মিঠুন চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।
১৯৭৬ সালে অভিনয় জগতে তাঁর হাতেখড়ি। পরিচালক মৃণাল সেনের ‘মৃগয়া’ ছবির মাধ্যমে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর যাত্রা শুরু। সেই যাত্রায় অনেক ওঠাপড়া এসেছে। কিন্তু চাকা অনবরত ঘুরেই চলেছে। ৪৮ বছর ধরে অনুরাগীদের বিনোদন জুগিয়ে চলেছেন নায়ক। পেয়েছেন বহু স্বীকৃতি। এ বার পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হলেন মিঠুন। সম্মান পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই খুবই খুশি তিনি। বললেন, “এই পুরস্কার পেয়ে আমি গর্বিত, আনন্দিত। সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি জীবনে কখনও নিজের জন্য কারও কাছ থেকে কিছু চাইনি। কিছু না চেয়ে পাওয়ার যে আনন্দ সেটাই উপলব্ধি করছি এখন।’’ কিছু দিন আগেই দীর্ঘ দিন বিদেশ ভ্রমণ সেরে দেশে ফিরেছেন। এ বার কলকাতায় আসছেন। মিঠুনের এক ঘনিষ্ঠ জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই তিনি কলকাতায় চলে আসবেন। তবে এর সঙ্গে পদ্ম-সম্মানের কোনও যোগ নেই। রাজ চক্রবর্তীর পরবর্তী ছবিতে অভিনয়ের জন্যই তাঁর কলকাতা সফর।
বৃহস্পতিবার পদ্মসম্মান প্রাপকদের তালিকা প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ১৩২ জনকে পদ্ম সম্মান দেওয়া হয়েছে। মিঠুন ছাড়াও পদ্মভূষণ পেয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী ঊষা উত্থুপ। পদ্মবিভূষণ পেয়েছেন বেঙ্কাইয়া নাইডু, দক্ষিণী অভিনেতা চিরঞ্জীবী এবং অন্যান্য ব্যক্তিত্ব। পদ্মশ্রীর তালিকায় রয়েছেন আট জন বাঙালি। রয়েছেন পুরুলিয়ার আদিবাসী পরিবেশকর্মী দুখু মাজি এবং ছৌ নাচের মুখোশশিল্পী নেপালচন্দ্র সূত্রধর। যদিও নেপাল ২০২৩ সালে প্রয়াত হয়েছেন। তিনি মরণোত্তর সম্মান পাবেন। এ ছাড়াও পদ্মশ্রী প্রাপকদের তালিকায় রয়েছেন কলকাতার মৃৎশিল্পী সনাতন রুদ্র পাল এবং বীরভূমের ভাদু শিল্পী রতন কাহার। বাংলা থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে পদ্মশ্রী পেয়েছেন একলব্য শর্মা এবং নারায়ণ চক্রবর্তী। শিল্পে পদ্মশ্রী প্রাপকের নাম তাকদিরা বেগম এবং গীতা রায় বর্মণ। বৃহস্পতিবার তালিকা প্রকাশ হলেও শুক্রবার একটি ভিডিয়োবার্তা পাঠিয়েছেন মিঠুন। সেখানে সম্মান পাওয়া নিয়ে এটাও বলেছেন যে, ‘‘এক অন্য ধরনের অনুভূতি এটা। এই সম্মান আমার সব শুভাকাঙ্ক্ষী এবং অনুরাগীদের উদ্দেশে উৎসর্গ করলাম। যাঁরা আমায় নিঃস্বার্থ ভালবাসা দিয়েছেন তাঁদের জন্যও এই সম্মান উৎসর্গ করলাম। অনেক ধন্যবাদ আমায় এমন ভালবাসা এবং সম্মান দেওয়ার জন্য।”
প্রসঙ্গত, বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি বেঙ্কাইয়ার মতো দীর্ঘ দিন না হলেও মিঠুনও এখন গেরুয়া নেতা। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে বিজেপির সভায় গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মিঠুন। রাজ্যসভায় তৃণমূলের টিকিটে গেলেও পরে দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। দীর্ঘ দিন রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগই ছিল না। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে ২০২১ সালের ৭ মার্চ বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। এর পরে গোটা রাজ্যে প্রচারেও অংশ নেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মিঠুনকে বিজেপি সে ভাবে প্রচারে কাজে না লাগালেও ভোটের আগে আগে একাধিক জেলায় সাংগঠনিক বৈঠকে গিয়েছিলেন তিনি। এই মূহুর্তে রাজ্য বিজেপির কোর কমিটিরও সদস্য মিঠুন। একই সঙ্গে রয়েছেন সর্বভারতীয় কার্যকারিণী সমিতিতে। তবে কি গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েই মিঠুন পদ্ম-সম্মানের তালিকায় জায়গা পেয়ে গেলেন? এমন প্রশ্নও উঠেছ। মিঠুন অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন এই সম্মান তিনি না চাইতেই পেয়েছেন। তাতেই তাঁর বেশি আনন্দ।