ঘটনা জানিয়ে চাকরির জন্য বন্ধুর কাছেই আবদার তাঁর।

নাগপুরের মুখ্যমন্ত্রী হতাশ করেননি বন্ধুকে। দু’টি চাকরির প্রস্তাবপত্র দেন তাঁকে। তার একটি ছিল, আয়কর দফতরের অধিকর্তার পদ। মাইনে তখনকার দিনে ২৫০ টাকা! বন্ধু চাকরির হদিশ দিতেই তড়িঘড়ি ফিরলেন অশোক কুমারের বাবা। কড়া নির্দেশ, অভিনয় ছেড়ে যে কোনও একটি চাকরি বেছে নিতে হবে।

Advertisement

বিয়ের মণ্ডপে রাজের নতুন বউকে দেখতে গিয়েছেন অশোককুমার।

এ বার দোটানায় অভিনেতা স্বয়ং। না পারছেন অভিনয় ছাড়তে। না অস্বীকার করতে পারছেন স্বাভাবিক জীবনের হাতছানি! কী করবেন এ বার? নিরুপায় অশোক কুমার বাবাকে নিয়ে সোজা হাজির বম্বে টকিজের প্রতিষ্ঠাতা হিমাংশু রাইয়ের কাছে। সরাসরি বললেন, ‘‘বাবার হুকুম, অভিনয় ছাড়তে হবে। চাকরি করতে হবে।’’ বাইরে তখন অভিনেতার বাবা দাঁড়িয়ে! তিনিও কথা বলতে চান হিমাংশু রাইয়ের সঙ্গে।

এর পরে বেশ কিছু ক্ষণ একান্তে কথা। অশোক কুমারের বাবা যখন বাইরে বেরিয়ে এলেন, সম্পূর্ণ অন্য মানুষ। চাকরির দুটো প্রস্তাবপত্র নিজের হাতে ছিঁড়ে ফেললেন সঙ্গে সঙ্গে। অভিনয়ের অনুমতিও দিলেন ছেলেকে। আশীর্বাদ করে বললেন, ‘‘হিমাংশু বললেন, অভিনয় দুনিয়ায় এর থেকেও বেশি অর্থ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি পাবে তুমি। তোমার মধ্যে প্রতিভা রয়েছে। অনেক সম্মানও পাবে।’’
বাকিটা ইতিহাস। আর নেপথ্যে তুরুপের তাসও একটাই।

ভাগ্যিস সে দিন মত বদলেছিলেন কিংবদন্তি অভিনেতার বাবা!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement