শিল্পীরা মিলে লাগাতার বিক্ষোভ দেখান সমাজমাধ্যমে। তার পরই সুর নরম করলেন শাসকদলের প্রতিনিধিরা। —ফাইল চিত্র।
ভোটকেন্দ্রিক গণতন্ত্রে শাহরুখ খান বা অমিতাভ বচ্চন না হলে অভিনেতাদের পাত্তা দেওয়া হবে না? সম্প্রতি নাট্যকর্মী তথা অভিনেতা অমিত সাহাকে প্রহারের ঘটনায় শাসকদলকে ধিক্কার জানিয়েছিলেন অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়ে এক হয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক থেকে শুরু করে পর্দা, মঞ্চের অভিনেতা এবং নাট্যব্যক্তিত্বরা। শিল্পীরা মিলে লাগাতার বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন সমাজমাধ্যমে। তার পরই সুর নরম করলেন শাসকদলের প্রতিনিধিরা। অমিত আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন, তাঁকে বৈঠকে ডেকে মিটমাট করে নেওয়ার কথাও বলেছেন স্থানীয় নেতারা।
অভিযুক্ত অলোক দাসের দাবি, “আমি কাউকে মারিনি। অমিতবাবুর সঙ্গে দেখা হলে ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেব।” এলাকার বিধায়ক পরেশ পাল অবশ্য জানান, তিনি অভিযুক্তকে চেনেনই না। অমিতের পক্ষ নিয়ে বলেন, “ওঁরা তো দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় নাটক করছেন। আমরা সেখানে গিয়েছি। আমি নাট্যকর্মীদের পক্ষে। কে অলোক দাস? তার এত দম যে, নাটক বন্ধ করে দেবে! ওখানেই আবার যাতে নাটক হয়, তার ব্যবস্থা করব আমি।” এই পরিস্থিতিতে অমিত মনে করছেন, সবটাই চাপের মুখে পড়ে করতে বাধ্য হচ্ছে শাসকদল। তবে কোনও রাজনৈতিক অবস্থান থেকে নয়, একান্ত ভাবে শিল্পী হিসাবেই তিনি তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করবেন বলে জানান অভিনেতা।
গত ২৩ ডিসেম্বর বেলেঘাটার পার্টি অফিসে নাট্যোৎসব করার আবেদন জমা দিতে গিয়েছিলেন ‘বিদূষক নাট্যমণ্ডলী’র নাট্যপরিচালক অমিত এবং তাঁর দলের সহকর্মীরা। তখনই অমিতকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হয় বলে জানা যায়। সেই ঘটনার প্রতিবাদে ধিক্কার জানিয়েছিলেন প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য, তথাগত মুখোপাধ্যায়, দেবেশ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অনেকেই। তবে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল অভিনেতা তথা পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্যের ক্ষুরধার আক্রমণে। নাট্যকর্মীর গায়ে হাত তোলার কথা শুনেই ফুঁসে উঠেছেন তিনি। সমাজমাধ্যমে লেখেন, “আমি প্রতিবাদ করছি, আরও অনেকের সঙ্গে, এটা জেনেই যে, এই প্রতিবাদ ব্যর্থ হবে। যাঁর গায়ে হাত উঠেছে, তাঁর গায়ে আবার হাত উঠতে পারে শীঘ্রই, এবং যিনি হাত তুলেছেন, তিনি তাঁর সাহসে বলীয়ান হয়ে বাংলা মায়ের সুযোগ্য সন্তানের অনেকগুলো সার্টিফিকেট ঘরে বাঁধিয়ে রাখবেন।”
‘লুটেরা’, ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’, ‘ভটভটি’-সহ বহু ছবিতে চেনা মুখ অমিত। পাশাপাশি নিজের নাট্যদলে মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছেন তিনি। গত ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর অমিত একটি নাট্যমেলার আয়োজন করেছিলেন বেলেঘাটার একটি মাঠে। এলাকার পার্টি অফিসে আবেদনপত্র জমা দিতে গেলে স্থানীয় নেতা অলোক দাস তাঁকে মারধর করে নাট্যোৎসব বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনা জানাজানি হলে সমাজমাধ্যমে শোরগোল পড়ে। ২৮ ডিসেম্বর বেলেঘাটার রাসমেলা মাঠে আয়োজিত প্রতিবাদ সভাতেও গিয়েছিলেন অভিনয় জগতের অনেকেই। সেই সঙ্গে সমাজমাধ্যমে শিল্পীদের প্রতিবাদ এখনও চলছে।