সোনালির স্মৃতিচারণায় শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
এই মুহূর্তে আমি ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরে রয়েছি। কলকাতাগামী বিমানের জন্য অপেক্ষা করছি। একটু আগেই শঙ্করকে ফোন করেছিলাম। এটা ভেবে খুব খারাপ লাগছে যে, এ রকম একটা দিনে আমি কলকাতায় আমার বন্ধুর পাশে থাকতে পারলাম না। কলকাতায় পৌঁছেই আমি শঙ্করের বাড়ি যাব।
শঙ্করের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব তো আজকের নয়। আমরা প্রায় একসঙ্গেই অভিনয় জীবন শুরু করেছিলাম। নয়ের দশকে তখন দূরদর্শনের ‘বিবাহ অভিযান’ ধারাবাহিক শুরু হয়েছে। আমি আর শঙ্কর সেখানে অভিনয় করছি। সেই সুবাদে খুব অল্প দিনের মধ্যেই সোনালির সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। ওরা আমার পরিবারের মতো। ওদের মেয়ে সাজি আমার কন্যাসম।
তখন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সংখ্যা কম। মনে আছে, আমি আর শঙ্কর তখন সকালবেলায় একসঙ্গে কাজের খোঁজে প্রযোজক-পরিচালকদের বাড়িতে যেতাম। এখন টলিপাড়ায় এ সব কল্পনাও করা যায় না। আমি গড়িয়াহাটে সোনালির বাপের বাড়ি চলে যেতাম। তার পর সোনালি বা ওর মা আমাকে আর শঙ্করকে খাইয়ে দিতেন। সে পর্ব মিটলে আমরা কাজে বেরোতাম। ফলে সুখেদুঃখে আমাদের দুটো পরিবার যেন একসূত্রে গাঁথা ছিল।
সোনালির সঙ্গে একাধিক ছবিতে কাজ করেছি। পরিচালক অনুপ সেনগুপ্তর বাড়িতে আমাদের মাঝে মধ্যেই আড্ডা হত। সেখানে শঙ্কর-সোনালিও যেত। গুণী অভিনেত্রী ছিল সোনালি। ভারী মিষ্টি দেখতে। আরও একটা জিনিস না বলেলই নয়, সোনালি খুব ভালো নাচ জানত। তনুবাবুর (তরুণ মজুমদার) ছবিতে ও অসাধারণ নেচেছিল। আমার তো মনে হয় চাইলে ও নৃত্যশিল্পী হিসেবেও জনপ্রিয় হতে পারত।
সোনালি-শঙ্করের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের। এক বার একটা ঘটনা ঘটেছিল। কাজের পর আমরা বাড়ি ফেরার জন্য ট্যাক্সি খুঁজছি। কিছু ক্ষণ পর একটা পাওয়া গেল। এ দিকে কোনও এক কারণে ড্রাইভারের সঙ্গে শঙ্করের বচসা শুরু হল। শঙ্কর তো ড্রাইভারকে এই মারে কি সেই মারে! প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিল। সোনালি তখন চিৎকার করে বলল, ‘‘শুভাশিস ওকে থামাও! না হলে আজকে মারাত্মক একটা কাণ্ড ঘটিয়ে বসবে।’’ সে যাত্রায় আমি আর সোনালি শঙ্করকে সামলেছিলাম বলে ট্র্যাক্সি ড্রাইভার রক্ষা পেয়েছিলেন। এ রকম কত মজার মজার ঘটনা আজকে স্মৃতিতে ভিড় করছে।