(বাঁ দিকে থেকে) সোহম মজুমদার, দেবজ্যোতি মিশ্র, সোম চক্রবর্তী, অন্বেষা দত্ত গুপ্ত, শিলাদিত্য চৌধুরী, অপেক্ষা লাহিড়ি। নিজস্ব চিত্র।
হাতে গুনে দেখলে দুর্গাপুজোর আর এক মাসও বাকি নেই। ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে বললেও খুব একটা ভুল হয় না। বাঙালির বছরকার উৎসব বলে কথা, চারপাশে এখন সাজ-সাজ রব। শহরও সেজে উঠছে তাল মিলিয়ে। আর শহরে যখন পুজো-পুজো গন্ধ, তখন তার সঙ্গে পুজোর গান না হলে চলে! পুজোর গানের সঙ্গে বাঙালির সখ্য আজকের নয়। নস্টালজিয়ায় বুঁদ হয়ে থাকা বাঙালির কাছে পুজোর গান মানেই শরতের আবাহন। আর সেই গানে যদি বৃষ্টিভেজা প্রেমের ছোঁয়া থাকে, তা হলে তা বাঙালির পছন্দের তালিকায় একেবারে উপরের দিকে জায়গা পায়। শ্রোতাদের জন্য তেমনই এক পুজোর গান নিয়ে এল আশা অডিও। সোহম মজুমদারের লেখা গান ‘বৃষ্টি’। শিলাদিত্য চৌধুরী ও সোম চক্রবর্তীর যুগ্ম সঙ্গীত পরিচালনায় গান গেয়েছেন অন্বেষা দত্ত গুপ্ত। মঙ্গলবার শহরেরই এক নামি ক্যাফেতে প্রকাশ্যে এল সেই গান ও তার মিউজ়িক ভিডিয়ো। গান ও তার মিউজ়িক ভিডিয়ো লঞ্চের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন শিল্পীরা সবাই।
আধুনিক প্রজন্মে রিল, টিকটক ও স্ট্রিমিংয়ের ভি়ড়ে বাঙালির পুজোর গানের রেওয়াজ গত কয়েক বছরে কিছুটা ফিকে হয়েছে। সেই পুরনো পরম্পরার প্রতি শ্রোতাদের ফের আকৃষ্ট করতে পারবেন শিলাদিত্য-সোম? আনন্দবাজার অনলাইনকে শিলাদিত্য বলেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে অন্যান্য গানবাজনা করেছি। পুজোর গান নিয়ে ভাবনাচিন্তা ছিল। অবশেষে এই বছর সেটা করা হল। বাঙালি পুজো মানে তো আবেগে ভেসে যাওয়ার একটা সুযোগ। আর প্রেমের সঙ্গে বৃষ্টির একটা অদ্ভুত যোগ আছে। সেই নরম একটা আবেগের জায়গা থেকেই গানটা বানানো।’’ এর আগে সোমের সঙ্গে গানবাজনা নিয়ে একাধিক কাজ করলেও সুরকার জুটি হিসাবে এই প্রথম একে অপরের হাত ধরলেন শিলাদিত্য ও সোম। আনন্দবাজার অনলাইনকে সোম বলেন, ‘‘প্রযুক্তির কল্যাণে এই প্রজন্মে মিলেমিশে কাজ করাটা অনেক সহজ গিয়েছে। সুরকার জুটি হিসাবে আমাদের পথচলা এই শুরু হল। এর পর তো আরও অনেক চমক আছে।’’ শুধু পুজোর গান উপহার দিয়েই ক্ষান্ত নন শিলাদিত্য-সোম। আগামী কয়েক মাসে বাঙালি শ্রোতাদের চমকে দেবেন তাঁরা, প্রত্যয়ী দুই সুরকার।
অন্য দিকে, বেশ কয়েক বছর পরে বাংলা পুজোর গান গাইলেন অন্বেষা। এখন নতুন গান মুক্তি পাওয়ার জন্য কোনও উপলক্ষ লাগে না। ‘কনটেন্ট’-এর ভিড়ে ভাল গুণগত মানের গান শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়াটাই এখন একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজের গান মুক্তি পাওয়ার মঞ্চে এসে সহমত পোষণ করলেন অন্বেষা। আনন্দবাজার অনলাইনকে অন্বেষা বলেন, ‘‘আমাদের তো অপেক্ষা করতে হত যে কবে প্লেব্যাকের জন্য আমাদের ডাক আসবে। এখন ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম থাকার ফলে কাউকে আর সেই অপেক্ষাটা করতে হয় না। সেটা এক দিক থেকে ভাল। তবে ‘আশা অডিও’-র মতো সংস্থাকে কুর্নিশ, এই ট্রেন্ডে গা ভাসানো প্রজন্মেও পুজোর গানের মতো একটা ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার নিরন্তর প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে তারা।’’ গোটা দেশে একাধিক ভাষার কাজে আপাতত ব্যস্ত অন্বেষা। পুজোয় কলকাতায় থাকা হচ্ছে না। তবে বাঙালিকে ‘বৃষ্টি’ গানটিই উপহার দিয়ে যাচ্ছেন সঙ্গীতশিল্পী।
অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন অভিজ্ঞ সঙ্গীতশিল্পী দেবজ্যোতি মিশ্রও। বরাবর নবীর প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালবাসেন তিনি। তাঁদের থেকে নতুন কিছু না কিছু শেখার ইচ্ছা তাঁর অদম্য। অথচ হাল আমলের শ্রোতাদের একটা বড় অংশ বেশি ঝুঁকছে পুরনো হিট গানের রিমেক বা রিমিক্সের দিকে। নতুন মৌলিক গানের জন্য জায়গা এত সংকীর্ণ, হতাশ লাগে না? আনন্দবাজার অনলাইনকে দেবজ্যোতি বলেন, ‘‘এই প্রবণতাটা নিঃসন্দেহে মাঝে মাঝে ভাবায়। তবে মানুষ কিন্তু এখন কচকচানি শুনে বিরক্তও। এখন কিন্তু আমি অনেককেই দেখি এই ‘ভিজ্যুয়াল নয়েজ়’-কে বর্জন করতে। আমি তো আশাবাদী। গান বাঁচবেই, ভাল গান বাঁচবেই।’’