বুধবার শহরে মিছিলে মিঠুন চক্রবর্তী। ছবি: পিটিআই।
পুজোয় মুক্তি পাচ্ছে তাঁর ছবি ‘শাস্ত্রী’। কিন্তু, তার আগেই শহরে এলেন মিঠুন চক্রবর্তী। নতুন বাংলা ছবির শুটিংয়ে আপাতত ব্যস্ত তিনি। পথিকৃৎ বসু পরিচালিত ‘শ্রীমান ভার্সেস শ্রীমতী’ ছবিতে একজন বর্ষীয়ান বিচারপতির চরিত্রে অভিনয় করছেন মিঠুন। শুটিং চলছে পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলের একটি হস্টেলে।
একতলার বড় ঘরে আদালতের সেট তৈরি হয়েছে। শটের জন্য মেকআপ ভ্যান থেকে নামতেই দেখা গেল, কালো লম্বা চুল, এক গাল কাঁচা-পাকা দাড়ি-সহ মিঠুনকে। পরনে তাঁর বিচারপতির কালো গাউন। তারই মধ্যে উঁকি দিচ্ছে কাঁধ থেকে ঝোলানো স্লিং, ডান হাতের কব্জি পর্যন্ত নীল-সাদা প্লাস্টার। দুই নিরাপত্তারক্ষী দু’দিক থেকে সন্তপর্ণে হাত ধরে রেখেছেন। ধীরে ধীরে ফ্লোরে প্রবেশ করলেন মিঠুন। স্লিং খুলে নেওয়া হল। চোখে মুখে যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট অভিনেতার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সম্প্রতি ডান হাতের হাড় ভেঙেছে অভিনেতার। তাই বাড়তি সাবধানতা। কিন্তু ক্যামেরা রোল করতেই মুখের অভিব্যক্তি বদলে গেল মিঠুনের। কাহিনি অনুযায়ী মিঠুনের সামনে তখন বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং মধুমিতা সরকার। কয়েকবার দৃশ্যগ্রহণ করা হয়েছে। মনিটরের পাশে বসে পথিকৃৎ বললেন, ‘‘কাজের প্রতি এই পরিমাণ নিষ্ঠা, না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এই অবস্থাতেও তিনি যে ভাবে শট দিচ্ছেন, আমি মিঠুনদার কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ।’’
ইউনিটের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বুধবার সকাল থেকে টানা শুটিং করেছেন মিঠুন। বিকালে এক ঘণ্টার জন্য বিরতি নিয়েছিলেন। তবে, বিশ্রাম করেননি। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে উত্তর কলকাতার হেদুয়া থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত এক প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ফ্লোরে ফিরে আবার শুটিং।
মিঠুনের পরিশ্রম এবং একাগ্রতা দেখে আপ্লুত সেটের তরুণ শিল্পীরা। অভিনেতা ফ্লোরে এলেই তাঁরা উঠে দাঁড়াচ্ছেন। হাসিমুখে সৌজন্য বিনিময় করছেন মিঠুন। তবে ছবি তোলার অনুমতি নেই। মুচকি হেসেই মিঠুনের উত্তর, ‘‘ধুর, এই অবস্থায় কেউ ছবি তোলে নাকি!’’ পরিচালক জানালেন, চিত্রনাট্যে প্রথমে মিঠুন অভিনীত চরিত্রটির কোনও চোটের প্রসঙ্গ ছিল না। কিন্তু পরে অভিনেতার পরিস্থিতি বিচার করে সেটা চিত্রনাট্যে যুক্ত করা হয়েছে।
সন্ধ্যায় বিচারক নয়, সাধারণ পোশাকেই আদালতের কিছু দৃশ্যের শট দিলেন মিঠুন। কাঠগড়াতেই শটের ফাঁকে তাঁর বসার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফ্লোরের সকলেই যখন অভিনেতার স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে চিন্তিত, মিঠুন তখন সেই সব ভাবনাকে পাত্তাই দিলেন না। একের পর এক শট দিয়ে গেলেন। তারই ফাঁকে অঞ্জনা বসুর (ছবিতে মিঠুনের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করছেন) সঙ্গে একপ্রস্ত গল্পও সারলেন। ফ্লোরের বাইরে বৃষ্টির তেজ কিছুটা কমেছে। একটু বিশ্রাম নিতে চাইলেন অভিনেতা। ফ্লোর ছাড়ার পর তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল, চোট সামলে শুটিং এবং মিছিল, কী ভাবে সামলাচ্ছেন? পরিচিত হাসিমুখেই সংক্ষিপ্ত উত্তর এল, ‘‘ব্যথা কমানোর ওষুধ চলছে। কিন্তু কাজ তো করতেই হবে। তা ছাড়া আমার বসে থাকতে ভাল লাগে না।’’ মেকআপ ভ্যানের সিঁড়ি দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন অভিনেতা।
উল্লেখ্য, চলতি বছরেই কলকাতায় ‘শাস্ত্রী’ ছবির শুটিং করতে গিয়ে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন মিঠুন। দিন কয়েক ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। সুস্থ হয়েই ফিরে গিয়েছিলেন শুটিং ফ্লোরে। এ বারেও একই ছবি। চোট সামলেই একের পর এক কাজ করে চলেছেন অভিনেতা। পরিচালকের আশা, পুজোর আগেই ছবির শুটিং শেষ করতে পারবেন তিনি।