অভিনেতা-পরিচলক তথাগত মুখোপাধ্যায়
ভুয়ো টিকা-কাণ্ডের পরে আর পাঁচ জনের মতো অভিনেতা-পরিচলক তথাগত মুখোপাধ্যায়ও অত্যন্ত ভয় পেয়েছেন। তবে তাঁর ধারণা, এটা খুবই ব্যতিক্রমী এবং বিচ্ছিন্ন ঘটনা। গোটা রাজ্যে এটা চলছে বলে মনে হয় না তাঁর। কারণ, তা হলে অন্যান্য শিবিরেও এটাই হতো। সে রকম কোনও খবর এখনও পাওয়া যায়নি বলে ধরে নেওয়া যেতেই পারে এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আনন্দবাজার অনলাইনকে তথাগত বললেন, ‘‘তিন দিন পরেও টিকা নেওয়ার শংসাপত্র দিতে পারেনি বলেই বিষয়টা মিমির নজর কে়ড়েছে। এই ঘটনা অন্য কোথাও ঘটেছে বলে শুনি না। তার মানেই বোঝা যাচ্ছে, কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অনুমোদন ছিল না কসবার শিবিরের।’’
তথাগত উদাহরণ দিলেন নিজের টিকাকরণের। তাঁরা স্টার জলসা চ্যানেলের মাধ্যমে টিকা নিয়েছিলেন। তার আগে জেনে নিয়েছিলেন, কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগসূত্র ছিল সেই শিবিরের। তাই সন্দেহের অবকাশ ছিল না।
কসবার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তথাগত জানালেন, ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করেছে এই ঘটনা। করোনার থেকে নিরাপত্তা পাওয়ার জন্য মানুষ টিকা নিচ্ছেন। সেখানেও যদি তাঁরা ভেজালের মুখোমুখি হন, তা হলে মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? প্রশ্ন তুললেন অভিনেতা-পরিচালক। অভিনেত্রী-সাংসদ মিমি চক্রবর্তীর ভুয়ো টিকা নেওয়ার পরে তথাগতের ভয় করছে সেই সমস্ত মানুষের জন্যেও, যাঁরাও সেই টিকা নিয়েছেন।
সারমেয়দের যত্ন, দেখাশোনা নিয়ে অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত এবং তাঁর স্বামী তথাগত একসঙ্গে কাজ করেছেন মিমির সঙ্গে। সেই আলাপ-পরিচয়ের কথা বাদ রেখেই তথাগত বললেন, ‘‘মিমি শুধু এক জন অভিনেত্রী নন, সাংসদও বটে। অভিযুক্তরা যখন তাঁকে ভুয়ো টিকা দিতে ভয় পেলেন না, তার মানে তাঁদের পিছনে ক্ষমতাবান কেউ না কেউ রয়েছেন। যাঁর নাম এখনও উঠে আসেনি এই তদন্তে।’’ কলকাতা শহরে কসবার মতো জায়গায় এই টিকা শিবির চালানো সহজ কাজ বলে মনে করছেন না তথাগত। এই ঘটনায় রাজনৈতিক গন্ধ পাচ্ছেন অভিনেতা। যদিও তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক দল তো মানুষদের নিয়েই তৈরি। কোনও বস্তু নয়। এ বারে ভেবে দেখতে হবে, হাতের পাঁচটা আঙুল যেমন সমান নয়, তেমনই একটি দলের এক জন রাজনৈতিক নেতা দুষ্কৃতীর সঙ্গে জড়িত হতেই পারেন। তা বলে আমি গোটা দলকে দোষ দেব না। বাকিরা সে বিষয়ে জানেনই না হয়তো।’’ তবে আরও একটি সম্ভাবনা তাঁর মাথায় ঘুরছে। তাঁর মনে প্রশ্ন জেগেছে, অভিযুক্তও কি প্রতারণার শিকার? তথাগত বললেন, ‘‘নিজের পরিবার এবং প্রেমিকাকেও ভুয়ো টিকা দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন শুনেছি। তা হলে তিনিও আসল বিষয়টা জানতেন না? কেবল টাকার লোভে বোকা বনে যাননি তো? হয়তো তিনি ভেবেছিলেন সেই টিকা আদপে ভুয়ো নয়।’’
তবে আপাতত তিনি বেশি চিন্তিত সেই মানুষদের নিয়ে, যাঁরা সেই ভুয়ো টিকা নিয়েছেন। রাজ্য সরকারের তরফে সেই সমস্ত মানুষের স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা জানার পরেই তথাগত খানিক স্বস্তি পেয়েছেন। মিমি-সহ সেই সব মানুষের শারীরিক সুস্থতা কামনা করছেন অভিনেতা-পরিচালক। তবে তথাগত আরও বললেন, ‘‘অনেক সময় শরীর নিয়ে চিন্তা করতে করতে শরীর খারাপ হয়ে যায়। বিষয়টা মানসিক। মিমির ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে। মনের উপর দিয়ে অনেকটা চাপ গিয়েছে। আশা করি, তিনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন।’’