‘ইউ উইল ডাই অ্যাট টুয়েন্টি’ ছবির দৃশ্য।
শুরু হয়েছিল এই বছরেরই ৫ জানুয়ারি। শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হল ভিন্নধারার ‘আর্টহাউজ এশিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। বাংলা ছবি নিয়ে প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলেও তা আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে দিতেই এই প্রয়াস বলে জানালেন, ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের কর্ণধার শপথ দাস।
কী কী হল এই ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে? বাংলাদেশ থেকে জুরি হিসেবে এসেছিলেন রোকেয়া প্রাচী। ছিল বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মাস্টারক্লাসও। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সম্পর্কে প্রসেনজিৎ আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেছিলেন, “বাংলা ছবির আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছনোর রাস্তাটা আজও স্বাভাবিক নয়। এই উদ্যোগ শপথ দাসের মতো তরুণরা নিচ্ছেন এটাই বড় বিষয়। খুব গুরুত্বপূর্ণ ছবি এসেছে এই ফেস্টিভ্যালে যা দেখাই যায় না। ইন্ডাস্ট্রির সবাই আসুক। ছবি দেখুক।’’
ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই এলেন। সাড়ম্বরে পালিত হল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ ল্যাব ‘প্রোদুইর ও সুদ’-কেও শপথ নিয়ে এসেছিলেন কলকাতায়, প্রথমবার। উদ্দেশ্য ছিল সাতটা সাউথ এশিয়ার প্রজেক্টকে মেনটরিং করা। শুধু কলকাতা কেন, ভারতেও এই উদ্যোগ আগে দেখা যায়নি। আপাতত শীতের কলকাতায় সিনেমাপ্রেমী মানুষদের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের ছবির রসাস্বাদন করাতে পেরে খুশি শপথ...খুশি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকা বাকিরাও।
কোন কোন ছবি পুরস্কার পেল?
বেস্ট শর্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ‘ডার্লিং’ নামক একটি পাকিস্তানি ছবি। বেস্ট ফিচার ফিল্মের শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছে আমজাদ আবু আলালা পরিচালিত আরবি ছবি ‘ইউ উইল ডাই অ্যাট টুয়েন্টি’।’ফ্রেঞ্চ সিনেমা ‘ভিনসেন্ট বিফোর নুন’ পেয়েছে শর্টফিল্ম বিভাগে স্পেশ্যাল মেনশন।
তাহলে কি আর্টহাউজ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের হাত ধরেই বাংলা ছবি আন্তর্জাতিক স্তরে জায়গা করে নিতে চলেছে? আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ছে শপথের গলাতেও। বললেন, “হ্যাঁ। কিছুটা তো বটেই। মেন্টররা যারা এসেছিলেন তাঁরা আবারও আসতে চেয়েছেন। প্রতিযোগীরাও বলেছেন তাঁদের শেখার জন্যও বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম এটি।”
কে এই শপথ? শপথ কলকাতার ছেলে। লোকার্নো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আন্ডার থার্টি প্রোগ্রাম ‘অডিয়েন্স অব দ্য ফিউচার’, এই বিভাগে সারা পৃথিবীর ২৫ জনের মধ্যে ভারত থেকে একমাত্র ডাক পেয়েছিলেন তিনি। পরিচালক বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “সিনেমার প্রতি ওর অদ্ভুত দায়বদ্ধতা আছে।।”
পরের বছর কী একই ভাবে ফেস্টিভ্যালটি এগিয়ে নিতে চান শপথ? বললেন, “পরের বছর একটু আলাদা ভাবে করার প্ল্যানিং রয়েছে। এ বছর যে ভাবে স্টোরিগুলোকে পেয়েছি সেই গঠনটায় একটু পরিবর্তন আনতে চাইছি আমরা। এমন মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইছি যাঁদের পক্ষে এই ফেস্টিভ্যাল সম্পর্কে জানাটাই দুষ্কর।” কারা তাঁরা? “পুরুলিয়ার ছেলে, পূর্ণিয়ার মেয়ে...বা নাগাল্যান্ডের কেউ...মানে প্রান্তিক মানুষের সমকালীন গল্প, টালমাটালের গল্প তাঁদের মুখ থেকেই শোনার...বা তাঁদের চোখ দিয়েই দেখার ইচ্ছা রয়েছে। ইচ্ছা রয়েছে কলকাতায় দু’তিনটি ওয়ার্কশপ করার”, বললেন শপথ। কিন্তু সে সমস্ত মানুষদের পাবেন কোথায়? শপথের কথায়, “সারা দেশে এখন অনেক ছোট ছোট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হচ্ছে। সেখানে যদি কোনও কর্মশালা করা যায়, এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া তো রয়েছেই।”