নায়কের বোন, প্রত্যাখ্যাত প্রেমিকা বা নায়িকার আত্মীয়া। এই ধরনের ভূমিকাতেই তাঁকে দেখা গিয়েছে বেশি। নায়িকা সেভাবে হতে পারেননি। কিন্তু তাতে বিশেষ আক্ষেপ নেই ফরিদা জালালের। চরিত্রাভিনয়কেই তিনি নিয়ে গিয়েছেন অন্য মাত্রায়। মূলধারার পাশাপাশি তাঁর অনায়াস গতি ছকভাঙা ছবিতেও।
১৯৪৯ সালের ১৪ মার্চ তাঁর জন্ম দিল্লিতে। ১৯৬৫ সালে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ফিল্মফেয়ার আয়োজিত একটি ট্যালেন্ট হান্ট শো-এ। সেই প্রতিযোগিতায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন ফরিদা। পুরুষ বিভাগে শ্রেষ্ঠ হন রাজেশ খন্না।
প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে দর্শকদের মধ্যে ছিলেন প্রযোজক তারাচাঁদ বরজাতিয়া। তিনি ফরিদাকে সুযোগ দেন তাঁর ‘তকদীর’ ছবিতে। হিন্দি ছবিতে আত্মপ্রকাশ করেন পঞ্চগনির সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুল থেকে সদ্য উত্তীর্ণ ফরিদা। ১৯৬৭ সালে মুক্তি পায় ‘তকদীর’।
এর পর ছবির দ্বিতীয় নায়িকা হিসেবে সুযোগ পেতে থাকেন ফরিদা। তবে যে টুকু পরিসর পেয়েছেন,‘বাহারোঁ কি মঞ্জিল’,‘মহল’,‘নয়া রাস্তা’-র মতো ছবিতে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। ‘আরাধনা’ এবং ‘পুরস্কার’ ছবিতে অবশ্য ফরিদা ছিলেন নায়িকার ভূমিকায়। অতীতের ট্যালেন্ট হান্ট-এর সহ-বিজেতা রাজেশ খন্না ‘আরাধনা’-তে ফরিদার নায়ক। ‘পুরস্কার’ ছবিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন জয় মুখোপাধ্যায়ের বিপরীতে।
১৯৭০ সালে মুক্তি পায় ‘গোপী’। এই ছবিতে দিলীপকুমারের বোনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ফরিদা। এরপর থেকে তিনি প্রায় এই ধরনের রোলে টাইপকাস্ট হয়ে যান। ‘পরশ’ ছবিতে তাঁকে দেখা যায় সঞ্জীবকুমারের বোনের চরিত্রে। এক সাক্ষাৎকারে ফরিদা পরে বলেছিলেন, তাঁর মনে হয়েছিল তথাকথিত নায়িকার ভূমিকায় না থাকলেও চিত্রনাট্যে তাঁর চরিত্রের গুরুত্ব অনেক বেশি।
ফরিদা জালালের ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল ‘খোঁজ’, ‘অমর প্রেম’, ‘প্যায়ার কি কহানি’, ‘ববি’, ‘অচানক’, ‘রাজা রানি’, ‘লোফার’, ‘মজবুর’, ‘আলাপ’, ‘কসম খুন কি’-র মতো ছবি।
‘জীবনরেখা’ ছবির সেটে ফরিদার সঙ্গে আলাপ হয় অভিনেতা তবরেজ বরমাভরের। দু’জনে বিয়ে করেন ১৯৭৮ সালে। বিয়ের পরে ফরিদার কাছে কাজের সুযোগ কম আসতে থাকে। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ অবধি ফরিদা ইন্ডাস্ট্রি থেকে সাময়িক বিরতি নেন। তিনি বেঙ্গালুরু পাড়ি দেন। তাঁর স্বামীও অভিনয় ছেড়ে তখন ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
নয়ের দশকে কামব্যাক করেন ফরিদা। অনেক চলচ্চিত্র সমালোচকের মতে, তাঁর অভিনেত্রী-জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস অনেক বেশি সফল। ‘রাজা হিন্দুস্তানি’, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’, ‘কভি খুশি কভি গম’-এর মতো ছবিতে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি।
তবে ফরিদা জালালের কেরিয়ারে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘মাম্মো’। শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত এই ছবি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৪ সালে। সুরেখা সিক্রি, রজিত কপূরের পাশাপাশি এই ছবিতে ফরিদার অভিনয় প্রশংসিত হয়।
চার দশকের বেশি দীর্ঘ কেরিয়ারে ফরিদা জালাল বড় পর্দার পাশাপাশি সমান কৃতিত্বের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ছোট পর্দা এবং ওয়েব সিরিজেও। টেলিভিশনে তাঁর কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘ইয়ে তো হ্যায় জিন্দগি’, ‘দেখ ভাই দেখ’, ‘দ্য গ্রেট মরাঠা’, ‘শরারত’ এবং ‘বালিকা বধূ’।
২০০৩ সালে মৃত্যু হয়েছে ফরিদার স্বামী তবরেজের। তারপর থেকে অভিনয়ে আরও বেশি নিজেকে ডুবিয়ে দিয়ে নিঃসঙ্গতাকে জীবনে বাসা বাঁধতে দেননি তিনি। ফরিদার একমাত্র ছেলে ইয়াসিম অবশ্য বাবা মায়ের মতো অভিনয়ের পেশায় আসতে চান না। (ছবি: ফেসবুক)