প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়দের সঙ্গে শ্রীকান্ত মান্না
বাজারে মাছ বিক্রেতাকে অনেকেরই চেনা-চেনা লাগছে। মানুষটা কয়েক দিন আগেও গামছা দিয়ে মুখ আড়াল করে রাখত। এখন খোলা। কিন্তু অনেকেরই তাকে চেনা-চেনা লাগছে কেন?
কারণ তিনি শ্রীকান্ত মান্না। অভিনয়ই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। ২৫ বছর ধরে সুপরিচিত ‘সংস্তব’ নাট্যদলে অভিনয় করছেন। ‘মুষ্টিযোগ’, ‘গুণধরের অসুখ’-সহ সংস্তব-এর অনেক নাটকের অভিনেতা। বাংলা চলচ্চিত্র, টেলিভিশন জগতেও তিনি চেনা মুখ। ‘এই পৃথিবী তোমার আমার’, ‘বেগ ফর লাইফ’, ‘রাজকাহিনী’, ‘গ্ল্যামার’ প্রভৃতি সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে তাঁর অভিনয় সকলের নজর কেড়েছে। শ্রীকান্ত অভিনীত প্লাস্টিক বোতলের ব্যবহার নিয়ে নির্মিত স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘ছিপি’ (দি ক্যাপ) একাধিক পুরস্কার পেয়েছে।
কিন্তু এমন একজন পরিচিত অভিনেতা বাজারে মাছ বিক্রি করছেন কেন? কারণ কোভিড পরিস্থিতি। অতিমারির জন্যই লকডাউন। অনেক কিছুই তছনছ হয়ে গিয়েছে কত মানুষের। সিনেমা, টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির বহু কলাকুশলী ও কর্মী আজ বিপন্ন। শুটিং বন্ধ। নাট্যমঞ্চে তালা। এই অবস্থায় শ্রীকান্ত বাজারে মাছ বিক্রি করতে শুরু করেছেন। তাঁর কথায়, “শিল্প যেমন মনের খিদে মেটায়, তেমনি আমার পেটের খিদেও মেটায়। এখন রোজগার বন্ধ। তাই মাছ বিক্রি করে পেটের খিদে মেটাতে হচ্ছে। সৎ কাজ। তাই লজ্জা নেই, আফসোস নেই। তাছাড়া আমি তো একা নই। কত মানুষ অসহায়। লড়ছে। আমিও লড়ছি।”
মিঠুন চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী, আবীর চট্টোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়দের মতো খ্যাতনামা অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করা শ্রীকান্ত আজ অনেকের কাছেই উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র ফেসবুকে লিখেছেন, “কোনও কাজ ছোট নয় ঠিকই, তবু প্রশ্ন থেকেই যায়। পরিশ্রম করে নিজের সংসার চালাচ্ছেন এই শিল্পী। আপনাকে শ্রদ্ধা জানাই।”
সংসারে কারা আছেন? শ্রীকান্ত জানান, তিনি অবিবাহিত। দাদা, বৌদি তাঁকে এই লড়াইয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন। শ্রীকান্ত উল্লেখ করেন, তাঁর নাট্যগুরু দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। যিনি বলেছিলেন, অভিনয়কে বাঁচিয়ে রাখতে জীবনে যে পরিস্থিতিই আসুক, তার মোকাবিলা করতে হবে। অভিনয়ের প্রতি এতটাই ভালবাসা প্রয়োজন। অভিনয়কে বাঁচাতেই এই লড়াই। শ্রীকান্ত বললেন, “আবার সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। আবার চরিত্র আসবে। আবার শুরু হবে মঞ্চ ও ক্যামেরার সামনে অভিনয়।” স্বপ্ন ও আত্মপ্রত্যয়ে জ্বলজ্বল করছে শ্রীকান্ত মান্নার দুই চোখ।