রাজ্য সরকারের সঙ্গে সিবিআই জড়িত? প্রশ্নে বাদশা মৈত্র। ছবি: সংগৃহীত।
পাঁচ মাস পরে আরজি কর-কাণ্ডের রায় বেরোল। এই রায়ই কি আশা করেছিলাম? একেবারে ছিল না বললে ভুল হবে। তার কারণ, আমরা সিবিআইয়ের কাছে যে তদন্ত আশা করেছিলাম, যে যে প্রশ্নের উত্তর আশা করেছিলাম, সেই সব উত্তর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দিতে পারেনি। শীর্ষ আদালতের মাননীয় বিচারপতি পুলিশি তদন্ত দেখে বললেন, তিনি এই ধরনের ঘটনা গোটা চাকরি জীবনে দেখেননি! কী ছিল সেই তদন্তে? সিবিআই কি আমাদের সামনে সেটা প্রকাশ করেছে? এটাই আমার প্রথম প্রশ্ন।
আরও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। কারা অন্যায় ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করল? কেন এফআইআর নিতে এত দেরি হল? কেন নির্যাতিতাকে ওই অবস্থায় দেখার পরেও ‘অচৈতন্য’ বলে রিপোর্ট করা হল? কেনই বা অকুস্থলে এত লোক ঢুকে পড়েছিল? কেন সাততাড়াতাড়ি তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হল? কেন ময়নাতদন্তের সময় দেওয়া হল না? এই সমস্ত উত্তর যদি সিবিআই দিতে পারত, তা হলে বুঝতাম, প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের প্রকৃত সত্য প্রকাশ্যে আনার সদিচ্ছা ছিল। তাদের কাছে কোনও উত্তর নেই, বদলে ‘সাপ্লিমেন্টরি চার্জশিট’-এর কথা বলা হয়েছে। আমরা বিগত কয়েক বছরে এই ধরনের ‘সাপ্লিমেন্টরি চার্জশিট’ দেখেছি। তার কী পরিণতি হয় সেটাও জানা আছে।
এই রকম একটা ঘটনায় দু’জন জামিন পেয়ে গেলেন! তা হলে পাঁচ মাস ধরে কী তদন্ত হল?
বিচারককে এ ক্ষেত্রে কাঠগড়ায় তুলতে পারি না। কারণ, তদন্তে নামার বা নিজের মতো করে কোনও রায়দানের এক্তিয়ার তাঁর নেই। তিনি যা তথ্যপ্রমাণ পান, তার উপর ভিত্তি করে রায় দেন। সেই জন্যই এক বার সিবিআই-এর তরফের আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় বিচারক এ-ও বলেছিলেন, “তা হলে কি আমি দোষীকে জামিন দিয়ে দেব?” এই কারণেই সিবিআই-এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শহরবাসী। আস্থা কমছে বিচারব্যবস্থার উপর থেকে। যে ভাবে রাজ্য সরকার একটা স্তরের মানুষদের আড়াল করতে চেয়েছে, সিবিআই যেন সেই প্রহসনের অংশ হয়ে পড়েছে। এমনই আশঙ্কা করছেন বেশির ভাগ মানুষ। দেশের গোয়েন্দা সংস্থার উপর থেকে আস্থা উঠে যাবে— এটা একেবারেই কাম্য নয়। এ বার কাজ দিয়ে নিজেদের সততা প্রমাণ করতে হবে সংস্থাকে।