দেব এবং অনিকেত।
বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে সম্পর্কের সমীকরণ বারেবারেই বদলায়। যে পরিচালক-নায়কের জুটিকে এক সময়ে অবিচ্ছেদ্য ভাবা হচ্ছিল, তাঁদের বার্তালাপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে এমন ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু কোনও ছবির সাংবাদিক সম্মেলনে খোদ পরিচালককে উপেক্ষা করার ঘটনা বোধহয় সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেনি। কিছু দিন আগেই ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’র সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন দেব। তিনি ছবির প্রযোজক। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। এমনকি পরিচালকের নামও সেখানে উচ্চারিত হয়নি। অনিকেতের বক্তব্য, তিনি অনুষ্ঠানটির বিষয়ে কিছুই জানতেন না। ছবিটির ছোট পর্দায় মুক্তির বিষয়টিও তাঁর অজানা ছিল।
দেবের প্রযোজনায় ‘কবীর’, ‘হইচই আনলিমিটেড’ ছবির পরিচালক ছিলেন অনিকেত। তাঁদের সম্পর্কের অবনতির সূত্রপাত হয়, ‘হবুচন্দ্র রাজা...’ ছবির একটি গানের শব্দ বদলানোকে কেন্দ্র করে। ছবির ‘কমলা ঝড়’ গানটির কথা বদলে সেটিকে ‘বোম্বাগড়ের ঝড়’ করেছিলেন দেব। এ ক্ষেত্রে তিনি পরিচালকের মত উপেক্ষা করেই ছবির সুরকার কবীর সুমনকে গানের শব্দ বদলে দিতে বলেন। প্রযোজকের দাবি মেনে সুরকার শব্দ বদলে গানটি রি-রিকর্ডিং করান। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগেই ‘কমলা ঝড়’ বদলে দেওয়া তাৎপর্যপূর্ণ ছিল বইকি। এই বদলকে কেন্দ্র করে প্রযোজক-পরিচালকের চাপানউতোর চলতে থাকে। অনিকেত বলছেন, ‘‘আমি দেবকে স্পষ্ট বলে দিয়েছিলাম, আগের গানটাই রাখতে হবে। নয়তো আমি ছবির সঙ্গে যুক্ত থাকব না। ‘কমলা ঝড়’ রাখা নিয়ে আলোচনা চলার মাঝখানেই হঠাৎ ঘোষণা করা হল, ছবিটা ছোট পর্দায় আসবে। এই ঘোষণার বিন্দুবিসর্গ আমি জানতাম না। এর আগে ট্রেলার লঞ্চের অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রণ পাইনি। হয়তো আমি নিজের দাবিতে অনড় ছিলাম বলেই ডাকা হয়নি। কিন্তু আলোচনা চলার মাঝে ছবি রিলিজ়ের ঘোষণা আমাকে অবাক করেছে! আমি ওই দিন উপস্থিত থাকলে ভাল হত। ছবির মূল কাহিনি যে দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের লেখা, সেটা শুধরে দিতে পারতাম।’’ ছবিতে মুখ্যভূমিকায় রয়েছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায় ও অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়।
দেব বারেবারেই বলছেন ‘হবুচন্দ্র রাজা...’ ছোটদের ছবি। অনিকেতের আপত্তি সেখানেও। ‘‘ছোটদের ছবির মধ্যেই রাজনৈতিক সাবটেক্সট রয়েছে। যেমনটা ‘হীরক রাজার দেশে’তে ছিল। ছবি দেখে ছোটরাও মজা পাবে। আবার বড়রাও বুঝতে পারবে, কোন ঘটনা বা কার আদলে দৃশ্যগুলো তৈরি হয়েছে। দেব পুরো চিত্রনাট্য পড়েছিলেন। হয়তো মানে বুঝতে পারেননি, তাই ছোটদের ছবি বলছেন। ছবির একটি দৃশ্যে মন্ত্রী এসে বলছে, ‘আমি গুর্জর থেকে এসেছি’। তার পর সে যখন রাজসভার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছে, সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করছে... সব কিছুরই রাজনৈতিক কনটেক্সট আছে। এই বিষয়গুলো যদি কেউ বুঝতে না পারেন, তা হলে তাঁর কাছে একটা গান খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভাবেন, ওটা বদলে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’’
ছবিটি ছোট পর্দায় মুক্তি পাওয়া নিয়ে অনিকেতের আপত্তি নেই, ‘‘রিলিজ়ের বিষয়টা প্রযোজকের সিদ্ধান্ত।’’ কিন্তু সেন্সর হয়ে যাওয়া ছবির গানের শব্দ বদলানোর প্রয়োজন কেন পড়ল? পরিচালক নিজেও সে প্রশ্ন রেখেছিলেন প্রযোজকের কাছে। ‘‘আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম ওঁকে। বলেছিলেন, ‘কমলা ঝড়’ কথাটা থাকলে ইডি-ইনকাম ট্যাক্সের ঝামেলা হতে পারে। নির্বাচনের আগে ইডি-ইনকাম ট্যাক্স রেডের কিছু ঘটনা ঘটেছে বইকি। আমার এ সবে ভয় নেই। দেব ব্যবসায়ী, তাই ওঁর হয়তো ভয় ছিল,’’ বক্তব্য অনিকেতের।
অন্য দিকে ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে খবর, ‘হবুচন্দ্র...’র শুটিংয়ের সময় থেকেই প্রযোজক-পরিচালকের মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়। ছবির বাজেট বেড়ে যাওয়া নিয়ে আপত্তি ছিল দেবের। অনিকেত বলছেন, ‘‘খুব কম বাজেটে ওই গ্র্যাঞ্জার আনা হয়েছে। এত কিছুর সঙ্গে আপস করতে হয়েছিল যে বলার নয়। বাজেট বেড়ে যাবে বলে দ্রুত শুটও করতে হয়েছিল।’’
অনিকেত ছবি সম্পূর্ণ করে প্রযোজকের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু গানের কথা ছাড়া আরও কিছু বদলানো হয়েছে কি না, তিনি জানেন না। দেবের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি ছবির পরিকল্পনা ছিল অনিকেতের। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।