অপর্ণা সেন
কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার আগামী ২৫ অক্টোবর অভিনেত্রী-পরিচালক অপর্ণা সেনের নামে কি ডাকটিকিট প্রকাশ করবে? বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এমনই খবর ছড়িয়েছে টলিপাড়ায়। ঘটনার সত্যতা জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল অপর্ণাকে। যিনি, দেখা গেল, বিষয়টা সরকারি ভাবে এখনও জানেনই না! অপর্ণার কথায়, “আমিও শুনেছি আমার নামে নাকি ডাকটিকিট প্রকাশিত হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে কিন্তু কোনও ফোন বা চিঠি আসেনি। আমাকে সরকারি ভাবে কেউ কিছু জানায়নি। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারব না।”
ঘটনাচক্রে, অপর্ণা বরাবর কড়া বিজেপি-বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। এমনকি, গত লোকসভা ভোটের আগে তিনি কার্যত পথেও নেমে পড়েছিলেন মোদী-বিরোধী অবস্থান নিয়ে। বিভিন্ন ঘটনায় তাঁর বিজেপি-র বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ পেয়েছে। অপর্ণা তা গোপন করারও কোনও চেষ্টা করেননি। নাম না করেও ‘‘দেশের গণতন্ত্র বর্তমানে সঙ্কটে। কোনও ঘটনার প্রতিবাদও এখন করা যাবে না’’ ইত্যাদি বলে কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন অপর্ণা।২০২০ সালে নাম না করে কেন্দ্রকে বিঁধেছিলেন অপর্ণা। টুইটারে লিখেছিলেন, ‘দয়া করে দেশের কোনও ঘটনার প্রতিবাদ করবেন না। যদি করেন তা হলেই আপনি হয় দেশদ্রোহী আর নয়তো আর্বান-নকশাল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যাবেন। অথবা পাকিস্তানের সমর্থক হিসেবেও প্রতিপন্ন হতে পারেন। নয়তো বলা হতে পারে, আপনি টুকড়ে টুকড়ে গ্যাংয়ের প্রতিনিধি আর না হলে একজন সন্ত্রাসবাদী বা খলিস্তানি। যে কোনও মুহূর্তে আপনাকে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। তাই সাবধান।’
সেই মোদী সরকার তাঁকে সম্মান জানিয়ে তাঁর নামে ডাকটিকিট প্রকাশ করবে— এই বিষয়টিই যথেষ্ট কৌতূহলোদ্দীপক। যা নিয়ে অপর্ণা বলেছেন, “আমি তো বিজেপি-র বিরুদ্ধে আমার স্বাধীন মতামত প্রকাশ করেছি। তার পরেও এই সম্মানের খবর! জানি না। তবে যে কোনও সম্মানকেই আমি সসম্মানে গ্রহণ করি।”অপর্ণার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, সরকারি ভাবে তাঁর কাছে এখনও ডাকটিকিট প্রকাশের খবর আসেনি বটে। কিন্তু তেমনকিছু হলে তিনি সেই সম্মান বর্জন করবেন না। তবে সেই সম্মানকে তিনি গুরুত্ব দেবেন কিনা বা দিলেও কতটা দেবেন, ভিন্ন প্রশ্ন।
সক্রিয় রাজনীতিতে না থাকলেও অপর্ণার রাজনৈতিক মতামত যথেষ্ট ধারাল। একাধিকবার মেরুকরণের রাজনীতির প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এমন প্রশ্নও তুলেছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কিংবা দেশের মুসলিমরাই কেন শুধু আক্রমণের শিকার হচ্ছেন! এক সাক্ষাৎকারে অপর্ণা বলেছিলেন, ‘‘আমি মূলত একজন উগ্র মানবতাবাদী। বিশ্বাস করি ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শে। কিন্তু কখনও কোনও রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সমর্থন করিনি।কারণ, আমি শুধু ইস্যুভিত্তিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি।’’
বস্তুত, অপর্ণার পরিচালিত তাঁর ছবিতেও ছায়া পড়েছে তাঁর রাজনৈতিক চেতনার। ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’-এ সন্ত্রাসবাদ এবং দাঙ্গার কথা তুলে ধরেছিলেন পরিচালক। আবার ‘ঘরে বাইরে আজ’ ছবিতে দলিত মেয়ের লড়াইয়ের কাহিনি প্রকাশ্যে এনেছেন তিনি। মানুষের মনস্তত্ত্ব নিয়ে ছবি করেছেন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে।
বিজেপি বরাবর দাবি করে এসেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাদের ভোট দিয়ে জিতিয়ে এনেছে। তাদের প্রত্যাশা মেটাতেই নাগরিকত্ব আইনে সংশোধন আনা হয়েছে। সেই দাবির বিরোধিতা করে অপর্ণা প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘১৩০ কোটি নাগরিকের মধ্যে কত শতাংশ মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছে? ভারতীয় গণতন্ত্রের একটা অংশ, যারা আমার মতো, তারা মনে করে এই দেশ ধর্মনিরপেক্ষ। আবার একটা অংশ ভেবে নিয়েছে, মুসলিমদের নিজস্ব দেশ আছে কিন্তু হিন্দুদের নেই। এই অংশকে হাতিয়ার করছে বিজেপি!’’
এহেন অপর্ণার নাম এবং ছবি-সহ ডাকটিকিট প্রকাশ করে বিজেপি-শাসিত সরকার তাঁকে সম্মানিত করলে তা এক বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বৈকি!