বাদশার গাওয়া ‘লাল গেন্দা ফুল’ নামে একটি গানের পাঞ্চলাইন ছিল রতনের এই ‘বড়লোকের বিটি লো’ গানটির প্রথম পঙ্ক্তি। —ফাইল চিত্র।
এত গান লিখেও সংসার চলছে না! এক সময় আক্ষেপ করে বলেছিলেন রতন কাহার। এ বার সেই প্রথিতযশা লোকগান শিল্পী পেতে চলেছেন পদ্মশ্রী। কেন্দ্রীয় সরকারের এই ঘোষণার পরে রতন বলেন, ‘‘বহু দিন পর এত খুশি হলাম। অনেক কষ্ট করে গানের জগতে বেঁচেছি। এই বার্ধক্যকালে তার সম্মান পেলাম।’’
রতন বীরভূমের সিউড়ির বাসিন্দা। যৌবনে ভাদু গান গেয়ে তাঁর গায়ক-জীবন শুরু। পরে নিজে গান বাঁধা শুরু করেন। জেলায় জেলায় ঘুরে ঘুরে গান শোনানোই তাঁর অভ্যাস। রতন গেয়েছেন প্রসার ভারতীতেও। কিন্তু সেখানে নিয়মিত সুযোগ পাননি। ‘বড়লোকের বিটি লো, লম্বা লম্বা চুল’ গানটি রতনের। ১৯৭২ সালে ওই গানটি লিখেছিলেন তিনি। গানটি প্রথম গেয়েছিলেন স্বপ্না চৌধুরী। সম্প্রতি গানটি নিয়ে বিতর্কও হয়। বলিউডের জনপ্রিয় র্যাপার বাদশার গাওয়া ‘লাল গেন্দা ফুল’ নামে একটি গানের পাঞ্চলাইন ছিল রতনের এই ‘বড়লোকের বিটি লো’ গানটির প্রথম পঙ্ক্তি। রতনের গানের ওই ব্যবহার নিয়ে অনেকেই আপত্তি জানিয়েছিলেন। এর পরেই সমাজমাধ্যমে রতনের উদ্দেশে বাদশা বলেছিলেন, ‘‘আমি জানি, উনি এক জন মহান শিল্পী। শুনেছি ওঁর অর্থনৈতিক অবস্থাও ভাল নয়। আমি ওঁকে সম্মান দিয়ে সাহায্য করতে চাই।’’ পরে শোনা যায়, অতিমারিকালে দেশ জুড়ে লকডাউনের সময় রতনকে পাঁচ লক্ষ টাকাও দিয়েছিলেন।
সিউড়িবাসীরা জানাচ্ছে, বয়স বাড়লেও স্বভাব যায়নি রতনের। আজও লাল মাটিতে হেঁটে বেড়ান পাগল সুরসাধক। নিজের গান বিখ্যাত হলেও তাঁর আর্থিক অবস্থা বদলায়নি। সম্মান যে পাননি, তা নয়। ছোট-বড় মিলিয়ে বাড়িতে অনেক পুরস্কারই রয়েছে। পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র, তথ্য সংস্কৃতি বিভাগ থেকে দেওয়া বিভিন্ন পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে রয়েছে। এ বার পাচ্ছেন পদ্মশ্রী। রতন বলেন, ‘‘অনেক অভাব-অনটনের মধ্যে গান গেয়েছি আমি। ভারত সরকার যে আমায় এই সম্মান দিল, আমি খুব খুশি হয়েছি।’’